নারী ও সমাজ

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

মিঠুন নন্দী

পা – ১

বেগম রোকেয়া থেকে শুরু করে অনেকেই নারী শিক্ষার কথা বলেছেন। শিক্ষাই নারীর মুক্তি। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের যে জয়গান গেয়েছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন করে আর না বললে চলে। তবে এখন সময় এসেছে নারীকে নতুন করে জাগাতে হবে। শুধু কাগজে কলমে শিক্ষায় নারী মুক্তি, এ হতে পারে  না। এ পৃথিবীতে স্ত্রী ভিন্ন কনো প্রজাতি টিকে থাকতে পারে নি। অদূর ভবিষ্যতে ও পারবেনা। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে জন্মধাত্রী জননীকে যতটা সম্ভব ততটাই ছোট করে রাখা হয়েছে। পৃথিবী দু’ভাগের ফলে যে মানবের জন্ম, কালে কালে মানুষ সেই জননীকে করেছে অপমান। তবে আজকের দিনে নারীরা অনেক এগিয়েছে। কোথাও কোথাও পুরুষের চেয়ে তাঁরা অনেক বেশি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। তারপরও আধুনিক বিশ্বে নারী মুক্তির জন্য সংগ্রাম করতে হয়। যতটা হবার হয়েছে, এখন নতুন জাগরণ দরকার। নতুন করে ভাবতে হবে, আমরা তাদের মুক্তির ব্যাপারে যা বলছি ও করছি তাতে কতোটা কাজ হচ্ছে। এই যে শিক্ষা ব্যবস্থা তাতে নারীর মুক্তি কতটা? এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের ধংস করেছে। প্রতি বছর কেউ না কেউ এর দ্বারা  প্রভাবিত হচ্ছে। আচ্ছা আমরা নারী মুক্তির কথা কেনো বলি! মানুষের মুক্তি হতে পারত। ও আচ্ছা মানুষ বললে বুঝতে অসুবিধা হবে। নারী মানুষ নয় ওটা নারী মুক্তি। পুরুষ মানুষ বললে যতটা মানুষ মানুষ মনে হয়, কথাটা নারী দিয়ে বললে ততটা মানুষ মানুষ ভাব থাকে না। যদি নারী মানুষের মুক্তি কথাটা প্রচলিত হতো তবে নারী মানুষ হয়ে যেতো অনেক আগেই। যুগে যুগে তাদের জন্য যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, আজকের যুগে নারী মুক্তি, নারীর ক্ষমতায়নের নামে আমরা যে পথে আগাচ্ছি, এমন দিন আর বেশি দূরে নয় যখন ভূমি আর কৃষকের মধ্যে ফসলের বন্টন নিয়ে মতান্তর হবে। এই পৃথিবী আসলে নারী ও পুরুষে ভরে উঠতে চায়ছে। কিন্তু কেউ মানুষ হতে চায়ছে না। যারা আমাকে এতো সময় নারীবিদ্বেষী ভাবছেন তাদের বলছি আমি পুরুষবিদ্বেষীও। আসলে বলতে চাইছি আমরা কেউ নারী বা পুরুষ নই। আমরা শুধুমাত্র একজন মানুষ। ওগুলো প্রতীক। কে ফসল ফলায় আর কে তা বুকে ধারণ করে এর থেকেও বড় বিষয় মানুষ হিসেবে আমরা কি রেখে যাচ্ছি! যে সামাজিক ব্যবস্থা, যে পারিবারিক কাঠামো আর যে শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা রেখে যাচ্ছি সেখানে নারী পুরুষ ছাপিয়ে মানুষ হবার কোন পথ আছে !

পা – ২

আচ্ছা আপনার কম বয়সি মেয়ে কথা শোনে না, অবাধ্য, বেপরোয়া! আপনার বোন বদমেজাজী! পাশের বাড়ির মেয়েটা, বউটা খুব খারাপ, ঝগড়াটে, পেটে পেটে হিংসে ভরা! যাকে বিয়ে করে সংসার করছেন, দিনে দিনে সে তার আসল রূপ দেখাচ্ছে। সংসারে শান্তি আর থাকে না। অথচ একটু বড় হয়ে উঠলে মেয়ে আর মেয়ে থাকে না। কিছু ঘটলেই নারী নির্যাতন। আচ্ছা মেয়ে নারী হয় কখন! সমবয়সী মেয়ে, কখনো কখনো সম্পর্কের সূত্র ধরে আপনার আন্টি হতে পারে। তবে তার  চিন্তার প্রসার কি আপনার চেয়ে বেশি হবে। সমাজ বলে মেয়েরা সবকিছু দ্রুত মানিয়ে নেয়। আসলে এই বাড়তি দায়িত্ব তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। যে বোনটা বোকামির জন্য দিনরাত আপনার গালি খেত, বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর হয়তো আপনার বয়সি কেউ তাকে আন্টি বলে।

গায় গতরে একটু হলো দু-চারটে কাপড়-চোপড় আর থালা-বাটি ধুতে শিখতে না শিখতে কত কু-নজর এড়িয়ে সৎ পাত্রে কন্যাদান করা যখন পিতার ধর্ম তখন মেয়ে মানুষ হলো না নারী হলো এ ভাবার সময় অনেকের নেই। আমি বলছি না সবাই এটাই করে, যে পরিবারে মেয়ে মানুষ হয় সেই পরিবারে পুরুষও মানুষ হয়। আসলে পরিবারতন্ত্র আজকে মানুষ হবার ভার বহন করছে। কলেজে উঠে শুনেছিলাম, কে কোন পরিবার থেকে এসেছো তা তার আচরণে প্রকাশ পাবে। স্কুলে দুষ্টামি করলে শুনতে হয়, তোমার মা-বাবা কোনো শিক্ষা দেয়নি! আরও  ছোটবেলায়; বাবুটা অনেক দুষ্ট একটুও কথা শোনে না। ওদিকে এই দূর মূল্যের বাজারে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত। ঘরে ফিরে দুচোখ লেগে আসে। কে শেখাবে এসব? আমি দেখেছি অনেক পরিবারেই এটা মনে করে বিদ্যালয় হলো মানুষ গড়ার হাতিয়ার,  তাহলে সেখান থেকে কেন বাচ্চারা লেখা পড়া ছাড়া আর কিছু শিখবে না! ওদিকে শিক্ষকদের নাভিশ্বাস উঠে যায় সময়মতো পাঠ্যক্রম শেষ করতে। শিক্ষা আজ বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে। পুঁজিবাদের এ যুগে সবারই টাকা চায়। নিজের শিক্ষার্থীকে নম্বর বেশি দিয়ে দু’পয়সা বাড়তি হলে কে তা হেলায় হারাতে চায়? মহান যে পেশা মানুষ তেরি করতো, সেখানে এখন টাকার খেলা। আচ্ছা আপনার কি একবারও মনে হয় না, ডিজিটাল যুগে ছেলে মেয়েগুলো মানুষ না হয়ে যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাদের কাছে কি মানবিকতা আশা করেন? আজকের সমাজে ছেলে মেয়েদের পক্ষে একা একা মানুষ হয়ে ওঠা কঠিন হয়ে যাচ্ছে !

মন্তব্য: