পারাপার
পাড়ভাঙা পুকুরে বসে পানির কিনার দেখছি।
আমাদের গ্রামের সোয়াসীর জল
সচল প্রবাহে একটানে নিয়ে চলে জলের কিনারায়।
জলের বায়োস্কোপে নির্বাক ছবি আসে
উঁচুনিচু তরঙ্গ ছাড়া জল-সুনিপুণ স্থবির।
জলে কোনো কোনো মুখের ছায়ায় লুকানো আহ্বান-
অথচ কোনোদিন বলেনি, যেতে যেতে অকস্মাৎ ফিরে আসতে পারি।
কতদূর যাবে আর পথ-যতদূর যেতে পারে পাখি
তারা ফিরে যেতে যেতে বিদায়কে মৃত্যু ভেবেছে
আর তার আড়ম্বর অন্ত্যেষ্টি সযতœ সাজিয়েছে।
আমি সেসব দিনে বিদায়কে ভেবেছি সাঁকো
যেতে যেতে নিশ্চিত পারাপার হবে।
পদ্মানগর
দেহের সামনে পদ্মানগর-
সন্ধ্যা নামলেই প্রায়ান্ধ অন্তঃপুরে গৃহবাসনার মতো জ্বলে ওঠে। ক্রমাগত অনাগত দিক ও উলম্ব ইশারাপথে একাগ্র নিবেদনে ডেকে ওঠে, জলে চরে খাদে এই যে অন্তঃপুরের দরিয়ানগর, মধ্যরাতের দুর্বিনীত বিনয়ের মতো চকচকে চোখের প্রান্তরে যুক্ত হচ্ছে নরম মোমের মতো অনুক্ত আগুনপাঠ, দাহ্য ও দহন, পিপাসা ও প্রাপক এবং আধুনিক প্রতিস্থাপন ছাড়াই আমি কি আশ্চর্য সুতোয় বাঁধা পড়ে যাচ্ছি। আর অস্তরাগের সংবেদনা শেষে জানা গেল, আগুন তার চারপাশে ধারণ করে পরিশীলিত নীল, নীলের বাক্সময় গোপন।
আর এ আগুনময় পাঠ শেষে এখন সমস্ত পরিধিজুড়ে সমস্ত নীল পুড়ে যাচ্ছে-রাত্রির নির্মলেন্দু তরল, ছাইকালো অন্তর্বাস, অন্ধকার পুড়ে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট আকার ও অবয়ব হারিয়ে প্রিয় পোশাকের মতো প্রিয় দহন উড়ে যাচ্ছে, অদৃশ্যতর-গহীন, বিলীন অথচ আগুনমোম গলিয়ে আমি একটা নদীই নির্মাণ করতে চেয়েছি। যার নাম হবে দরিয়ানগরের চোরাবালি অথবা আসঙ্গ পদ্মানগর।