ইচ্ছে ডানা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আসমা আক্তার

এক

একটা চাকরি পেলে বাবা-মায়ের সাহায্য করতে পারবো। এই দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে লেখাপড়া শেষ করলো আরু।বাবা সরকারি অফিসের কেরানি ছিলেন।সৎ লোক। বেতনই সম্বল ছিল।আর এখন পেনশনের কিছু টাকায় কোন রকমে ৫ সদস্যের পরিবার চলে। বেশ কিছু দরখাস্ত করলো।কিছু সাক্ষাৎকার ও দিচ্ছে চাকরির বিষয়ে খুব আশাবাদী সে।কিন্তুু বাবা চান আরুর বিয়ে দিতে।ছেলে পক্ষ আসে পছন্দকরে। কিন্তু বিয়ে হয়না।কারন টা আরু।
তার কথা বাবার বাড়ি থেকে সমাজ প্রচলিত নিয়মে কিছুই নেবেনা সে।আরু প্রথাবিরোধী হয়ে ভাঙ্গতে চায় এই যৌতুকের জটিল আবর্ত।লম্বা, চিকন, শ্যামবর্না আরুকে সুন্দর মুখশ্রীর জন্য সবাই পছন্দ করলেও ঠোটকাটা,প্রতিবাদী বউকে কয়জন ই বা ঘরে নিতে চায়?

এমন সময় একটা সমন্ধ এলো।ছেলের বাবা স্বল্পভাষী, মায়ের কথাই শেষ কথা। তিনি রাজি হলেন কিছু ছাড়াই আরুকে বৌমা করে ঘরে নিতে।সামাজিক ভাবেই আরুর বিয়ে হলো স্বল্প আনুষ্টানিকতায়।বাবার দেয়া হালকা কিছু গয়না স্বামীর বাড়িরও তদ্রূপ। আসবাব পত্র কিছুই নিলনা আরু। স্বামী ঢাকায় একটা কম্পানির ভালো মাইনের কর্মী।

দিন পনেরো স্বপ্নের মতো চলে গেলো। দাওয়াত রক্ষা আর বেড়ানো নিয়ে।আরুর বড় জা স্বল্পশিক্ষিত বড়লোক বাড়ির মেয়ে। তাইতো শাশুড়িকে মানেনি কোনদিনই। একবাড়িতেই আলাদা রান্নাঘর।
১৫ দিন পরে আরুর স্বামী চলে গেল কর্মস্হলে। আরুও ঘরের কাজে মন দিল।পড়া নিয়ে মগ্ন থাকায়।তার কর্মদক্ষতা ছিল কম।শাশুড়ির তত্ত্বাবধানে কাজ শিখতো আরু।কোন কিছুতে নিপুনতা আসতে সময় লাগে।তবুও এখন একাই রান্নাকরে আরু।এমনি একদিন রান্না করতে যাওয়ার আগে শাশুড়ি বললেন,আজ তরকারি ভালো না হলে মাথায় ঢালবো তোমার।
অবাক চোখে তাকালো আরু!!! এ কেমন কথা? শাশুড়ি এত ভালোবাসেন মা মা করেন তার এ কী রূপ? ১ মাসের মধ্যেই এত বদল।কারনটা বুঝতে পারলো কয়েকদিন পরে।

আরুর শ্বশুরবাড়ি পৌরসভার ভিতরে আধা শহর আধা গ্রামে।বিদুৎ ও আছে আবার গ্রামীন জীবনের অনুসঙ্গ গোয়াল ঘরও আছো।আবার মহিলাদের পাড়া বেড়ানোর প্রচলন ও আছে।আরুর শ্বশুরবাড়ি কয়েকটি আধাপাকা টিনের ঘর।তখন ঘরে ঘরে মোবাইল ফোনের প্রচলন হয়েছে,কিন্তুু হাতে হাতে নয়।আরুর স্বামীর বাটন ফোন আছে। বাড়ির ল্যান্ড ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতো বাড়ির সবাই।সন্ধ্যায় স্বামীর সাথে গল্প করলো আরু।মনটা ভার, তবুও কিছুই জানালোনা স্বামীকে।

বারবারই মায়ের কথা মনে পড়লো।মা বলেছিলেন, শাশুড়ি হলেন আরেকটা মা।তার কোন কথায় উত্তর দিতে নেই মা।শ্রদ্ধা করবে সর্বদা।
কয়েকদিন পরে বিকালে পাড়ার কিছু মহিলা এলো আরুর শাশুড়ির কাছে।কয়েক প্রস্হ পান ও পরচর্চার পর্ব চললো।হঠাৎ একজন প্রশ্ন করলো,
বু ছাওয়াল বিয়েতে কি কি পালে?

কিছুই নারে বুন।

কি কও , তুমি আগের কালের এইট পাশ এমনে ঠকালো?

বৌমা বলছিল কিছুই আনবেনা।আমরাও রাজি হলাম।তবে বৌমার বাপটা এমন চামার সত্যি সত্যি খালি খাচায় পাঠাবে বুঝিনি।

হয় তোমার বড় বউ তো কত কিছু আনছিল।

আরেক প্রতিবেশিনী বলে উঠলো, আমার বেটার বউ দেখতে শুনতে ভালো আর কত কিছু আনছে।

হয় যার জন্য কালো মেয়ে আনলাম।

ঘরে বসে সবটাই শুনলো আরু।তার মাথা ঘুরলো পায়ের নিচের মাটি টলে উঠলো।মহিমা ম্যাডামেরর কথা গুলো মনে পড়তে লাগলো

আরু কাউকে কখনো অসম্মান করবে না।কিন্তুু নিজের অসম্মান ও সহ্যকরবে।মনে রেখ মানুষ হিসাবে তোমার আত্মসম্মান আছে।তাকে নষ্ট হতে দেবেনা কোন কালেই।

সবাই চলে গেলে ঘর থেকে বের হলো আরু। শান্তকণ্ঠে শাশুড়িকে বলল
মা, আপনারা তো সব জেনে শুনেই আমাকে বউ করে এনেছেন। তবে অতগুলো মানুষের সামনে আমার বাবাকে চামার বলে অপমান করার কী দরকার ছিল?

কী তুমি আমার কথা আড়ি পেতে শোন। এতবড় সাহস তোমার?
আড়ি পাতিনি মা।এমনিতেই শোনা যাচ্ছিল।
আবার মুখে মুখে কথা? এই বাড়ির কেউ আমার সাথে তর্ক করে না।কালই তোমার বাপকে শুনবো কেমন মেয়ে মানু্ষ করছে।আরুর শ্বশুর চুপকরতে বলায় আরু আর এগুলো না।শাশুড়ি একা একা বকে থামলো এক সময়

সেদিন সন্ধ্যায় আরুর ননদ বললো, ভাবি ভাইয়া তোমার সাথে কথা বলবে লাইনে আছে। অবাক হলো আরু এমনটা তো এই ১৫ দিনে হয়নি।

তিন

ফোনের রিসিভার কানে ধরে ওপারের কর্কশ কণ্ঠে অবাক আরু।
তুমি মায়ের সাথে তর্ক করেছো?
আগে পুরো বিষয়টা শোন।
কোন শোনাশুনি নাই।মা যা বলবে সেটাই শেষ কথা।
সব ঠিক আছে তবে সামাজিক,ও ধর্মীয় মতে স্ত্রীর যে কোন সমস্যা স্বামীর শোনা উচিত।

সামনের মাসে বাড়ি এসে সব শুনবো।তুমি মায়ের সাথে তর্ক করবেনা।

ফোন রেখে দিল আলম।কষ্ট পেল আরু।সব পুরুষের জীবনে মায়ের সম্মান থাকা
উচিত,তবে স্ত্রীর ও অসম্মান হতে দেয়া ঠিকনা।সুন্দরভাবে দুইটার ভারসাম্য রক্ষা করা উচিত।
বিয়ের পর পরই স্বামীকে এত ভালোবেসে ফেলেছে যে তার উপর রাগ করতে পারেনা আরু।মনে মনে কষ্টই পায়, রাগ হয়না।স্বামীই তার জীবনে প্রথম প্রেম, প্রথম পুরুষ।

শাশুড়ি বকা দেন কাজ শিখানোর জন্য। তাকে কোন উত্তর দেয় না আরু।মুরব্বিরা তো ভালোর জন্যই কাজ শেখান।এখনো দ্রুত রান্না করতে পারেনা সে।একদিন শাশুড়ি মা বলেন,আজ রান্না করতে যেয়ে কাল ওঠো। বলি আর কত দেরি।
মা হাতটা পুড়ে গেছে, যদি তুলিকে একটু পাঠাতেন ও চুলার পাড়ে বসলে হাতে মলম দিতাম।
তুলি আরুর ননদ ইন্টার পরিক্ষায় পর বসে আছে।

ও ছোটমানুষ রান্নার কী জানে? আর মেয়েমানুষের এমন পোড়ে, কাটে ওসব নিয়ে মাথা ঘামালে চলে? তোমার শ্বশুর দোকান থেকে এসেছে।
শহরে আরুর শ্বশুরের কয়েকটি দোকান আছে। কর্মচারী চালায় তিনি নিজে তদারক করেন।
আহা, আলমের মা দেখ কিভাবে পুড়লো বৌমাও তো ছোটমানুষ।
রাখ তো ওই বয়সে আমি ২ বাচ্চার মা হয়েছিলাম।
আরে তোমাদের যুগের মেয়ের ছোটবেলায় কাজ শিখতো এরা পড়ালেখা করে।
আমি ও আগের কালের এইট পাশ।

আরু কলস থেকে হাতে পানি দেয় প্রচন্ড জ্বালায় ছটফট করে।আম গাছে বসা হলুদ পাখিটির দিকে নজর পড়ে আরুর ভাবে, আমি যদি পাখি হতে পারতাম।মুক্ত বাতাসে উড়ে জ্বালা জুড়াতাম।
গল্পের আরুদের ডানা থাকে ইচ্ছে হলেই আকাশে উড়তে পারে।বাস্তবের আরুদের ডানাটা আগে ছাটা হয়।তারা পুড়ে যায়, কেটে যায়।সেই ক্ষতয় আবার নুন,মরিচের ছিটে লাগে।
সেভাবেই কোন মতে রান্না সারে আরু।
এভাবে দিন যায়।পরের মাসে আলম বাড়িতে এলে শুরু হয় নতুন ঘটনা।

চার

জামাতার আগমন উপলক্ষে আরুর মা আসেন বেয়াই বাড়িতে।শখ করে জামাতার জন্য মাছ,মাংস,ফল,পিঠা,মিষ্টি নিয়ে আসেন।নীরিহ বেচারাকে আরুর শাশুড়ি আর প্রতিবেশীরা ইশারা ইঙ্গিতে মেয়েকে কিছু না দেয়ার কথা বুঝাতে ভোলেনা।চেপে যান তিনি।যাতে মেয়ে কিছুই জানতে না পারে। তাহলে মেয়ে কি না কি বলে বসে।
আরু শাশুড়ির কাছে আবদার করে, মা আমরা বেড়িয়ে আসি ২/১ দিন।
আলমের কাছে শুনে দেখি।
রাতে স্বামীর কাছে বলে আরু, চলো আমরা মায়ের সাথে বেড়িয়ে আসি।
আমার এখানে কিছু কাজ আছে, সময় নেই।

তাহলে আমি যাই,তুমি পরদিন নিয়ে এসো।

মা যা বলে।
আরু সব বুঝতে পারে।২ মা ছেলের না যেতে দেয়ার প্লান।কাচের গ্লাসে গরম পানি ঢাললে পুরো না ফাটলেও কিছু ক্ষেত্রে চিড় ধরে।আরুর মনেও একটা চিড় ধরলো স্বামীর প্রতি ভালোবাসায়।

পরদিন আরুর মা যাওয়ার আগে বিয়ানকে অনুরোধ করলেন মেয়েকে সাথে নিতে।খুব খারাপ ভাবে উত্তর পেলেন।
মেয়েকে নিতে পারেন সব বাড়ির বউরা যেমন সব নিয়ে আসে তেমনি পাঠাবেন।
আমরা তো সব দিতেই চেয়েছিলাম।মেয়ের সব কথা মেনেই তো আপনারা বিয়েটা দিয়েছিলেন।
আরু হঠাৎ শেষ কথাটা শোনে,
মা তুমি চলে যাও আমি যাবোনা।যুগ যুগ ধরে মেয়ের বাবাদের শোষন করার যে প্রথা চলে আসছে। আমৃত্যু আমি তার বিপক্ষে থাকবো।

বেয়ান আপনার মেয়ে খুব মুখরা, খালি তর্ক করে।
আরুর মা চলে যায়।খুব কাঁদতে থাকে আরু।মাকে বলে তোমরা ফোন কেন। যাতে একটু কথা বলতে পারি।সারারাত একপাশে শুয়ে কাঁদে আরু।মায়ের জন্য যতটা কষ্ট হয় তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয় স্বামী আর শাশুড়ির আচরনে।
বুক ভরা ভালোবাসা আর একরাশ সোনালী স্বপ্ন নিয়ে মেয়েরা স্বামীর ঘরে আসে।কিছু ক্ষেত্রে সে স্বপ্ন ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায় অবহেলা আর আঘাতে মিশে যায় ঘৃনার নির্মম ধূলায়।
বেশির ভাগই নারীর পিতৃগৃহের সম্পদটুকু ছুঁতে চায় শ্বশুরবাড়ির সবাই।আর স্বামী সম্পদের সাথে শরীরটা ছুঁতে চায়।মনটা ছুঁয়ে দেখতে চায়না বেশির ভাগই।
মন ছোঁয়ার লোকই সমাজে বিরল।
৫ মাস পরে একটা সুখবর কিছুটা বদলে দিল আরুর জীবন।
আরুর চাকরি হলো ব্যাংকে। মোড়ামুড়ি শুরু করলেন আরুর শাশুড়ি।
বাপু তুমি সারাদিন চাকরি করবা।আমি বুড়োকালে হাঁটু ব্যাথা, মাজায় ব্যাথা নিয়ে কত কাজ করবো? রান্না ঘরের কাজ।
মা রান্না তো আমিই করি তাই করবো।আর ঘরের কাজের জন্য আমরা তো একটা লোক রাখতে পারি।
এই প্রথমবার আলম স্ত্রীর পাশে দাড়ালো তার পক্ষ হয়ে।শ্বশুর ও তাই বললেন। চাকরিতে যোগদান করলো আরু।বাবার বাড়ি হলে তার কর্মস্হলে আসতে কষ্ট হতো।এখানে বরং কাছে হলো।
সে এখন অনেক কর্ম নিপুনা।চাকরি আর ঘরের কাজ দারুন সামলায়। প্রথম বেতন পেয়ে ২ পরিবারের সবার জন্য কিছু উপহার কিনল।
এভাবে পুরো টাকাটা খরচ করে ফেললে? এমনটি আর করোনা বাপু।টাকা জমা করবে। আমার কাছে দেবে আমি আলমের একাউন্টে রেখে দেবো। তোমাদের ভবিষৎ আছে না।
ঠিকআছে মা।
সরল আরু আপত্তি করেনা।

মা আপনার ছেলের এ্যাকাউন্ট নম্বরটা আমাকে দেবেন।এ মাস থেকে আমিই টাকা জমা দিয়ে দেবো। কিন্তুু ২ মাস না যেতেই চাকরি ছেড়ে চলে আসে আরুর স্বামী।

পাঁচ

আরুর স্বামী বাড়িতে এসে কম্পানির মালিক ও ২/১ জন সহকর্মীর দোষ দিয়ে বললো চাকরি ছেড়ে এসেছে।তার জন্য এর চেয়ে ভালো চাকরি অপেক্ষায় আছে।
প্রকৃত ঘটনা হলো সে বদমেজাজি কথায় কথায় সহকর্মীর সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটায় মালিকপক্ষ তাকে অপমান করে তাড়িয়েছে।

সে খায় দায় আড্ডা দেয়,বিন্দাস জীবন কাটায়।মাস শেষের আগেই স্বামী, শাশুড়ি আরুকে বুঝালো,
মা আরু দোকান ভাড়া দিয়েতো এতবড় সংসার চালানো কষ্টকর।যতদিন আলম চাকরিতে না ঢুকছে। তুমি সংসারে সাহায্য করো। তোমার শ্বশুর বুড়ো মানুষ।তোমার দেবর ননদদের পড়ার খরচ।

আরু আমার চাকরি হলেই তোমার আর একটাকাও নেবোনা।তুমি যা ইচ্ছা করো জমিয়ে রেখো।
এদের নরম কথায় অবাক হয় আরু।বলে,আমি কিছু টাকা আমার আব্বাকে দিতে চাই প্রতি মাসে।

শাশুড়ি বলে, ঠিকআছে দিও।

সত্যই মানুষ বড় বিচিত্র যার কাছে প্রয়োজন তার কাছে গলার স্বর বদলে যায়।মোলায়েম মিহি সুর বের হয়।আবার দরকার শেষ হলে কর্কশ স্বরে বুকে ছুরি বিঁধাতেও দ্বিধা করেনা।সবই স্বার্থের জন্য।

আরু টাকা দিতে গেলে তার বাবা টাকা নেননা।বলেন মা আমাদের তো ঠিকভাবে চলে যায়। তোমার টাকা নেবো না। বছরে ২/১ বার মা ভাইবোনদের উপহার দিও।আমি তোমার সফলতায় খুশি।আর দরকার হলে চেয়ে নেবো।

ভালো মন্দে দিন কাটে চাকরি খোঁজার কোন লক্ষণ ই দেখা যায়না আলমের মাঝে।আরু তাড়া দেয় বলে চেষ্টা করছি।
একমাসে বেতন পেয়ে ২ টা সুতির শাড়ি কিনে ঘরে ফেরে আরু।
কী আনলে বৌমা?
মা খুব গরম লাগে ২ টা সুতির শাড়ি আনলাম।

ননদ এসে বলে ভাবি আমার জন্য কিছু আননি?

শাশুড়ি মুখভার করে বলেন, তোমার একটা ননদ ওর জন্য না এনে নিজের জন্যই আনলে?

মা ও তো ফেল করার পরে ঘরে বসে থাকে কোথাও তেমন যায়না।আর আত্মিয় বাড়ি যাওয়ার পোশাক তো আছে।২ মাস আগে তো ওর জন্য পোশাক কেনা হয়েছে।আমার যে রোদ,বৃষ্টি,ঝড়,জল উপেক্ষা করে প্রতিদিনই বের হতে হয়।
নাও বাপু তোমার মুখতো বন্ধুকের গুলি।

কিছু শ্বশুর বাড়ি এমন যে তাদের কলিজা কেটে রেধে খাওয়ালেও বলে লবন হয়নি।সন্ধ্যায় আলম বাসায় আসলে এটা নিয়ে আরেক তরফা কথা কাটাকাটি হবে জানে আরু।ছোটবেলা থেকে তার ঝগড়া তর্ক অপছন্দের। অন্যায়ের প্রতিবাদ সে করে। কিন্তুু সেটাই যে এখন নিত্য কর্ম হয়ে দাড়াবে কে জানতো।তবে এ বাড়িতে চুপকরে থাকা মানে এরা তাকে মাটিতে মিশিয়ে ফেলবে।
অথচ এমন টা চায়নি আরু।এটা তো তার সংসার সবাইকে ভালোবাসবে, তাদের থেকে ভালোবাসা পাবে।আন্তরিকতার কাছে বেতনের এ টাকা খরচ তো তুচ্ছ।

আরু সন্ধ্যায় বাইরের চুলার পাড়ে রান্নাকরতে বসে শোনে। মা,ছেলে,মেয়ে আলোচনা করছে। শব্দটুকু শোনে বিষয়টা বোঝেনা।

ছয়

পোশাকের বিষয়ে কোন কথা হয় না পরে।হয়তোবা আরু নগদ টাকার একটা ভালো উৎস তাই।

পরদিন শুক্রবারে সপ্তাহিক বাজার আসে। কাজের মেয়ের সাথে মাছ, মাংস কাটে ধোয় আরু। শাশুড়ি ওগুলো প্যাকেট করে ফ্রিজে রাখেন।প্রতি প্যাকেট মাছ রাখার সময়ে ছোট মাছের পিচ বা লেজটা আরু ও কাজের লোকের জন্য বরাদ্দকৃত থাকে। মহিলাটা সকালে আসে উঠান ঝাড়ু গোয়াল সাফকরা ঘরের কিছু কাজ করে সকালের খাবার নিয়ে চলে যায়।আজ মুখ খুললো আরু।

মা, এক সাইজের অনেকগুলো মাছ কাটলে আমরা তো বড় মাছের টুকরা গুলো একসাথে রাখতে পারি।ছোটগুলো অন্যবেলায় খাওয়া যায়।যারা বড় মাছের পিচ পায় তারা প্রতি বেলায়ই পায়।অন্যরা ছোটগুলো পায়।

ছিঃছিঃ এত খাওয়ার লোভ।২ দিন ছোট মাছ পাতে পড়েছে তাতেই এমন করছো?

খাওয়ার লোভ নয় মাছ আমি খুব কম খাই, পছন্দের ও না আপনি জানেন।এটা একটা কু প্রথা ভাঙ্গার প্রচেষ্টা। নারী বা পুরুষ সবার শরীরে পযাপ্ত পুষ্টি দরকার আছে।বয়ঃসন্ধির পর থেকে নারীর প্রতিমাসে প্রাকৃতিক ভাবেই ঋতুকালীন ঘাটতি শুরু হয়।এজন্য প্রোটিন, আয়রন জাতিয় খাবার খেতে হয়।ওই কিশোরী ই এক বা একাধিক সন্তানের মা হয়।তাহলে নারীকে ছোট মাছ,মুরগির পা, গলা চামড়া এসব খাওয়াতে হবে কেন?

নাও বাপু ২ টো টাকা আয় করো বলে যে তোমার কত কথা শুনতে হবে।

মা আমি তো ঝগড়া করছি না।আমরা ৪/৫ টা মুরগি একসাথে আনি।সব রান গুলো একসাথে রান্না করলে সবাই খেতে পারে।কিন্তুু ২ টা করে রান্না করলে যারা খায় বারবার তাদের পাতেই পড়ে।মাঝু খালা কাজ করে ভাত নিয়ে যায়। তাকে এক পিচ বড় মাছ দিলে ছেলেকে নিয়ে ভাগ করে খেতে পারে।

খাওয়া নিয়ে যা যা বললে তাতে তোমার পরিবারের শিক্ষা বোঝাযায়।
আর কথা বলেনা আরু।ঝগড়ার ইচ্ছেটা ঠিক আসেনা।
এভাবেই বেশিরভাগ পরিবারেরই বছরের পর বছর ধরে শুধু বৌমা নয় বাড়ির মেয়েদের ও ঠকানো হয়। এই বাজে নিয়ম ভাঙ্গার সময় এখনই।

বিকালে আরুর স্বামী একটু আমতা আমতা করে বললো মায়ের সাথে তর্ক না করতে।জোর দিয়ে বলার মতো জায়গায় সে আর নেই।
কয়েকদিন পরে মাথাব্যাথা হওয়ার সন্ধ্যায় শুয়েছিল আরু।
শাশুড়ি চিল চিৎকার শুরু করলেন। বলি আজকি রান্নাবান্না হবেনা? আর কোন কাজতো করোনা সেই সকালে কয়টা রান্না করে অফিসে যেয়ে বসে থাকো।আর বিকেলে কয়টা জ্বাল দাও।

মা আপনার ছেলে অমন অফিসে যেয়ে বসে থাকলে আমার যাওয়া লাগতো না।

সাত

তাড়াতাড়ি করে ভর্তা ভাত আর ডিমভাজি করে আরু।খাওয়ার সময়ে আরুর স্বামী বলে,
খিচুড়ি রান্না করতে ভালো হতো।

আব্বা তো খিচুড়ি খেতে চাননা।আরেকদিন করে দেবো।

আব্বাকে ২ টা রুটি করে দিতে।আর আলুভাজি।

আমার শরীর ভালোনা।এত ঝামেলা করবো কিভাবে? কেন তুমিও তো একদিন ইচ্ছামতো রান্না করতে পারো।পৃথিবীর কোন ইতিহাস বা ধর্মশাস্ত্রে লেখা আছে নারীরাই শুধু রান্না করবে।

বৌমা ছেলেটার সাথে খালি চোপাকরো কেন? কই এতবছরে তোমার শ্বশুরকে তো একদিনও রান্নাকরতে বলিনি।

মা আগে বিদুৎ ছিলনা,আর এখন আপনি ফ্যান ছাড়া থাকতে পারেন না।যুগ বদলেছে মা এটা কে মেনে নিতে শিখুন।

আমাদের দেশে সন্তান জন্মের পরেই আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি শেখানো হয় তাদের। মেয়ের জন্য পুতুল আসে ছেলের জন্য বল।রান্নাবাটির সেটটা মেয়ের জন্যই বরাদ্দ থাকে।অথচ কাজের নারী পুরুষ বলে কোন ভাগ নেই।একজন মেয়ে যেমন প্রশিক্ষন নিলে প্লেন চালাতে পারে।একজন ছেলেও তেমনি ঘর সংসারের যে কোন কাজ করতে পারে।উন্নত বিশ্বে সবাই নিজের নিজের কাজ করে।সংসারে কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা থাকলে কারোই কষ্ট হয়না।

আস্তে ধীরে দেড় বছর পার হলো এবার শাশুড়ি খেলার সাথীর জন্য অস্হির।

বৌমা অনেকদিন হলো তোমাদের কী সন্তান নিতে আপত্তি আছে?
না মা আল্লাহ যখন দেন হবে এত তাড়ার কী?

আগামি শুক্রবার তুমি আমার সাথে ডাঃ এর কাছে যাবে।
আপনার সাথে কেন মা? এসব চিকিৎসা তো স্বামি স্ত্রীর একসাথে যেতে হয়।

কেন ও যাবে কেন? তুমি কী আমার ছেলের কোন দোষ পেয়েছো?

আমি ডাঃ যে আপনার ছেলের দোষ পাবো? আর আমার কোন দোষ পেয়েছে নাকী আপনার ছেলে? বা আপনি পেয়েছেন?

এত কথা তুমি কই পাও আল্লা জানে।মা আমরা বুড়ো হচ্ছি আমার কথা শোন।

একটু নরম হয় আরু তবুও রাতে স্বামীকে বলে তার সাথে ডাঃ কাছে যেতে।
আলম যেতে চায়না।বলে তুমি মায়ের সাথে যাও।সবাইতো মহিলাদের ই ডাক্তার দেখায়

আলমের এ কথাটি ঠিক গ্রাম বা শহর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তান না হওয়ার চিকিৎসা প্রথমে মহিলার উপরই চলে।পান দিয়ে গাছ খাওয়া,তাবিজ,ঝাড়ফুক,পড়াপানি,হোমিও ডাঃ,গাইনি ডাঃ যার যার অবস্হান ও সুবিধা মতো চিকিৎসা চলে।

ডাঃ আরুকে কিছু টেষ্ট করতে লিখে দেন। বলেন এক সপ্তাহ পরে আবার যেতে। রিপোর্ট দেখে চিকিৎসা দেবেন।

আট

পরের দিন শনিবারে বাসায় আছে আরু। নিজের মতো ঘরের কাজ গোছগাছ করছে।এমন সময়ে পাশের বাড়ির কয়েকজন মহিলা এল বেড়াতে যথারীতি আপ্যায়নের পরে পানের বাটা নিয়ে বসলো আরুর শাশুড়ি।একজন বললো,
বু তোমার বৌমাতো ভালোই আলমারি, খাওয়ার টেবিল আনছে।বৌমার বাপ ফিরিজ দেয়নি? এইডে তো তোমাগের সেই দোকানের ফিরিজ মনে হচ্ছে।

সবই আমার কপাল, বৌমার বাপ কিছুই দেয়নি।এই যে যা দেখছো এগুলো আমাদের বানানো।

কাছে এসে দাড়ালো আরু,খালাম্মা আমার বাবা ফ্রিজ দিলে সেইটা কী আপনার কাজে লাগতো? পরের বিষয়ে এত কথা বলে কী লাভ? আর যে গুলো দেখছেন, এগুলো বানানোর পেছনেও আমার বেতনের টাকার অবদান আছে।

ভাবি চলো বাড়ি যাই,এ বৌর মুখি ভারি ধার।
মহিলারা চলে যায়।

এবার শাশুড়ি ক্ষেপে ওঠে। তুমি পাড়ার লোকের সামনে বেতনের টাকার খোটা দাও।

মা আমার আগেই আপনার তাদের কথার প্রতিবাদ করার দরকার ছিল।আগামি মাসে আর টাকা দেবোনা। দেখি ফ্রিজ কিনতে কয়মাস লাগে।

টাকা দিবানা মানে গৃহস্থর ভাত খেয়ে মুরগি ডিম পাড়ে ঠিকই।সে ডিমের মালিক মুরগি হয় না, গৃহস্থ হয়। তোমার খাওয়া পরা আসে কই থেকে?

বিয়ের সময়ে আমার আয় করে খাওয়ার কথা ছিল নাতো।আপনার অর্কমন্য কাপুরুষ ছেলে তো সারাদিনই ঘরের অন্ন ধ্বংস করে আর আড্ডা দেয়।তাকে কিছুই বলেন না তো।

আলম ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। আরুর হাত ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে একটা চড় মেরে বললো,
আমি কাপুরুষ? কত বড় সাহস তোমার?

একটা কথাও বললো না আরু তখনি বাবার বাড়ি রওনা হলো।
শাশুড়ি যেতে মানা করলেও শুনলো না আরু।

এতদিন কিছুই বলেনি আরু আজ বাবা মায়ের কাছে সব খুটিনাটি খুলে বললো।মা কেঁদে ফেললো।
আব্বা এ সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আমি নিজের সাধ্যের সব টুকু দিয়ে সবাইকে ভালো রাখার চেষ্টা করেছি।আর পারছিনা।

সমাজের একটা সাধারন দিক হলো কেউ চাকরিজীবী মেয়েকে বিয়ে করলে একটু আলাদা কদর করে।কিন্তুু কোন নারী যদি কোন কারনে সংসারে বৈষম্যের শিকার হয় তবে সে পরে চাকরি পেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার জীবনমানে খুব বদল আসেনা।

আরুর ভাইটা বাইরে পড়াশোনা করে।বোনটা বললো আপু ঠিকই বলেছে।ও সংসার করা যায়না

শোন মা,সংসারে এমন হয় মানিয়ে নাও।তোমার মাকে তো ভালোবাসি তবুও জীবনে ২/১ টা চড় মারিনি এমন নয়।

আব্বা তুমি আর ওরা এক না।মায়ের অসুখ হলে তুমি রান্না করেছো,মার কাপড় ধুয়েছো, কত যত্ন করেছো।

মা সবাই এক হয়না মানাতে হয়।দরকারে আমি উত্তরের জমি বিক্রি করে তোমাকে ফ্রিজ কিনে দেবো।
আব্বা কী বলো এসব? ওরা যে সারাদিনই খারাপ আচরন করে।

শোন আমার বংশের একটা ইজ্জত আছে।আমার আপন, চাচাতো ৯ টা বোন আছে কারো ছাড়াছাড়ি হয়নি।তারাও অনেক কিছু সহ্য করেছে।

তোমার বোনদের বিয়ে হয়েছিল ৬৫ থেকে ৭৫ সালের ভিতর।আর এটা ২০১০ সাল। সময় বদলেছে।

মা তুমি একটু চেষ্টাকরো মিলেমিশে থাকতে।বুড়োকালে লোকের কাছে হাসির খোরাক হতে পারবো না।

অবাক চোখে বাবার মুখে তাকালো আরু। তার বাবার এ কোন রূপ? এখন কী করবে আরু?

ইচ্ছে ডানা – ৯

চোখের সামনে থেকে ভরসার পৃথিবী কাচের মতো বিচূর্ণ হয়ে যায় আরুর।সেই বাবা যিনি কত ভালোবাসতেন আজ সন্তানের সুখ থেকে আত্মসম্মান বড় হলো? বিচ্ছেদ কি কেউ ইচ্ছে করে ঘটায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে দেয়ালটা ভেঙ্গে বের হতে চায়।

১৫ থেকে ৩০ বা ৩৫ বছর মেয়েকে যত্নে বড় করার পরে বিয়ে দিলেই কী এমন হয় যে মানসিক বন্ধনটা আলগা হয়ে আসে।বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিবাহিত মেয়ে নির্যাতিতা হোক,তাকে মারুক, সিগারেটের ছ্যাকা দিক, সমালোচনার কাঁটা বিধাক বাপ ভাই সহ পরিবারের প্রায় সবাই বলে মানিয়ে নাও।তাতে স্বামী নেশাখোর হোক,বা পুরুষত্বহীন হোক। কোন মেয়ে সাহসি হয়ে ঘরের বাইরে পা দিলে সমাজ তার সমালোচনা করে।সমাজ কী কোনদিনই দেখেছে ঘরের ভিতরে লোকচক্ষুর অন্তরালে ওই নারীর সাথে কি কি ঘটে?

বিকালেই শ্বশুরবাড়ি হাজির আলম।শাশুড়ি আর শ্বশুর কে নানা মন ভুলানো কথা বলে আরুর কাছে মাফ চেয়ে বাড়ি যেতে বললো।আরু মাফ করলো কি না বোঝা যায়নি।তবে বৃথাতর্ক না করে সে শ্বশুর বাড়ি ফিরে এলো।

সে রাতে খুব কাঁদল আরু। আজন্ম পরিচিতদের প্রিয় মুখ গুলি কেমন অচেনা মনে হলো।এমন পরিস্হিতি বা এর থেকে খারাপ পরিস্হিতিতেই হয়তো কোন কোন নারী জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে।মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে।কিন্তুু আরু মনে মনে যোদ্ধা। সে মরার পক্ষে না।জীবনটা আরুর খুব প্রিয়।হতাশ হয়ে যে ব্যাক্তি বা বস্তুর কারনে মানুষ আত্মহত্যা করে হয়তো সেইটা অতটাও গুরুত্বের নয়।যে যায় সে ভুল করে। যার জন্য ভুল করে সে তাকে মনেও রাখেনা। নতুন করে বাঁচে। আসলে কেউ যদি নিজেকেই ভালোবাসতে না পারে শ্রদ্ধা না করে অন্যরা তাকে ভালোবাসা বা শ্রদ্ধা দেবে কেন?তাই এক বুক জলন্ত আগুনে দাড়িয়ে ও বাঁচার স্বপ্ন দেখে আরু।মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন।

ঝড়ের আগ মুহুর্তে প্রকৃতির মতো স্তব্ধ আরু। মনে কী চলে বলা কঠিন।তবে রুটিন মতো কাজ করে যায় স্বাভাবিক দাম্পত্য সম্পর্কটা ঠেকে আছে তলানীতে।কয়দিন এভাবে কাটে।

শাশুড়ির সাথে রিপোর্ট আনতে যায় আরু। কিছুটা সময় একান্তে কথাবলে ডাঃ এর সাথে।

ডাঃ বলেন রিপোর্টে সব সময়ে সব কিছু ধরা পড়েনা।রিপোর্টে দৃশ্যত কোন ত্রুটি না থাকলে তার মা হবার কিছু জটিলতা আছে। কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা কেটে যায় কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা দিন যায় আর বাড়ে।
এ ক্ষেত্রে ৩০ ভাগ সম্ভাবনা আছে জটিলতা কাটার। তবে ধৈর্ষ ধরুন। কিছু মেডিসিন দিলাম। ৩ মাস স্বামীকে সাথে নিয়ে আবার আসতে হবে।

ডাঃ এর চেম্বার থেকে আরুর মুখে কোন ভাবান্তর দেখা যায়না। কিন্তুু রাগে ফেটে পড়েন আরুর শাশুড়ি।

দশ

রিক্সায় উঠেই মরাকান্না জুড়লো আরুর শাশুড়ি।
আমার বংশে বাতি দেওয়ার কেউ আসবে না।আরু তুমি কিভাবে চুপকরে আছো?

মা,আমি কান্নাকাটি শুরু করলেই কী বাচ্চা এসে কোলে পড়বে? ডাঃ তো বলেছে অপেক্ষায় থাকতে ৩০ ভাগ সম্ভাবনা তো আছে।তাছাড়া বড় ভাইয়ের তো সন্তান আছে।বংশে বাতি দিতে কতজন লাগে?
তারপরে উন্নত চিকিৎসা আছে।বাচ্চা দত্তক নেয়া যায়।

কী বললে তুমি কোন জাত -অজাতের বাচ্চা দত্তক নেবে?
রিক্সাওয়ালা অবাক হয়ে পেছনে তাকায় ঝগড়া শোনে। তাকে ধমক লাগায় আরুর শাশুড়ি।

বাসায় এসে বাড়ি মাথায় করে আরুর শাশুড়ি।তার কতবড় সর্বনাশ হতে যাচ্ছে তার বয়ান শুরু করে।৬ মাসের মধ্যে সন্তান সম্ভবা না হলে সে যা ইচ্ছা করবে বলে দেয়।দরকারে ছেলের বিয়ে দেবে।

সমাজের কি নির্মম নিয়ম স্বামীর ত্রুটির কারনে সন্তান না হলে নারীরা সন্তানহীনা হয়ে ও সারাজীবন স্বামীর অবলম্বন হয়ে কাটিয়ে দিতে পারে।অথচ পুরুষ যদি কোন ভাবে জানতে পারে স্ত্রীর ত্রুটি বেশির ভাগ পুরুষই হয় নিজের ইচ্ছায় বা পরিবারের চাপে একাধিক বিয়ে করে নেয়।কেউ কেউ তো জানার প্রয়োজন ও বোধকরে না ত্রুটিটা কার।

আরু চাচ্ছিল এদের আরেকটা সুযোগ দিতে।কিন্তুু তা আর হয়ে উঠলো না।তার জীবনটা বিষিয়ে তুললো এরা।এর মাঝে আলমের ও পিতৃত্ব চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেল।এক বিছানায় শুয়েও হাজার মাইল দুরত্ব যোগ হলো মনে মনে।

লোকে বলে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। একদিন হলোও তাই।আরু হঠাৎ দুপুরে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে এলো। গেটের বালাই না থাকায় কে এলো, গেল বোঝার উপায় নেই।বারান্দায় উঠেই শুনল মা ছেলের কথা।রুচিতে বাঁধলেও নিজের নাম শুনে দাড়ালো আরু।

বাবা তুমি আরেকটা বিয়ে করো।ও বউ প্রথমদিন থেকেই কথার বাক মানেনি।

মা ও তো সংসারে টাকা দেয়। যদি চলে যায় বা কেচ করে?

তুমি এক কাজ করো বাপ শুনেছি ব্যাংকে অনেক টাকা লোন দেয়।তুমি ওকে বুঝায় বড় করে লোন নাও বাড়ি করার জন্য।তাহলে আটকা পড়বে যেতে চাইলেও পারবে না।

নিঃশব্দে বাড়ির বাইরে চলে গেল আরু।যথাসময় ফিরলো।কাউকে কিছুই বললো না।
পরদিন দুপুরে ফিরে এলো বাসায় সাথে একজন উকিল আর একজন পুলিশ।ফোনকরে শ্বশুর কে দোকান থেকে বাড়ি আনলো।

সবার সামনে বললো আজ আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি।কাল যাতে আমার নামে টাকা আর গয়না নিয়ে পালানোর কেস না দিতে পারেন সেইজন্যই উনাদের এনেছি।সেদিনের শোনা সব কথাগুলো সবার সামনে বললো।

আরেকটা কথা শুনে রাখুন আপনি আমাকে যে ডাঃ এর কাছে নিয়েছিলেন উনি আমার বান্ধবির মাসি। পড়াশোনার জীবনে ওনার বাড়িতে অনেক থেকেছি।শুধু জানতাম না এখানে এসে চেম্বার খুলেছেন। আপনাদের করা আচরনের কথা শুনে মাসিই মিথ্যা টুকু বলেছিলেন আপনাদের আচরণ পরীক্ষার জন্য।আসলে আমি সম্পূর্ণভাবে মা হতে সক্ষম।

আপনাদের দেয়া সবটুকু গয়না এখানে আছে। বুঝে নিয়ে উকিলের কাগজে সই করে দিন।
এতক্ষণে আলম কেঁদে উঠে আরুর পায়ে পড়তে গেল।

ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।আমি স্বেচ্ছায় বিনাশর্তে ডির্ভোস পেপার পাঠিয়ে দেবো।শ্বশুর শাশুড়ি এক হাট পাড়ার লোক জড়ো হলো।কারো অনুরোধে কান দিলনা আরু।

পুলিশের ধমকে উকিলের কাগজে সই করলো আলম।নিজের জিনিস পত্র নিয়ে বের হলো আরু।বললো,

অনেক দিন তো আপনাদের খাঁচায় বন্ধি হয়ে বুলি শেখার চেষ্টা করলাম।এবার একটু মুক্তির শ্বাস ফেলি।অসীম নীল আকাশে ডানা মেলি।ইচ্ছে ডানা।(সমাপ্ত)

মন্তব্য: