হাসান সাব্বির- এর কবিতা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

ঢেউয়ে ঢেউয়ে অথৈ জলের খেলা

রোদে পোড়া দিনগুলো মেঘের গর্জন হলো- বৃষ্টি হলো প্রকাশ্যে। 

গোপনে কি হারালো? উপেক্ষা করতে পারিনি অপেক্ষার ডাক- 

এলোমেলো বোধ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের মতো অর্থ কোনদিনই হয়নি প্রজ্ঞা।

তোমার সাথে অসাধারণ সব গল্পের উদাহরণ- কবিতা ও শিল্পের কুটির

কিন্তু কি আশ্চর্য মিথ্যে মুহূর্তগুলো অসাধারণ সব সত্যির উদাহরণ?!

জানালার আকাশে আজ সারাদিন মেঘ…

খোলা জানালার আকাশে সমুদ্র…

মন জানতো, সময়ের গানে কণ্ঠ দিয়ে মন কাল হবে অতীত।

ভুলে যাবার মতো দূর হলো দেখায়-

চোখের মধ্যে আলোর উজ্জ্বলতার মতো বিন্দু বিন্দু ঘুম যেন আগুন হয়েই জ্বলে!

পুড়তে পুড়তে তবুও প্রতিটি মুহূর্ত বেঁচে থাকার আনন্দ ঠিক। রক্ত আজও গোলাপ 

হয়ে ফুটে থাকে- কোন কোন রূপ শুধু নীল!

তুচ্ছতার মতো শত শত ছিদ্র দিয়ে কেবল আমার আত্মার হীনমন্যতার প্রচুর প্রকাশ-

একজন ভেবেছিল সুগন্ধী।

দ্যাখ, কত গভীর থেেেক উঠে এল সাঁতার-

যেখানে কেউ এখনও জানে না- কোন্ সে আঁধার?

শুদ্ধতার একটা ফানুশ উড়িয়ে শূন্যে পবিত্র একটা উৎসবের ঘোষণা?!

রাতের দীর্ঘ সড়ক থেকে রাগ-অনুরাগের কিছু মুহূর্ত 

নির্দিষ্ট সময়ে এসে হয়ে যায় পৃথক, পর। 

এমনই হয় রূপকথা 

আগে ও পরের মধ্যে সুদীর্ঘকালের বিরতি!

এক মহূর্তে তিল পরিমাণ হাড় থেকে বেজে উঠল ঘন্টা- হৃদস্পন্দন। তন্তুর মতো একটা শেকড় বের হলো। দিনে দিনে মূল শিকড়টা ভেতরে রেখে বৃত্তের প্রতিটি বিন্দু থেকে সহস্র শিকড় নির্জনতার মধ্যে জড়াজড়ি করে বেড়ে উঠতে লাগল। নির্দিষ্ট রেখার উপরেও বৃদ্ধি- নিচেও বৃদ্ধি। দু’টো অংশ একটা আলোও অন্ধকারে চব্বিশ ঘন্টা আর একটা অংশ শুধুই অন্ধকারে। বৃক্ষেও রূপকথা একদিন মানুষ হলো- মানুষের গল্প হলো- বইয়ের পৃষ্ঠায় সেই গল্প মুদ্রিত হলো ছাপার অক্ষরে।

অলীক স্পর্শে অক্ষরের অনেক আকার-আকৃতি- একদিন অবচেতনে অক্ষরগুলো নিজেরাই নিজেদের রূপচর্চা শিখে নিয়ে নির্মাণ করলো প্রার্থনা-ঘর। এক একটা মানুষ এক একটা অক্ষর! অক্ষর যুক্ত হয়ে নতুন নতুন আরও অনেক শব্দ- শব্দ থেকে বাক্য- বাক্য থেকে রচনা। রচনা থেকে শুরু হলো নতুন এক সভ্যতার!

মাটির উপরে রূপকথা- মাটির নিচে রূপকথা! রূপকথা নিয়ে কত রূপচর্চা?! মূল শিকড় বন্দী হয়ে এখন অজ্ঞাত অস্তিত্ব। কিছু চতুরতা ও হিংস্রতা মূল শিকড়ের অস্তিত্বের সন্ধান জেনেও সাধারণ-এর সাথে প্রতারণা করে। অদৃশ্য মূল শিকড়কে কেন্দ্র করেই বিভাজন আর বিভাজন- রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য আরও কত রকম-সকম!

রূপকথার গল্প এমনই হয়- এমনই হয় রূপকথা।

ডুব-সাঁতার

আরও দূরে যেখানে বাঁশি বাজে পাতার হাওয়ায় হাওয়ায় শোনা যায় প্রেমজ সংগীত- চন্দ্রকলায় খেলা করে মন। সেই মসলার বনে একদিন অতিথি হযেছিলাম। সেদিন প্রথম জেনেছিলাম কেন এত মধুর প্রণয়।

গভীর রাত্রিতে তখন বৃষ্টি হয় কুয়াশার অশ্রুযাপন শেষে অনেক নারী-নক্ষত্র কালরপুরুষের বুকে নাক ঘষে খুঁজে ফেরে ঘ্রাণ… মাদকের আমেজ পেয়ে নেশা তখন গভীরে খুঁজে নেয় মোহনার সন্ধান!

লুট হতে তখন ভীষণ ভালবাসে সুন্দর!

দুশ্চিন্তার আগুন চিতায় পুড়ে খুঁজে নেয় শয্যা- জ্বলে জ্বলে বেদনার্ত ঘুমায়- অনেক দুর্ভাবনা তখনও জেগে থাকে নির্ঘুম রাত।

এই সন্ধ্যা অন্যরকম। চোখের সামনে নগ্ন হয়ে পড়েছে ধরা- কামনার মাদক জড়িয়ে ঠোঁটে- নেশা হয়ে গেছে শরীর! বলক ফুঁটছে রক্তে- ডুব-সাঁতারের নিমন্ত্রণ পেয়ে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠেছে হাত।

কি জানি, কোন মোহফল আজ ভাঙিয়ে দিল জানোয়ারের ঘুম?!

গভীর এক রাত্রির অরণ্যে প্রবেশ করে ঘোরে হারিয়েছি পথ- হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার। অনেক লক্ষ্য-উপলক্ষ্য লোভ দেখিয়ে কারসাজি সম্পূর্ণ করবে বলে করেছে পণ।

হিংস্র শেকড়-বাকড়ে আটকে আছে চেতনার রথ!

নীরবতার নৈশব্দ-বিলাপ

কোথায় গেল প্রিয় শব্দ আমার- ফুল-পাখি আর প্রজাপতিরা? স্বপ্নেও ভাবিনি এক লাল ফড়িঙ-এর কথা ভেবে মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে… একটি কলমের সৌজন্যে কত যে আঁচড় কাটা কাগজের পৃষ্ঠায়- শূন্যের ক্যানভাসে লিখে রাখা- সুখ-দুঃখের পরিসংখ্যান। একদিন বিস্মৃতি হবে, মৃত্যু হবে কল্পনার তবুও প্রকৃতির নিয়মে জীবনকে ভালবেসে হাসতে হাসতে হেমলক পান! ফুলের মালা সেই কবে শুকিয়ে গেছে তবে আজও কেন ঘরে বাতাসে ঘুরে মরে বেলী ফুলের ঘ্রাণ?

অন্তরালের গোপন কথা অপ্রকাশ থেকে যায়- অসম্পূর্ণ থেকে যায় জীবনের স্বপ্ন-পুরাণ। মধ্যরাতের বৃষ্টির শব্দ মুখরিত জানালার কাঁচে। মেঘে ঢাকা আকাশ থেকে নেমে আসে বজ্রবিদ্যুৎ- পুড়ে যায় ফসলের ক্ষেত- শস্যের স্বপ্ন। জলোচ্ছ্বাসে ভাসে স্মৃতির পদ্ম। চন্দ্ররাত্রি কি বোঝে না আত্মার আকুলতা? অমবস্যার অন্ধকারে ঘরের মধ্যে রাত যেন নরকের নৃশংসতা। মৃত্যুর মতো সন্ত্রাস এসে আহত করে বুকের পাজড়ে। চাঁদবিরহে ভুলে যাই রাশ উৎসব- বিচ্ছেদকথনে শিলাবৃষ্টির তুমুল প্রলয়। আর কত কাঁচের টুকরো হবো- পোকা হয়ে পড়ে থাকব মৃতের শয্যায়?

সকাল-দুপর-সন্ধ্যে অথবা বিকেলের গল্প আমাদের ঠোঁটে ঠোঁটে। বিপরীতমুখি দুটি স্রোত একই অভিমুখ অথচ স্বপ্নে ছাড়া কেউ কাউকে দেখিনি কোনদিন। তবুও কীভাবে যেন রাতের পর রাত আমাদের নিবিড় আলিঙ্গন। পাশাপাশি বসে থেকে এভাবেই আমরা কথায় কথায় সময়ের ভেতর দিয়ে শূন্যের দিকে হেঁটে যাই। শূন্য থেকে শুরু হয়ে শূন্যেই শেষ হয় প্রেম। ঘুম ভাঙলেই স্বপ্নের গল্পটাও হারিয়ে যায় চোখ থেকে। দুঃস্বপ্ন এসে ভিড় করে… দারুণ এক ভয় এসে ভেঙে দেয় সাহসের শক্ত হাড়! নির্ঘুম পথে হেঁটে যায় উড়োমেঘ- বোধের জানালা খুলে তাকিয়ে থাকে তৃতীয় চোখ। দ্যাখে, স্মৃতির জমিন খুঁড়ে শৈশবের অস্পষ্ট অসংখ্য দৃশ্যের ফসিল! নৈশব্দের বিলাপ তখন হাতের আঙুলে। আঙুল ঘুরিযে ঘুরিযে শূন্যের উপর এখন মহাশূন্যের জীবনযাপন! রাতের পর রাত একই চিত্রনাট্যের ভিন্ন ভিন্ন এপিসোড- ভীষণ ভৌতিক বলে মনে হয় নীরবতার নৈঃশব্দ্য-বিলাপ। ঘরের মধ্যে আঁধারের আকাশটাকে তখন মনে হয় নরকের ছাদ!

মাঝে মাঝে যার অস্তিত্ব খুঁজি 

অন্তরাত্মায় কে যেন ঠোকরায় দিবানিশি- কে যেন ভীষণ ক্রোধান্বিত ঠুকরে চলেছে দ্বিধাহীন। তার জন্য আজ আমার বুকটা শূন্য খুব। অদ্ভুত এক শূন্যতার এক শূন্যতার প্রাণ- ক্ষয়ে যাচ্ছি তাই রাত্রির নৈশব্দে। হাওয়াহীন একটি বৃত্তের মধ্যে দমবন্ধ বেঁচে আছি! যে ঠোকরায় সেও জানে এই সত্য। কি যেন স্পষ্ট নয়!

কেউ কি জানে পাখিরা কেন কখনও কখনও বাসা বাঁধে মানুষের বুকে- কলিজা থেকে ঠুকরে খায়…। আলোপোকা এক চোখের উপর জ্বলছে- নিভছে। 

বিচ্ছেদের কানামাছি খেলে কুয়াশার বিভ্রম- তবুও কিছু পরাবাস্তব পোকা ভেজা রোদ গায়ে মেখে হেঁঠে যায় তোপান্তরের মাঠ পাড়ি দিয়ে… হঠাৎ ডোরবেল বেজে উঠলে মানবিক বোধ দরজা খুলে দিয়ে দ্যাখে পিপাসার্ত পোকা এক অনুমতি চায় ভেতরে ঢোকার। 

দেয়াল বেয়ে থাকা টিকটিকিটি অতঃপর দ্যাখে শয্যায় তুমুল ঝড়!

একটি ঢেউ অবশ্য একদিন ছুঁয়ে দিয়ে হারিয়েছিল গভীর সমুদ্রে! সেই প্রথম- সেই শেষ। প্রবহমান নদী এক চিরকাল বুকের মধ্যে অথচ কী আশ্চর্য গ্রীষ্মের খরায় চোখ ফেঁটে চৌচির!

রোজ রাতে আত্মহত্যা করি আর ভোর হলে কেউ যেন অমৃত-জল ছিটিয়ে মুখের উপর…। টের পাই না আলো-অন্ধকার- রাত গভীর হয়ে যায় চোখের মণিতে। স্বপ্ন থেকে পুনঃ পুনঃ জন্ম নেয় রজস্বলা নদী! মাঝে মাঝে যার অস্তিত্ব খুঁজি তার নাম আত্মহত্যা।

মোমরঙ চিত্রকলা

প্রত্যক্ষ করি ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য রঙের কৌটা আর পরিত্যক্ত তুলি…। বিশাল ক্যানভাসে একটা মৃত নদী ধরে রেখেছে ছোট বড় অথচ অনেক অনেক ঢেউ অথচ স্থির। সেখানে ঘোড়ার কঙ্কালগুলো পড়ে আছে আর মানুষের মৃতদেহগুলো খেয়ে ফেলেছে মাটি- দেখা যায়, একটা রেলগাড়ী চলে গেছে শ্মশানের ভেতর দিয়ে অন্ধকারের দিকে…। অগণিত মানুষের উত্তেজিত ছায়া কতকাল যেন নরাচরা করছে না একচুল। ঝড় শেষের বিধ্বস্ততার মতো একটা সবুজ রেখা চলে গেছে আকাশের দিকে এবং গর্তের মতো অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন আকাশের গায়ে একটা জলপ্রপাত অথচ জলপতনের শব্দ নেই। যেন একটা বেশ্যা শুয়ে আছে বেডের উপর আর আগুনের শিখাগুলো তুলোর মতো হালকা স্থির হয়ে আছে হাওয়ার অনুপস্থিতিতে।

মূর্তিগুলো ধ্যানে বসে আছে যদিও সেই ধ্যান ভাঙবে না কোনদিন কারন ধ্যানের ভেতর মৃত্যু হয়ে গেছে সেইসব শরীরের যাদের দেহকাঠামো গ্রাণাইট পাথরে তৈরী- অস্পষ্ট নয় একটি মুহূর্তও। 

আমরা কখনও কখনও এইসব চিত্রকর্মের ভেতর দিযে চলে যাই গভীর জঙ্গলে- রহস্যের জন্ম দিয়ে কেউ কেউ নিখোঁজ হয়ে যাই প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার অন্ধকার মহলে।

অনেক হয় উত্তর 

প্রলোভনের পথে পথে মানুষের মৃত্যু শুধু- মানুষেরই কঙ্কাল। কোন কোন কঙ্কালের ভাঁজে ভাঁজে লুকিযে থাকে সোনাদানা, অলংকার। কতিপয় মানুষ সেই অলংকারের লোভে পাগল-প্রাণ যদিও তারা জানে প্রতিটি সোনার মোহরেই লেগে আছে দীর্ঘশ্বাসের রক্ত আর বিশ্বাসঘাতকতার নীল মাদকতা। তবুও তাদের সোনার মোহর চাই-

চোর-ডাকাত হতেও আপত্তি নেই!

ভেঙেচুরে একাকার হই কাঁচের মতো-মন ভাঙে- মন কি স্বচ্ছ কাঁচ? উদাসী সময়ের ঢেউগুলো মনে পড়ে- সেই সমুদ্রের আঁচলে নীল আকাশ। অশ্রুভেজা সেই চোখ এখনও মুছে যায়নি- সেই দেখাটা এখনও হয়নি বিস্মরণ। একটা আপেলের সাথে স্মৃতির রূপকটা কি খুব অশ্লীল মনে হবে- তিরিশ বছর পূর্ব একটা মুহূর্ত অথচ এখনও হারায়নি রঙ।

উর্বর স্মৃতিও অর্থকরি ফসল- উপযুক্ত মূল্যে বেচতে জানলে কেউ কেউ লাভবান হয় নিশ্চই!

একটু যদি ফ্লেভার যুক্ত হয় অতুলনীয় হয় স্বাদে-গন্ধে! শেয়াল, শকুনও বেশ মানিয়ে যায় পোশাক-প্রচ্ছদে বুকের উপর- তাল মিলিয়ে যুগের সাথে?! কারও কারও মুখই যুতসই উত্তর?!

সবাই শুধু অর্থ খোঁজে অথচ সব প্রশ্নই যে পণ্য নয়।

নির্বোধের মতো কথা বললে আত্মীয়-স্বজন তো বলবেই পাগল- বলুক-

জোড়া-তালী দিয়ে চলে যাচ্ছে কত দিন, আমি তো কেবল স্বভাবে মীন!

হাওয়ার মধ্যে কে কথা বলে ফিসফিস? একদিন আকাশকে ভুলে যেতে পারলে মনে হয় আর কখনও ঘুম ভাঙতো না! সারা শহর জেনে গেছে ছেলেটার খেয়ে-দেয়ে কোন কাজ নেই- বানিয়ে বানিয়ে উদ্ভট সব গল্প বলে আড্ডায়- চায়ের কাপে ঠোঁট পুড়িয়ে কবিতার কথা বলে যদিও কবিতা বলে বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব নেই। ঠাট্রা-তামাশার জন্য তার ইমেজটা যথার্থ।

মিষ্টি হৃদয়- হৃদয় কেন রক্তের মধ্যে ডুবে থাকে?!

আয় ঘুম আয়

তখনই জেনেছিলাম তুমি শুধুই মায়া- তবুও পাগলা ঘোড়া ছুটেছি পেছনে- কখনও কি পেরেছি ছুঁতে? যখনই ভেবেছি  থেকে গেলে হাত-বাড়ানো দূরত্বের বাইরে- যে পেয়েছে না জানি সে কত সুখি। ঈস! যদি আকাশে উড়তে পারতাম… কীসের যে জ্বালা শরীরে…। চশমার কাঁচে সেই কবে থেকে জমে আছে কুয়াশা- আমি আর পারি না- দীর্ঘ সড়ক হেঁটে রাত্রির- অজানা-অচেনা এক স্পেসে এসে থমকে থাকি। আয় ঘুম আয়- চোখের মধ্যে তোকে রেখে কয়েকশ শতাব্দী পড়ে থাকি অন্ধকারে। 

…উড়ে যাচ্ছে ওড়না

হাওযার দুষ্টুমিতে উড়ে যাচ্ছে দৃষ্টির প্রতিভা

দেখে নিয়ে কুমারী বুকের রহস্যময় উত্তাপ!

আলো-ছায়ার যুগোলবন্দী-

প্রেম আর প্রণয়ে মাতাল!

ঠোঁটে ঠোঁটে যখন মধুর-বিষ আস্বাদ…

নেশার মতো তীব্র ঘোর- অস্থিরতা যখন-

কলসের কথা মনে পড়ে-

                জলের কলস!

একলব্যকে আর কতকাল বুড়ো আঙ্গুল কেটে 

গুরু-দক্ষিণা দিতে হবে দ্রোণাচার্য্যকে!?

ক্রুশবিদ্ধ যীশু-হৃদয় কি দ্যাখেন না ঈশ্বর?

আর কতকাল পাশাখেলায় নিশ্চিত হার দেখে…

কেন কালো বেড়াল এসে উল্টে দেবে পাশার দান!?

দেবতার নামে আর কত বলি দিতে হবে ভক্তের হৃদয়-

আর কত খুন হলে তুষ্ট হবেন দেবতা- ইন্দ্রের সভায় 

                         খোশ মেজাজে পান করবেন…

একদিন আমরা সারাটা দুপুর বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চলে গেছি…। মন কেন ভেঙে যায় বলতো মোহনা? প্রতিবন্ধী জীবন যখন জেনেছি দোষ দেইনি অদৃষ্টকে। একদিন হঠাৎ করেই জানলাম কাছে কেউ নেই- একাকীত্বের অন্ধকারে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছি কেবল গভীর অন্ধকারে…। নেকড়ে হয়ে তাড়া করে ভীষণ এক ভয়- ভয় না অপরাধবোধ!? প্রেম নামক প্রলোভনের জন্য কত যে ক্ষতি করেছি আত্মার! বলেনি কেউ কতোটা দুঃখ পোড়ালে তৈরী হয় কল্পনার জগৎ- কত রাত জেগে থাকলে তল পাওয়া যায় নীরবতার!? স্বপ্নের পৃথিবীটা মর্তের পৃথিবীতে নেই- তবুওতো পৃথিবীটা স্বপ্ন- দম দিয়ে ছেঁড়ে দেয়া সেই পুতুলের কণ্ঠটা আজও দূর থেকে শুনতে পাই- শুনতে পাই তার সুখ-দুঃখ; হাসি-কান্না, ভেতরে ভাঙনের আওয়াজ!

এমন এক ঝড়ের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছি মরা মাছের মতো- কেউ যদি জানত তা…। মেঘলা আকাশ বলে গেছে বৃষ্টি নামবে- অপেক্ষায় ছিলাম সারাদিন- বৃষ্টি নামল অবশেষে গভীরে রাতের- চোখ থেকে ফোটা ফোটা… 

এমন গভীরভাবে কেউ কি কখনও দেখেছে আকাশ? সীমাহীন এক শূন্যের নাম আকাশ- ঘন এক নীলের নাম! কেউ কি জানে কখন- কোথায় কোন নক্ষত্র জ্বলে ওঠে আকাশের- নিভে যায়…। অপুষ্ট কত ভ্রুণের যে মৃত্যু হয়েছে শূন্য থেকে শূন্যে আরও কত মহাশূন্যের মধ্যে লুকিয়ে আছে আরও কত পৃথিবীর গোপন ধ্বংস! 

জানি একদিন ওই আকাশের নীলে হারিয়ে যাব- বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যাব শূন্যে। কবিতার কি আসে যায় এমন মৃত্যুতে!?

ভেতরে ভেতরে কখন যে পঁচে গেছি- নষ্ট হয়ে গেছি সম্পূর্ণ…। থাক না কিছু ভুল কারো মনে সত্যি হয়ে- বিশ্বাস হয়ে চোখের মণিতে থাকুক না কিছু দৃশ্য! কী যায় আসে যদি নদী শুকিয়ে যায়- জল না আসে!? সব স্বপ্নতো আর সত্যি হয় না- কিছু কিছু ফুলে থাকে না তো গন্ধ।

নৈশর বিলাপ

অমন এক ঘন বর্ষায় ঝর্ণার খোঁজ পেয়ে এই আমি কেমন রোমাঞ্চিত ছিলাম লোমকূপের গভীরে। আদিম এক নেশার অঞ্চল তখন চোখের সামনে উন্মুক্ত। ভুলে গেছি, আলো-আঁধার- পাপ-পুণ্যের আক্ষরিক অনুবাদ। সামান্য এক ইচ্ছের কাছে অসহায় আত্মসমর্পন। ফেরার পথ ছিল অদৃশ্য। 

‘হাটুগেড়ে বসে আছি…’ এমন এক চিত্রকলার প্রদর্শন যখন আর্ট-গ্যালারিতে চোখের উপর তখন মাতাল সন্ধে- ভিডিওচিত্রের নীল-উৎসব। দুঃস্বপ্নে ড্রাকুলার লাল চোখ! আর্তনাদের ভূমি রক্তে ভেজা- প্রেতাত্মার পেঁচা চোখে আঁকা ধ্বংসের মানচিত্র! আহত সময়- সময়ের ডানাভাঙা প্রজাপতি কাঁপছে ব্যথায়। অগ্নিকু- জ্বালিয়ে কে যেন চিতায় ঝাপ দিতে যাচ্ছে…। বিক্ষিপ্ত দৃশ্যের ক্ষোভ-বিক্ষোভ- দৃশ্যের ভেতরে ফাঁটলের অস্তিত্ব- অন্ধকারের আউটলাইন! বিভ্রান্তির কালো যাদু- জগৎ। অগ্র-পশ্চাতে অতৃপ্ত আত্মার অশরীরি ইমেজ- জানালার পর্দা কাঁপে- দম-ফাঁটানো হাসির শব্দ যেন অথচ অদ্ভুত নিরবতা। 

অজ্ঞাত আমি যেন আদিম এক গুহায়- ঘিরে আছে একদল নরপিশাচ। নৈশর বিলাপ- নিশিরাত!

মন্তব্য: