ভোলানাথ সিকদার- এর কবিতা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

উদ্বাস্তু

জলের আয়নায় কুয়াশার ডানা ভেঙ্গে

হাঁসগুলো মুখ দেখে নেয়

কুসুমিত রোদের ঝিকিমিকি আলোয়

এমনি এক সকাল চেয়েছিল তারা

বুকের ক্ষরণে অগনন লাশের মিছিল হয়ে পার

সহস্রাব্দির অন্ধকার ভেঙে ভেঙে উড়ুক্কু ডানায়

বেগতিক সময়কে পিছনে ফেলে সম্মুখের দিকে-

একবিংশের দরজায় কড়া নেড়ে সকালের খবর

ঘরে পৌছে দিতে সুব্হে সাদেক। 

তবুও ওরা নীড়হারা ঘরহারা জলের শরীরে 

            ভাসমান পানকৌড়ি।

বৃত্তের ভেতরে

তোমার শুকুমার বৃত্তের ভেতর

একটি রক্তগোলাপ কী সুন্দর

        মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে

সদ্যফোটা আমোদিত গন্ধে বিভোর রাতের কুয়াশার 

বেড়াজাল ভেঙে নতুন সূর্যের নতুন আলোকে উন্মুখ

চারপাশে পাখিদের কলকাকলীতে আনন্দমুখর পান্থশালায়

দক্ষিণার মৃদু মৃদু বাতাসে তোমার রুগ্ন চুলগুলো উড়িয়ে য্যানো

বলাকার পাখার কাঁপনে উড়– উড়– চোখে স্বপ্নের ছোট্ট নীড়…

আহা! কী সুন্দর একটি রক্তগোলাপ!

তোমার সুকুমার বৃত্তের ভেতর জীবনের সবুজ অঙ্গীকার।

তোমায় এতটুকু সুখ দেব বলে

দুঃখের গহনায় অনেক সাজিয়েছি তোমায়

নীল পাত্রে রেখে, দেখেছি পদ্যের অলংকারে

জলের সহজতায় দেইনি পিয়াসের সুখ…

আজ চৈত্রের খরতাপ, সবুজ চারাগুলো ¤øান, জমিন চৌচির

এখানে ওখানে অনেক ফাটলের সমাহার; প্রত্যাশিত চাতক যেন

উর্ধ্ব সুখ; আকাশে মেঘের দেখা নেই

শুধু সন্ধানী চোখে নির্বাক জীবনের পাণ্ডুলিপি এপিঠ ওপিঠ করে ফেরে।

এতটুকু সুখ দেবো বলে কবিতার জটিলতা ছেড়ে

গদ্যের সহজ সমাধানে, কাঁচির যন্ত্রনা-বুকে খুঁজে খুঁজে 

আগাছার শেকড় কেটে কেটে এক সময় বর্ষার সহজ ধারার মতো 

ঘনঘোর বর্ষায় ভরিয়ে দিতে দুঃখের খাল-বিল, নদী-নালা

সেখানে স্বচ্ছ সরোবরে লাল-সাদা শাপলার মাঝে হংসমিথুন সুখ

রাতভর জোছনায় রূপকাথার কাহিনীর মতো 

সোনালী ধানের রোমাঞ্চকথক বলে-

স্পেন, ফরাসী, গুজরাটি, মারাঠি, মুঘল, পাঠান, বেনিয়া ইংরেজ, খাঁন হতে

আজতক পুতুল বাঙ্গালীর নীল নক্শার খবর। 

তোমায় এতটুকু সুখ দেবো বলে-

নুর হোসেন বুকে মুক্তির পোস্টার লাগায়

শহীদের লাল শার্ট বাতাসে ওড়ে; 

          বিপ্লবীর রক্তে তোমার শাড়ির আঁচল ভিজে যায়।

তোমায় এতটুকু সুখ দেব বলে প্রকাশ্য দিবালোকে 

জমির চাচার খুলি তোমার গলায় মণিহার হয়ে দোলে

হাজরা বিবি কাফনের মোড়কেই বন্দী; জমিলা সামিল হয় রাতের বিনোদনে

                পরান মণ্ডলের জমি জিরেত হয়ে যায়।

তোমায় এতটুকু সুখ দেবো বলে 

সলেমান কম্পোজিটর সারাদিন টাইপ খুঁটে বলে-

কখোন পেটের আগুন আর সূর্যের আগুন একসাথে আরও লাল হয়ে উঠবে

জ্বলবে আমার চিতা। 

তোমায় এতটুকু সুখ দেবো বলে কবি কাঙাল পথে পথে সায়ের গেয়ে

সারাদিন পয়ার ত্রিপদীর তালে সাধে জীবনের সারগাম- সা রে গা মা পা ধা নি সা।

তোমায় এতটুকু সুখ দেবো বলে আজও জীবনগদ্যে ও পদ্যে কথা কয়।

কি করে তোমার কাছে যাই

আবারো আসছে তেড়ে 

ষাড়ের মতো ধেয়ে নূহের প্লাবন

বাঙ্গালীর হাড়ের তলদেশ থেকে ক্রমেই ফুসে উঠছে নোনা পানি

জলবদ্ধ হচ্ছে সড়ক জনপদ, মহানগরী গারস্থের আঙ্গিনা। 

সাদা পোশাকী গৃহবন্দী সব। কাঁদা ভেঙ্গে নেংটোরা 

উপরে আসছে উঠে

            কাঁধে ভর করে মৌলিক তাগিদ।

তাদের এ প্রয়োজন তে তলার ছাদ

এখন বেগতিক সব এলোমেলো

কি করে তোমার কাছে যাই; কুশলি বলি তুমি কেমন আছো।

জয়তু শুভ

তুমি এলে তাই বাতি জ্বললো

চারপাশে আলোর ঝলকানি ভরে দিলো তাবত উঠোন

আনন্দে পাখিরা গান গেয়ে গেল

যেতে যেতে বলে গেল জয়তু শুভ। 

অনেক আঁধার পেরোনো রাতের নিশান

এক টুকরো আলো এ য্যানো কুয়াশা-ভোরের আমেজী তাপ

আপ্লুত ছায়া; অনাদিকালের বিজয়স্বাক্ষর

            সঞ্জীবনী মূর্ছাধারা অমৃতের সন্তান।

নবজাতক দীর্ঘজীবী হোক।

আয়না কোথায়

কুসুম ফোটার অবসরে মরিচা কখোন যে জানালার

            শিকে শিকে ফেলে গেছে রেণু টের পাইনি

এ পুষ্পবীথি বড় একা, কাঁদে কেতকী হিমেল বরষায়

এভাবেই গড়ন তার, নিজেকে চেনার আয়না কোথায়?

কুসুম কুয়াশাকে মনে পড়ে কার্তিকের ধানফুলে

অভাবের পাপড়িগুলো আজও ডানা ভাঙে

        নেড়ীর তেলের বুকের ভেতরে। 

নীরব উপস্থিতি

নবান্নের উৎসবে একবার চাষী গোলায় তুলেছিল ধান

তারপর থেকেই আকাল

বার কয়েক বসন্ত ডিঙয়ে গেছে জানালায়

এ বিরাণ মাঠে ধানফোলা শরীরে আর ফেরেনি রিতা

ফিরেও দেখেনি ডানা ভেঙে কবে পালিয়ে গেছে শীতের রোদ্দুর।

এখন একাই ঘোরে সঙ্গিহীন জলের শরীরে 

ভালবাসার বিবর্ণ শব্দগুলো বাউকুড়–নী ছিটকে ফেলে জংলায়

বাতাসে রাত্রি শাসায় নিজের ছায়া

সেও অস্পষ্ট হয়ে আসে ঘরে

          জমতে থাকে কুচি কুচি বরফের হিম।

কপালের বলিরেখা রঙিন পতাকা উড়ায় বড় দুঃসাহসেÑ

বহুকাল উৎসবে নেই যৌবনের অর্গান 

            নেই বাহুলতার তালে হেঁটে যাওয়া 

তোমার মুখ নেই, কিছু নেই-

সুখ নেই তবু- সারাঘর ছড়িয়ে আছে তোমারই নিরব উপস্থিতি।

মন্তব্য: