সেলফিস এবং সমাজের যত মুখ ও মুখোশ

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

এম মনির-উজ-জামান

সেলফিস নাম্বার ওয়ান- দুই বান্ধবী পরীক্ষায় বসেছে। আজ তাদের ইংলিশ পরীক্ষা। একটু পর পর পেছনের শিক্ষার্থী সামনের জনকে বলছে আহা বলই না; স্বার্থপরের ইংরেজিটা কী? কিন্তু কিছুতেই সামনের জন উত্তরটা বলে দিচ্ছে না, বার বার অজুহাত দেখাচ্ছে। একরকম ব্যর্থ হয়েই পেছনের বান্ধবী বলে বসলো হুম বুঝেছি, তুমি দেখছি ভীষণ সেলফিস।

সেলফিস নাম্বার টু- একটা মা মাছ তার পোনাকে বলছে; কী ব্যাপার তোমার মন মরা দেখছি; ঘটনাটা কী একটু খুলে বলবে? সেই সকাল থেকেই দেখা যাচ্ছে তুমি যেন বিমর্ষ চিত্তে ঘোরাঘুরি করছো! না, তেমন কিছু না; মনটা একটু ভালো নেই এই আর কী।

কেন; কী হয়েছে, বলবে আমাকে একটু?

মানে এই বলছিলাম; মানুষের জীবন কতই না সুন্দর। দেখ ওদের ছেলে মেয়েতে মিলে পানিতে কী সুন্দর ঝাপাঝাপি করছে; আবার ডাঙাতেও দেখ কতই না খেলাধুলা করছে। আমাদের বেলায় যা কিছু করবে তা’ এই পানিতেই শুধু! তাই বলছিলাম মা আমি কী ডাঙায় যেয়ে মানুষের ছেলেমেয়েদের মতো একটু খেলার চেষ্টা করতে পারি?

না বাছা; না! তুমি এটা কিছুতেই করতে পারো না।

কেন মা?

শোনো বাছা; আমরা হচ্ছি ফিস তাই আমরা শুধু পানিতেই থাকি। আর ওরা হচ্ছে সেলফিস তাই ওরা সব জায়গাতেই থাকে। গাছেরটাও খাবে আবার তলারটাও কুড়াবে; ওরা যে সেলফিস, এটা ওদেরই মানায়। ওরা নিজেদের আশরাফুল মখলুকাত বললেও আদতে মুখোশপরা পিশাচ বৈ তো নয়। এদের থেকে সব সময় দূরে থাকবে। ওদের নকল করার একদমই চেষ্টা করবে না।

“ডোরা কাঁটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়/ বাতাসের বেগ দেখে মেঘ চেনা যায়/ মুখ ঢাকা মুখোশের এই দুনিয়ায় মানুষকে কী দেখে চিনবে বলো/ মানুষকে কী দেখে চিনবে বলো?”

আধুনিক কবিতার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একে বুঝতে পারা না পারার ভেতর আর এর সৌন্দর্যই হচ্ছে এর রহস্যময়তা। তাই “বহুরূপী সেজে কেউ জিতে নেয় বাজি কেউ তবু বোঝেনারে সেই কারসাজি”। অর্থাৎ রহস্যময়তা শুধু আধুনিক কবিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি সেটা সংক্রামক হয়েছে আধুনিক মানুষের মাঝেও। মুখোশ পরে এই রহস্যময়তা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। চারপাশেই রাজা-বাদশা আর স্মার্টনেসে ভরা কিন্তু সে কেবল পোশাকে আর মুখোশে। এটা খুললেই এ্যাক থু। যা’চ্ছে তাই কি বিচ্ছিরি। মানে বাইরে হরিনাম কিন্তু ভেতরে ডাস্টবিন আর কি। তাই বলছিলাম, বানর পরেছে আজ বুদ্ধিজীবির মুখোশ। কলার কাঁদিতে যারা দেশ ছেড়ে দেশান্তর।

একটি কাক; দু’টি কাক তারপর অ-নে-ক অ-নে-ক কাক। কাক কেন কালো প্রশ্নটা আমি কাককেই করতে চেয়েছিলাম। আমাদের চারপাশেই কালো আর কালো; এতো কালো কিন্তু কেন! জানলার ওপাশ ঘেষে হেঁটে যাচ্ছে এক পথ শিশু। বাঘ পালানো এই মাঘের শীতেও তার গায়ে ফিনফিনে এক চিলতে টি শার্ট! এই ছেলেটির কাছে আমার কিছু জানার ছিলো; এই তোমার কী শীত করে না! তার আগেই সে আড়াল হয়ে যায়। প্রশ্নটা আর করা হলো না তাকে। কত প্রশ্নই মনে জাগে; তা আর করা হয়ে ওঠে কই। কত দ্বিধা আর দ্বন্দ্ব নিয়েই আমাদের এই জীবনটা কাটিয়ে দিতে হয়; তার ইয়ত্তা নেই।

ইচ্ছেই হোক আর অনিচ্ছেই হোক আমরা এমন একটা যুগে প্রবেশ করেছি; যেখানে কনশাস মহলেও আর সেলফ সেন্সরশীপ নেই বললেই চলে! পরিচিত একজন চিড়িয়াখানায় গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ স্টাইল সহকারে একটা পোস্ট দেয় আমি এখন চিড়িয়াখানায়। এটা দেখে কমেন্ট বক্সে আমার এটা লিখতে মন চাইলো- ভা’য়া বুঝলাম সব কিন্তু চিড়িয়াটা কে? এতো এতো আদিখ্যেতা, এতো এতো মুখোশ আর তোষামোদি দেখে মনের মাঝে আজ এটাই উঁকি দেয় দুনিয়াতে এসে কত লাকসাম আর কতই না লালবাতি দেখলাম।

আমার এমন ভাবনায় আমার এক বন্ধু বলে বসলো-

দুনিয়াতে আসলাম বটে’

এসে ঘোড়াও দেখলাম

ঘোড়ার ইয়েও দেখলাম!

কেউ একজন ময়না পাখিটি দেখিয়ে বললো, যাও এর সাথে কথা বলো; এটা খুব বুদ্ধিমান পাখি। পাখিটির সাথে অনেক কথাই হলো। আমি জানতে চাইলাম তার নাম।

সে বললো ময়না।

আমি বলতে চেয়েছিলাম এটাতো তোমাদের নাম। তোমার নাম বলো; বলা হলো না। তবে তার কথায় আমি চমৎকৃত হয়ে বলেছিলাম; তুমি আমার কাছে কিছু চাইতে পারো। পাখিটি সাত-পাঁচ না ভেবে একবারে বলে বসলো, মুক্তি- মুক্তি চাই বন্ধু, মুক্তি চাই! মুক্তি পেলেই সবচে খুশি হবো বন্ধু।

মুক্তি! মুক্তিতো আমরাও চাই। আমাদেরইতো বেশী প্রয়োজন আজ মুক্তির। বিশেষ করে এই মুখোশপরা সমাজ থেকে, মুক্তি চাই; মুক্তি চাই এই ফেইসবুক চক্কর থেকেও।

মন্তব্য: