তুষার প্রসূন – এর কবিতা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

ভাবনাগুচ্ছ 

এক.

ধুলোর ভ্রুণ পড়ে ছিলো। একটু বাতাস বয়ে নিয়ে এসেছিলো আরো আরো ধুলোর আওয়াজ। একটু সময় জমাট বেধে পাথর হয়ে গিয়েছিলো। শুধু আমার দৃষ্টি ছিলো না বলে, বিবর্তন ধীরলয়ে এগিয়ে যায় বলে পাথরটি ধুলো আর সময়ের উৎসাহে হয়ে গিয়েছিল পাহাড়। যদি বিশ্বাস না হয় নিজেকে জিজ্ঞেস করো- কিভাবে বড়ো হলে?

দুই.

মেঘকে ইশারা করলে মাথার উপর আকাশ এসে দাঁড়ায়। বৃষ্টিকে ডাক দিলে মেঘের টুকরো দূরে পালায়। রোদ চাইলে সূর্য মেলে ধরে আলোকিত চিঠি। তোমাকে ডাকলে আবারও আকাশ এসে দাঁড়ায়। আকাশকে ডাকলে সে চুপ করে মাথার উপর ঝুঁকে থাকে পৃথিবীর ছাদ হয়ে।

তিন.

ছুঁতে গেলে দিতে হয় নিবিড় স্পর্শ, হাতের আঙুল, শরীরের প্রত্যঙ্গবিশেষ। ক্রমশ প্রকাশ পায় তুমি আমার বিপরীত মেরুতে আমারই নিবিড় অনুকরণ। আমাদের জন্য আমরা কখনও অপেক্ষা করিনা। ঈশ্বর কেন প্রতিদিন আমাদের ক্লাসরুটিন সেলাই করেন?

চার.

রাখালের জন্যে আজ আর কোন অপেক্ষা নেই। বাঁশির জন্য আছে পিছুটান। সুতোর দোকানে রাখাল এলে হেসে ওঠে ঘুড়ির লাটাই। আবশ্যিক বিষয় নিয়ে তুমি যতটুকুই পড়ো, পাঠ্যক্রমে ফিরে আসার কোন সিলেবাস নেই। ঘুড়ি একবারই সুতো কেটে উড়ে যায়। ফিরে আসতে চাইলে অবাক হবে পৃথিবীর সবাই। 

পাঁচ.

গাছের নিজস্ব কোন আদালত নেই ফলে তোমারা ঘরে তুলে নিচ্ছে বেআইনি আসবাব। মনের ভেতর আরেক মরুর বিরানভূমি। ঋণ শোধ করতে আমি লতাপাতার শিরায় শিরায় রক্ত ঢালি। মৃত গাছ, মৃত নদী ফলে শান বাধানো শহরে ভিড়েছে পাথরের জাহাজ।

ছয়.

বন্ধুরা সব অপেক্ষা করে আছে। যেতে হবে। ম্যাগাজিনে লিখতে হবে ডাকপিওনের মৃত্যুর পর মানুষের আঙুলে কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এসএমএস ভাইরাস। এখন মানুষের স্পাইনালকড ধনুকের মতো বাঁকা। নিঃসঙ্গ হবার আগে সাময়িক বন্ধুদের ফেলে চলে যাবো পুরনো বন্ধুদের কাছে। সেই অগণিত বন্ধুদের ভিড়ে কোন প্রতারণা নেই। আহবানই সেখানকার  একমাত্র ক্ষুদেবার্তা।

সাত.

হাসপাতালে ঢুকতে কোন কলিংবেল লাগে না। ব্যাথা নিয়ে জেগে থাকে করিডোর, ব্যালকনি, সুখীর অসুখ, নার্সের ব্যাকুলতা অর্থাৎ ব্যাথা মানেই একটি কলিংবেলের ইশারা। যারা হাসপাতালের বাইরে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে বসে থাকে, তাদের ঘড়ি ভারি হয়ে যায়, ব্যাথা বাড়ে। ঈশ্বরকে নার্স বানিয়ে প্রতিদিন যদি অসুখ বাড়ানো যেতো!

আট.

তোমার সাজানো ডাকটিকিটে জমে থাকা কথাগুলো নতুন করে পড়তে দিও। সেইসাথে পাঠিয়ে দিও না বলা কথার খয়েরী খাম আর তোমার মুখের আদলে গড়া দু’চারটে কথা, চোখের ইশারা দিয়ে আঁকা ছায়াছবি। বুকের মাঝখানে জমে থাকা গোপনবার্তা ফুটনোটে সাজিয়ে দিও। পুরোনো মিউজিকগুলো সাইলেণ্ট জোনে রেখো, ঠিকই শুনে নেবো। একা হবার পর তোমাকে আমি একা করে ফেলবো…

নয়.

ফাঁকা ক্লাসরুমে শিক্ষক নেই অথচ বøাকবোর্ডে সক্রেটিস প্লেটো এরিস্টটল সবাই সবার তত্ত্ব নিয়ে ব্যস্ত। আইস্টাইন আর রবীন্দ্রনাথ এক কোনায় বসে গল্প করছেন । নিউটন  কি যেন আবারও কুড়িয়ে ফিরছেন সারা বিদ্যালয় জুড়ে। গ্রামোফোনে ভেসে আসছে মরিচাধরা গান। শিক্ষকবিহীন ক্লাসরুমে আমি তাদের সবাইকে বুঝিয়ে বলেছি, আপাতত চুপ থাকুন, আমার জামার একটি বোতাম খুলে গ্যাছে। ইণ্টরভিউ বোর্ডে পৌঁছাতে হবে। সে পর্যন্ত সূচ-ই আমার একমাত্র শিক্ষক। 

দশ.

যদি আমার দেহের কেন্দ্রে রাখো তোমার গোপনীয়তা সেখানেও রাখা আছে কিছু অভিযোগ। আমার প্রতিটি চুমুতে তৃষ্ণার জন্মইতিহাস লেখা থাকে। কখনও শরীরজুড়ে ঝড় এলে জন্ম হতে পারে নতুন কোন সকাল। যদি স্পন্দন টের পাও বুঝবে বেঁচে থাকা মানে দেয়াল ভেঙে এগিয়ে যাওয়া তোমার দিকে। ‘তোমার কাছে’ এই অসমাপ্ত বাক্যটি আমার কাছে এখনও আপেক্ষিক।

মন্তব্য: