‘সকালের রোদজুড়ে ছড়িয়ে আছে আমার মা আর বাবা।’ ‘রেলগাড়ি যতক্ষণ চলবে, পুরাতন রেললাইনের পাতের ওপর লাল রঙের পতাকা সৃষ্টি হবে। এই পতাকার ওপর একদিন বিপ্লব হবে।’ ‘ভালোবাসা আসলে একশ কুকুরের একত্রে গোঙানির শব্দের চেয়ে ভয়াবহ।’ ‘সবাই ভাঙা বাড়ির দেওয়াল মনে করে অন্যের বুকে পেরেক মারে।’
পাঠক শব্দকে অজানায় ছুঁড়ে দেওয়া গুলিকে ভাববেন কিংবা গুলিবিদ্ধ পাখির মতো ছটফট করবেন। অথবা পোড় খাওয়া কোন পুরুষ বা রমনী প্রশমনের স্বাদ পাবেন তবেই না কবিতা। কবিতা ফুটতে থাকা ভাতের মতো। আর যিনি সেই ভাতের আয়ু মাপবেন, তাকে ঐশ্বরিক চোখের সাথে চোখ মেলাতে হয়। কোন বয়সের গণ্ডিতে এই ফ্রেম মাপার দরকার পড়ে না।
বাংলা কবিতায় একুশ শতকের তৃতীয় দশক এগোচ্ছে কু ঝিক ঝিক গতিতে। কবিতার মোচড় শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় দশকের মাঝগাঙে। যারা দুই দশ এক গুনছেন কবিতার পরিক্রমায় তাদের হাতেই মোচড়ের পূর্ণতা পাবে। স্বীকার আপনি করেন বা নাই করেন।
রাফাতুল আরাফাত। এই সময়ে দাঁড়িয়ে আপনার মনে হবে এইটুকুন একটা ছেলে! কবিতার কী পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ তার! আবার কবিতার গলিতে দক্ষ পথিক! তিনি ভাবাতে সক্ষম। আবার ভাবনাতেও দারুণ পরিপাটি। সেইহেতু রাফাতুল আরাফাত এই ক্ষুদ্র বয়সেও আপাদমস্তক কবি…
‘ভাঙা বাড়ির দেওয়াল’ রাফাতুল আরাফাতের প্রথম কবিতার বই। অনেক নিকট থেকে আরাফাতকে চেনা। দেওয়ালের প্রতিটি ইটেই আমার চোখ পড়েছে। তাই ‘ভাঙা বাড়ির দেওয়াল’ এর ভেতরও আমার চেনা। বস্তুকে পারসোনাফাইড করাটা আরাফাতের বড় শক্তি। ‘Abstract thinking’ আর ‘Irony’ ইংরেজি সাহিত্যের শক্তিশালী টার্ম। এই দুটো টার্মকে রাফাতুল আরাফাত যেন আপন মহিমায় প্রয়োগ করেছেন। অপরদিকে ব্যাক্তিনামের প্রয়োগ ভাবনার বৃত্তকে আরো প্রসারিত করেছে। এক একটি নাম এক একটি ম্যাজিক। মনোহারী বৈচিত্রে কবি রাফাতুল আরাফাতের আবির্ভাব। তার উপর বিশ্বস্ত ভরসা করাই যাই…
শিকদার ওয়ালিউজ্জামান, সম্পাদক, সপ্তক।