ফিরছি সেই পূর্ব পুরুষের কাছেই!

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

এম মনির-উজ-জামান

কবেকার কোন এক লাইনম্যান-তার নিজের অপমানবোধ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে গেল। তারপর বাঙালি সভ্যতার পাড়ায় বারবার পথ হারালো। সৎ মানুষের স্বপ্নের ভিত নড়ে উঠলো। বিশাল বটবৃক্ষের ছায়ার মত আস্থা রাখার বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজে পেল না আর। 

গ্রাম্য বধূ তার ভেতরের কৌতূহল আর দমিয়ে রাখতে পারলো না। গভীর রাতে তাই পাশে শুয়ে থাকা স্বামীকে কনুই দিয়ে খুঁচিয়ে জানতে চাইলো- লোকে যে এত পাওয়ার (Power) পাওয়ার কয় আসলে পাওয়ার জিনিসটা কি? লাইনম্যান স্বামী তার বউয়ের এমন আনাড়ী মার্কা প্রশ্নে অবাক হয় ভারি। কি ব্যাপার কওতো! কিন্তু বউ বলে কথা। বউকে কাছে টেনে বললো, নেও এখন শুয়ে পড়। সকালে ভাবা যাবেনে পাওয়ারের ছাঁইগুষ্ঠি। কিছুতেই ঘুম আসে না বউয়ের। এপাশ-ওপাশ করতেই ভোর হয়ে আসে। নাম না জানা কি একটি পাখি ট্যুই ট্যুই করে লেবু গাছটায় ডেকে চলে ক্লান্তিহীন অবিরাম। খানিকটা এপাশ-ওপাশ করে উঠে পড়ে বিছনা ছেড়ে। লাইনম্যান আর তার বউ সাত সকালে গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামের পথে হাঁটছে। রেল লাইনের ধারে এসে থামলো দু’জন। স্বামী স্ত্রীকে বললো, দাঁড়াও ট্রেন আসুক আগে ব্যাপারটা তারপর বুঝতে পারবে খোলাখুলিভাবে। বউ হতাশ চোখে তাকায় এ কি! জানতে চাইলাম পাওয়ার কি আর আমাকে মাইল দু’হাটিয়ে এখন বলছো ট্রেন আসুক! স্বামী ট্রেন থামানোর একটা মন্ত্রসহকারে চৌকো লাল কাপড় উঁচিয়ে ধরলে-ট্রেনটি ঘড় ঘড় একটা ধাতব শব্দ তুলে থেমে যায় কাছে পিঠে। নিশ্চয় কোনো গন্ডগোল আছে। গার্ড সাহেব নেমে আসে। লাইনে কি কোনো গন্ডগোল আছে? একবার! দু’বার! তিনবার! কিন্তু না! লাইনম্যান তার কোনই উত্তর করে না। বুঝতে পারে লাইনে না আসলে গন্ডগোল লাইনম্যানের মাথায়। পরে আর একটা সুর তুলে ট্রেন যেতে থাকে গন্তব্যের আশায়। বউ বেশ অবাক হয়। এ কি! এর কি মানে ? এটাই তো তোমার পাওয়ার। তাহলে তোমার আর দেখালাম কি? ওই যে আমি ট্রেন থামালাম ওটা হচ্ছে আমার পাওয়ার আর গার্ড সাহেব আমার গালে ঠাস করে চড় মারলেন ওঠা উনার পাওয়ার। তারপর দাঁত কেলিয়ে হি-হি মার্কা হাসি দিলো ওই লাইনম্যান। 

আরাফাতের ময়দানের আদলে নবগঙ্গার পাড়ে দু’গ্রামের মানুষ অতি উৎসাহে ভীড়জমায় অতি। ’৯৩ সালের মাঝামাঝি সময়। আসন্ন ঈদ। কিন্তু সে ঈদের আনন্দ ছাপিয়ে ওঠে নতুন এক আনন্দে। সে সুখের হাওয়া নবগঙ্গার পাড় বেয়ে সাগরে মিশে যায় কিছু। উপস্থিত পারলা-পারনান্দুয়ালীর সংগ্রামী জনতার হাতে লাঠি, ছ্যান, রামদা, সড়কী বল্লম আরও নাম না জানা প্রাগৈতিহাসিক সব যোদ্ধাস্ত্র। ইতিহাসের পাতা ফৎ ফৎ করে উল্টে পেছনে যেতে থাকে। একের পর এক। ১৯৭১, ১৯৩৯, ১৯১৪। একটু জিড়িয়ে তারপর উনবিংশ শতাব্দী, অষ্টাদশ শতাব্দী, সপ্তদশ শতাব্দী পরে ষোড়শ শতাব্দী পেরিয়ে অবশেষে সেই ষষ্ট শতাব্দী। মানে আইয়ামে জাহেলিয়া যুগ। পৃথিবীর সমস্ত খেলার আনন্দ তখন জমতে থাকে। কোনো পরাজয় নেই। শুধুই জয় আর জয়। পৃথিবীর সমস্ত আনন্দ তখন ¤øান। কেউ জানে না খেলা শুরুটা কাকে নিয়ে। কে করলো শুরু !! এমনি ছিল খেলাটা !! আহতের সংখ্যাা যত বাড়ে আনন্দও যেন তত! এ গ্রামের দু’জন আহত হলে অন্য গ্রামের তিনজন। তারপর পুনর্বার প্রতিশোধ নেয় তারাও। এভাবে দিন সপ্তাহ বছর। জীবনের শব্দকোষ থেকে মুছে যায় এক শব্দ যার নাম “পরাজয়”। দু’বার লেখা হয়ে যায় “জয়” শব্দটি। পাশাপাশি কিছু মৃত- ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কপালে দ্রæত দুর্ভাবনার চাষ হতে থাকে। তাদের বুকের ভেতর আর অগণিত সাধারণ মানুষের আগামী ভাবনায় কেবলই একটা নতুন ইতিহাস মোচড় কাটে। ক্রমশঃ আমরা ফিরে যাচ্ছি আমাদের পুর্ব পুরুষের কাছে! 

মন্তব্য: