মাগুরার সাহিত্যের কাগজ প্রসঙ্গ: সপ্তক সাহিত্য চক্র’ লিটলম্যাগ আন্দোলন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

শিকদার ওয়ালিউজ্জামান

মাগুরার বিশ শতকের সাহিত্যসমাচার

চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাট এর দশকে কাজী কাদের নেওয়াজ, সৈয়দ আলী আহসান, সৈয়দ আলী আশরাফ, আজিজুল হক, ফররুখ আহমদ, ডাঃ লুৎফর রহমান,  গোলাম রসুল, আফসার উদ্দীন এর পদচারণায় মাগুরা সমৃদ্ধ হলেও তেমন কোন সাহিত্য আড্ডা বা সাহিত্যের ছোট কাগজ প্রকাশ সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত নই। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে সমস্ত ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো সেগুলোই সাহিত্যকর্ম প্রকাশের পরিচায়ক। তৎকালীন সময়ে মাগুরা এজি একাডেমী’র প্রধান শিক্ষক খান জিয়াউল হক সাহিত্যের বিকাশ ও শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। আবৃত্তিকার হিসাবে তিনি সৃষ্টি করেছেন অনেক গুণী আবৃত্তিকারের। 

সাত ও আট এর দশকে এক ঝাঁক লেখিয়ে মাগুরার সাহিত্যাঙ্গনে উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের সূচনা করেন। করিম চিশতি, গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনী, চণ্ডি প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, বি. এম. এ হালিম, মিয়া ওয়াহিদ কামাল বাবলু, রোমিও জালালি, বিবেকানন্দ মজুমদার, বিকাশ মজুমদার, ভোলানাথ সিকদার, সুশীল কুমার শিকদার, দাউদ হোসেন, জহুরুল ইসলাম, পরিতোষ দত্ত, সিরাজুল করিম, কিশোর গোলদার, ডা. নাসিরুল ইসলাম, তপন কুমার তপু, এম এ হাকিম, গোলাম মোহাম্মদ প্রমুখ এ সময়ে সাহিত্য চর্চা করেন। ১৯৭৫ সালে গড়ে ওঠে নবগঙ্গা সাহিত্য গোষ্ঠী। পরবর্তিতে জেলা সাহিত্য পরিষদ, জাতীয় সাহিত্য পরিষদ(মাগুরা শাখা), লুৎফর রহমান একাডেমী’র আত্নপ্রকাশ ঘটে। এ সময় থেকে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে বিভিন্ন কলেবরে। বি এম এ হালিম সম্পাদনা করেন ‘নবগঙ্গা’ । ‘নবগঙ্গা’র নয়টি সংখ্যা সম্পাদনা করেন ঔপন্যাসিক দাউদ হোসেন। বি এম এ হালিম এখনও অনিয়মিতভাবে কাগজটি প্রকাশ করছেন। ১৯৭৭ সালে অনিল দে মনি ‘বর্ণালী’ সম্পাদনা করেন। ১৯৭৯ সালে সাইফুজ্জামান (রোমিও জালালী) কবি কাদের নওয়াজ এর নামে কাদের নওয়াজ সাহিত্য সংসদ (কানসাস) প্রতিষ্ঠা করেন। রোমিও জালালী ‘শব্দ’ নামে একটি কাগজ করেন। লিমা নাসরিন(তসলিমা নাসরিন), আবু হাসান শাহরিয়ার, শহীদুল্লাহ সিরাজী, প্রবীর শিকদার সুজন, সুবল বিশ্বাস, এম এম তারিক, মিনার মাহমুদসহ মাগুরার বাইরের অনেক লেখক ‘শব্দ’ পত্রিকায় লিখতেন। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয় কবিতাপত্র ‘আমরা বারোজন’। দাউদ হোসেন এর সম্পাদনায় ১৯৮৭ সালে ‘সময়’, ১৯৮৯ সালে ‘অনুপ্রাস’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। ‘ঈক্ষণ’ নামে একটি কাগজ সম্পাদনা করেন শামসুজ্জামান পান্না। ছয় সংখ্যার পর বর্ধিত কলেবরে ‘ঈক্ষণ’ সম্পাদনা করেন রোমিও জালালী। আট এর দশকে আরো কিছু কাগজের মধ্যে রয়েছে সুশীল শিকদার সম্পাদিত ‘অনাদৃতা’, রফিকুল ইসলাম সম্পাদিত ‘চেতনা’, মাসুদুর রহমান সম্পাদিত ‘হাতিয়ার’, মিয়া ওয়াহিদ কামালু সম্পাদিত ‘জীবন আজীবন’ ও রোস্তম মল্লিক সম্পাদিত ‘প্রভাতি’ ও ‘চয়ন’। নবগঙ্গা সাহিত্য গোষ্ঠি ‘উদীচী’ নামে আরো একটি সাহিত্যের কাগজ করতো। এগুলোর সম্পাদনা করেন ভোলানাথ শিকদার, বিশ্বাস স্বপন ও রূপক আইচ। আশির দশকের শেষের দিকে দাউদ হোসেন, ইব্রাহিম আলী মোনাল, কিশোর কুমার গোলদার প্রতিষ্ঠা করেন ‘অনুপ্রাস’। ১৯৯১ সালে জেলার সকল সাহিত্য সংগঠন ভেঙ্গে ‘জেলা সাহিত্য নিকেতন’ আত্নপ্রকাশ করলেও বেশিদিন টেকেনি। এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন আমির হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইব্রাহিম আলী মোনাল। 

নব্বইয়ে নির্মাণ সাহিত্য সংসদ, কাদের নেওয়াজ সাহিত্য সংসদ ও লেখক জোট সংগঠন হিসাবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করলেও বর্তমানে এদের কোনপ্রকার কর্মকা- নেই। এ সময় ইব্রাহীম আলী মোনাল, এম মনির-উজ-জামান ও সাগর জামান বেশ সক্রিয় হয়ে সাহিত্যাঙ্গনকে মুখর করে রেখেছিলেন। ইব্রাহীম আলী মোনাল সম্পাদনা করেন ‘স্রোতস্বিনী’, ’নির্মাণ’ ও ’বনফুল’। নববইয়ের শেষের দিকে নবীন ও প্রবীন কবি-সাহিত্যিকগণ জোটবদ্ধ হয়ে প্রতি শুক্রবার সাহিত্য আড্ডায় বসতেন। গড়ে ওঠে লেখক জোট। এর প্রাণবন্ত আড্ডায় বিবেকানন্দ মজুমদার, ভোলানাথ শিকদার, করিম চিশতি, শামীম খান, বীরেন মুখার্জী, তপন কুমার তপু, সুশীল শিকদার, দেওয়ান জমির উদ্দীন, অনিল দে মানি, ডা. নাসিরুল ইসলাম, কিশোর গোলদার, শাহান আরা মিশি, সাগর জামান এবং তরুণদের মধ্যে রাশেদুল ইসলাম সাজ্জাদ, সালাহ উদ্দীন আহমেদ মিল্টন, কমল হাসান, সুজিত ঘোষসহ দূর দূরান্ত থেকে আসতেন আরো অনেক কবি-সাহিত্যিক। এই আড্ডায় আমি নিয়মিত শরিক হতাম। লেখক জোট প্রকাশি করে ‘লেখক’ ও ‘শেকড়ের সন্ধানে’ দু’টি কাগজ। 

১৯৯৪ সালের ২১ ফ্রেরুয়ারি সজল প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় ‘দৃষ্টি’র প্রথম সংখ্যা। ১৯৮৯ সালে ‘অভিজ্ঞান’ সম্পাদনা করেন সাগর জামান। এ ছাড়াও তিনি ১৯৯১ থেকে সম্পাদনা করেন ‘নীল আকাশ সোনালী রোদ্র’, ‘অমল ধবল দিন’, ‘শব্দের আর্তনাদ’, ‘আলোকের এই ঝর্ণাতলে’। এ সময়ে কাজল খন্দকার সম্পাদিত ‘হিজিবিজি’, শামীম আহমেদ খান এর ‘জনক’, ‘মৌনমুখর’ ‘সশস্ত্র হবো অজস্র মৃত্যুতে’, ‘প্রতিক্রিয়া’, অলোক বোস এর ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’, সাহেব আলী সম্পাদিত ‘মুক্তি’  এবং বিবেকানন্দ মজুমদার, ইব্রাহীম আলী মোনাল, এম মনির-উজ-জামান ও ভোলানাথ সিকদারের যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘উদয়’।

একুশ শতক মাগুরা সাহিত্যের বাক বদলের কাল

১৯৯৮ সালে খন্দকার রাশিদ আশরাফ, আমি, হাফেজা আনোয়ার, রাশেদুল ইসলাম সাজ্জাদ, খন্দকার ইদ্রিস আলী, আশীষ রায়, এস এম তুষার আলমসহ আরো অনেক তরুণ সাহিত্যপ্রেমীর সমন্বয়ে গড়ে তুলি ‘অনির্বাণ সাহিত্য সংসদ’। আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘নদীপ্রবাহ’। আমরা নবীন লেখিয়েদেরকে নিয়ে আড্ডা শুরু করি। ২০০৬ সালে ‘মাগুরা সাহিত্যিক কল্যাণ পরিষদ’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মাগুরাস্থ সৈয়দ আতর আলী পাঠাগারে শুরু হয় সাহিত্য আসর। বিবেকানন্দ মজুমদার, এম এ হাকিম, পরেশ কান্তি সাহা, অমৃত বিশ্বাস, মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, দাউদ হোসেন, হাসানুজ্জামান হাসান, শাহান আরা মিশি, খান জান্নাতুল ফেরদৌস আলাপী, হাসান সাব্বির, শেখ কাজল আজাদ, আঃ রশিদ মিয়াসহ আরো অনেকেই এই আসরে আসতেন। এ সংগঠনের প্রকাশনায় ‘ঘাসফুল’ প্রকাশিত হয়। ২০০৭ সালে ‘অনির্বাণ সাহিত্য সংসদ’ পুনরায় উজ্জীবিত হয়ে নিজস্ব কার্যালয়ে প্রতি মাসের প্রথম ও তৃতীয় শুক্রবার সাহিত্য আসরের আয়োজন করে। এ সব আসরে বিকাশ মজুমদার, হাফেজা আনোয়ার, শিকদার ওয়ালিউজ্জামান, ফসিয়ার রহমান, পরেশ কান্তি সাহা, ডা. নাসিরুল ইসলাম, এম মনির-উজ-জামান, বীরেন মুখার্জী, সাগর জামান, কাব্য মোস্তফা, জিল্লুর রহমান খান, এস এম কামরুজ্জামান, সঞ্জিত বসু, কাজী সিরাজ মিহির ও হাসান সাব্বিরসহ আরো অনেকে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা নিয়ে আলোচনা করতেন। ২০০৮ এ সঞ্জিত বসু’র সম্পাদনায় ‘মাটি’ এবং জিল্লুর রহমান খান এর সম্পাদনায় ‘আঁচড়’ প্রকাশিত হয়। ২০১১ মাগুরা সাহিত্যে বৈপ্লবিক সময়। ‘সপ্তক সাহিত্য চক্র’ নতুন আঙ্গিকে মাগুরার কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, নাট্যকার ও সাহিত্যপ্রেমিদেরকে নিয়ে শুরু করে পথ চলা। ‘সপ্তক’ এর আড্ডাসমূহ সেন্টুর চায়ের দোকান, সৈয়দ আতর পাবলিক লাইব্রেরী, নোমানী ময়দান, এ জি একাডেমী স্কুল প্রাঙ্গণ, সাতদোহা আশ্রম, মাগুরা কফি হাউজ, সরকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়। ‘সপ্তক’ এর সাহিত্য আড্ডায় কবি অসীম সাহা, তপন বাগচী, ওয়ালী কিরণ, সমর চক্রবর্তীসহ আরো অনেক খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিক অংশগ্রহন করেছেন। বিকাশ মজুমদার, অনিল দে মনি, আফরোজ জাহান, নাসিরিন আনোয়ার, সাহান আরা মিশি, এম মনির উজ জামান, কাব্য মোস্তফা, শিকদার ওয়ালিউজ্জামান, তুষার প্রসূন, কমল হাসান, নাসিরুল ইসলাম, হাসান সাব্বির, নিষাদ নয়ন, রোকেয়া খাতুন, আশীষ রায়, মিরাজ হোসেন, এস এম কামরুজ্জামান, তরুণ বৈদ্য, সুদেব চক্রবর্তী, সোহেল সবুজ, সারোক শিকদার ও মিঠুন নন্দীকে গঠিত সপ্তক সাহিত্য চক্র এবং এ সংগঠন থেকে ছোট কাগজ ‘সপ্তক’ ও ‘জলসিঁড়ি’ প্রকাশিত হচ্ছে। ২০১২ সালে জলসিঁড়ি প্রথম তিন সংখ্যা শিকদার ওয়ালিউজ্জামান সম্পাদনা করার পর বর্তমানে এর সম্পাদক এম মনির উজ জামান। এ সময়ে আরো কয়েকটি কাগজের মধ্যে শামীম খান সম্পাদিত ‘চৌরঙ্গী’, অনিল দে মনি সম্পাদিত ‘সেতু’, সোহেল সবুজ সম্পাদিত ‘কবিতা এক্সপ্রেস’ ও ‘সেমিকোলন’ এবং সুদেব চক্রবর্তী সম্পাদিত ‘গেরিলা’ উল্লেখযোগ্য।

সপ্তক ও জলসিঁড়ির লিটলম্যাগ হয়ে ওঠার চেষ্টা

নির্দিষ্ট কনসেপ্ট এ লিটল ম্যাগের প্রকাশ। এখানে দ্রোহ, রাজনৈতিক একটি চেতনা, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, নিরীক্ষা থাকে এবং প্রকাশের সুযোগ করে দেয় নতুনদের। এখানে গোষ্ঠিবদ্ধতার চর্চাও থাকতে পারে। প্রত্যেকটা লিটল ম্যাগই একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর, নির্দিষ্ট চিন্তার কিছু মানুষের চেতনা নিয়ে গড়ে ওঠে। সেভাবেই তারা আবর্তিত হয়। লোক, সপ্তক, শালুক এগুলো লিটল ম্যাগ নয়, এগুলো মিডি ম্যাগ। মাগুরার যে সমস্ত কাগজ হয়েছে এগুলো কোন সময়ই লিটল ম্যাগ এর আওতায় পড়ে নি। এগুলো মূলত সাহিত্য পত্রিকা। জলসিঁড়িও তেমন একটি সাহিত্য পত্রিকা। এগুলো কিছু গদ বাঁধা নিয়মে আবর্তিত হয়েছে। মাগুরার শেকড়, মাগুরার লোকসংস্কৃতি, ঐতিহ্য কমই উঠে এসেছে এসব কাগজে। মাগুরার সাহিত্যপত্রিকাগুলো নিজস্ব ঘরানারও হয়ে ওঠে নি। মাগুরার অগ্রজ কবি-সাহিত্যিকদের সাথে অনুজদের তেমন সম্পর্ক কোনকালেই গড়ে ওঠে নি। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ আলী আহসান, ফররুখ আহমদ, আজিজুল হকের নাম অতি উজ্জ্বল। শেকড়ের সাথে হয়তো তাদের সংযোগ ছিল কিন্তু মাগুরার লিখিয়েদের সাথে সম্পর্ক ছিল খুবই কম। যোগাযোগ না থাকার কারণে সাহিত্যে সমসাময়িক হালচাল জানার সুযোগ এখানকার লিখিয়েদের খুবই কম হয়েছে। উন্নতমানের লিটল ম্যাগের সাথে পরিচয় তাদের তেমন হয় নি। মাগুরার গ-ি থেকে তারা কখনোই বের হতে পারেন নি। এখানে ছোটকাগজ কর্মীদের হয়তো উদ্দেশ্য ছিল মহৎ কিন্তু লক্ষ্য ছিল সংকীর্ণ। অনেক বছর পরে হলেও সপ্তকের মাধ্যমে মাগুরায় লিটল ম্যাগ ধারণ এসেছে। ভবিষ্যতে অনুজপ্রতিমেরা এ ধারা অব্যাহত রাখবে হয়তো। লিটল ম্যাগ ও সাহিত্য পত্রিকার মধ্যে পার্থক্য এখন বুঝতে পারছে পরের জেনারেশন। নতুন ভাবনা এনে দেওয়া এবং নতুন একটি স্বর সৃষ্টি করার মতো লিটল ম্যাগ বাংলাদেশে খুবই কম। সপ্তক লিটল ম্যাগ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে… জলসিঁড়িও সপ্তক পরিবারের আর একটি আশ্রয়।  

অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমাদের লিটল ম্যাগ চর্চা

ছোটকাগজ চর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সবসময় আমাদেরকে ভালোবেসে জড়িয়ে রাখে। সাধারণত ছোটকাগজ চর্চায় এগিয়ে আসে তরুণরা। তাদের থাকে উদ্যম কিন্তু পকেট যথেষ্ট ভারী না থাকায় দ্বারস্থ হতে হয় বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে। ‘নদীপ্রবাহ’, ‘সাহিত্য আড্ডা’ ‘জলসিঁড়ি’ ও ‘সপ্তক’ প্রকাশ করতে গিয়ে আমরা কিছু বিজ্ঞাপন পেয়েছি কিন্তু বেশীরভাগ জায়গা থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। তবে অন্যদিকে বিজ্ঞাপনদাতাদের গড়িমসিতে তরুণরা পড়ে বিপাকে। ছোটকাগজ-এর ক্রেতা সীমিত থাকায় অনেক ছোটকাগজ দু’একটি সংখ্যা প্রকাশের পর বন্ধ হয়ে যায়। এতসব প্রতিবন্ধকতা কিন্তু সপ্তক সাহিত্য চক্র’র প্রকাশনাকে বন্ধ করতে পারে নি। সপ্তক সাহিত্য চক্র’র তরুণরা কখনও নিজেদের পকেট থেকে অথবা অগ্রজ সাহিত্যিক বা সাহিত্যরসিকদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে ছোট কাগজ চর্চা এগিয়ে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ‘সপ্তক’র ৬টি সংখ্যা ও ‘জলসিঁড়ি’র ৭টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। কাগজ দু’টোতে লিখছেন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অগণিত তরুণ ও প্রবীণ লেখক। সেখানে গল্প, কবিতা, অনুবাদ, প্রবন্ধ প্রকাশ করতে পেরে দিন দিন ঋদ্ধ মাগুরার সাহিত্য অঙ্গন। আশা করছি অতীতেও যেমন মাগুরার প্রথিতযশা কবি ও সাহিত্যিক জাতীয় অঙ্গনে তাদের প্রভাব রেখেছেন  আগামীতেও সে ধারা অব্যাহত থাকবে।

সপ্তকের আদর্শ

লিটল ম্যাগাজিন আতুর ঘর থেকেই তারুণ্যের পতাকা বহন করে। নতুন এবং প্রতিশ্রুতিশীল লিখিয়েদের বিকাশের প্রথম আশ্রয়। সৎ সাহিত্যভাবনা ও সমাজ সৃষ্টির দিক-নির্দেশপত্র। লিটল ম্যাগ একটি সংগ্রাহাগার, অক্ষরের সমাবেশ আর চেতনার উন্মেষ। লিটল ম্যাগ একটি আন্দোলনের নাম। বানিজ্য চিন্তা থেকে বেরিয়ে ব্যতিক্রমী ও সৃজনশীল সপ্তক সাহিত্য চক্র নতুন নতুন প্রচেষ্টা, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে প্রকাশ করে থাকে সপ্তক ও জলসিঁড়ি। সপ্তক মাগুরায় সুস্থ সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার পথকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। নেতিবাচক গোষ্ঠিবদ্ধতা, মিডিয়াবাজি, তৈলবাজির বিরুদ্ধে সপ্তককর্মীদের কণ্ঠ সর্বদা সোচ্চার। মাগুরার যে কোন প্রান্তে নিভৃতে থাকা যে কোন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ সাহিত্যিককে মাগুরার গ-ি পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাহিত্যচর্চার স্রােতে মিলিয়ে দিতে চায় সপ্তক।  কোনপ্রকার মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সপ্তকের অবস্থান দৃঢ়। আমাদের মূলমন্ত্র আমরা বাঙালি। বাংলাকে মায়ের কোল থেকে জীবনের শেষ অবধি আমরা রক্ষাকবচ করে রাখতে চাই। সপ্তকের লক্ষ্য অটুট…

জলসিঁড়ির আদর্শ

সাহিত্যের প্রতিটি কাগজেরই একটি নির্দিষ্ট আদর্শ ও লক্ষ্য থাকা Í জরুরি বিষয়। জলসিঁড়িও সপ্তকের মতো নির্দিষ্ট আদর্শ নিয়ে এগোচ্ছে। জলসিঁড়ি তার জন্ম অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়। করছেও। জলসিঁড়ি তরুণ ও নবীন লিখিয়ের লেখা প্রকাশের একটি নির্ভরযোগ্য প্লাটফরম। তাদেরকে হাত পাকানোর পাশাপাশি নিজের পাড় ছাপিয়ে অন্য পাড় ছোঁয়ানোর কাজটিও জলসিঁড়ি করে যাচ্ছে।

মন্তব্য: