আশিষ রায়

বসবাসের দিক দিয়ে মানুষ প্রথম গুহায় থাকতে শুরু করে। গুহাচিত্রই মানুষের সর্বপ্রথম চিত্রপ্রয়াস। আলতামীরা তেমনই একটি গুহা, যেখানে শিকার ও মানুষের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। প্রতিটি মানুষই কোন না কোনভাবে চিত্রকর। ভাষাতো বটেই, বিষয়ও আলাদা হতে পারে। মাগুরা শহরেও তেমন কিছু আঁকিয়ে বা চিত্রশিল্পচর্চার মানুষের জন্ম হয়েছে। 

স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই শিল্পচর্চা করে আসছিলেন শ্রদ্ধাভাজন রতন স্যার। রতন স্যার ঘরে বসেই শিল্প আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। শিশুমনে এই চিত্র রসবোধ যুগিয়েছে। পিটিআই স্কুলের অংকন বিভাগের দায়িত্বে থাকা কিশোর গোলদার স্যার শিল্পটাকে আর একটু এগিয়ে নিজের সাহিত্যচর্চার সাথে একাকার করে দিয়েছিলেন। বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন, অনেক ছাত্র-ছাত্রী তৈরী করেছেন। তাঁর ছেলে কাজল গোলদারও আঁকিয়ে হয়ে উঠেছেন। 

রাউতড়াতে আজিজ ভাই একটি স্কুল গড়ে তুলেছেন। মাটি ও রং দু’ধরণের কাজই করে থাকেন। আর্থিক সমস্যার কারণে বেশি দূর এগোতে পারেন নি। তোতা ভাই দোকান দিয়ে ছবি আঁকতেন। তিনি ব্যবসায়ী হিসাবে ছিলেন সাইনবোর্ড লেখক। কিন্তু শিল্পবোধ থেকে মহান ব্যক্তিদের ছবি বেশি আঁকতেন। ব্যাটারীর ভেতরের কালো রং কাগজে ব্যবহার করে তিনি ভাষানীর ছবি এঁকেছিলেন।  বাবার কাছে তাঁর গল্প শুনেছি। বর্তমানে তিনি ঢাকাতে একই ব্যবসার সঙ্গে আছেন। 

প্রচরিবিমুখ আর এক গুণী শিল্পী তাপস দা। ময়মনসিংহে থাকার সুবাদে তিনি মাগুরাবাসীর কাছে অপরিচিত। 

৮০-৯০ দশকের শিল্প আন্দোলনের রূপকার ফরহাদ ভাই। মাগুরাবাসীকে সাধ্যমত দিয়েছেন। আঁকিয়ে জগতে তাঁর অবদান অতুলনীয়। ফরহাদ ভাই প্রকৃতি ও আত্মপ্রকৃতি নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ও করবার একটি জায়গা তৈরী করেছেন। ১৯৯০ সালের দিকে তাঁকে অনেক আঁকতে দেখেছি। ফরহাদ ভায়ের একটি বড় অবদান সোহেল- মাগুরার ভাস্কর্য্য শিল্পের বিশেষ একজন। ফরহাদ ভাইয়ের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও অনেক ভালো আঁকতেন। আর সোহেল পেয়েছে এ বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা। সোহেল, ফরহাদ ভাইয়ের শ্রেষ্ঠ ছাত্র। 

ভাস্কর্য্য ও প্রতিমা শিল্পী হিসেবে যে দু’জনের কথা না বললেই নয়, তারা হলেন হাদান দাদা ও জগদীশ দাদা। বাটিকাডাঙ্গা বৈদ্যবাড়ির হাদান দাদা পারিবারিকসূত্রে পাল হয়েছেন। তবে তাঁর বাবার সময় থেকে তাঁদের পরিবারে প্রতিমা তৈরী করা হয়। শিশুকাল থেকে চর্চা করতে করতে আজ তিনি অন্যতম প্রতিমা শিল্পী। ২০০৮ সালে টাঙ্গাইলে তাঁর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে আমি প্রতিমার ব্যাকগ্রাঊণ্ড করে দিয়েছিলাম। সেখানেই আমার এ পর্যন্ত আঁকা শিবের সবচেয়ে বড় অবয়ব, শিল্পের ভাষায় যাকে বলে ‘পোট্রেট’। কুষ্টিয়ার কুমরিয়ার বড় পূজার একটি ব্যাকগ্রাউণ্ড তৈরিতে তাঁর সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমার। তাঁর ‘স্বরস্বতী’ মাগুরাতে এখনো কেউ তৈরী করতে পারেনি। ২০০৭ সালের কাত্যায়নী পূজার কম্পোজিশন রং ও থিম অবাক করার মতো ছিলো। একবার ডেকোরেটিং করতে গিয়ে তিনি ২২টি অসুরকে ঠাকুরের চৌকির উপর অবস্থান করিয়েছিলেন। আজ তিনি বয়সের ভারে ন্যুহ। তবুও শিল্পবোধ ও চেতনার বলে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের অনেক জেলাতে তাঁর ভাস্কর্য্য রয়েছে যা সিমেন্ট দিয়ে তৈরী। 

জগদীশ পাল, অষ্টধাতুর মাদুলী বলা যায়। ভাস্কর্য্যে অনেক ভালো। শৈল্পিক গুণাগুণ বা ইতিহাস জানুক বা জানুক কাজ করতে পারে। Technological side very strong. Materials transformation very amusing. মাধ্যমগত জ্ঞানও রয়েছে প্রচুর।  তাঁর এ ধরণের জ্ঞান থাকার কারণ একই মিডিয়াম যা তিনি সচরাচর ব্যবহার করেন, তা নানাভাবে ব্যবহার করেন। পালদের মধ্যে তিনিই ছবিও আঁকেন। ছবি আঁকার স্কুলে কাজ করেন। ভাস্কর হিসাবে প্রচুর পোট্রেট করেছেন। ভারত থেকে কাজ শিখেছেন।  বর্তমানে তিনি প্রতিমার চেয়ে ভাস্কর্য্য করার কাজে ও ছবি আঁকার প্রতি বেশি মনোযোগী।

পান্না ভাই- ‘আল্পনা আর্ট’ নামে পরিচিত। জীবনটা বড় বড় শিল্পীদের জীবনের মতো। পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যাওয়া, অন্য দেশের শৈল্পিক জীবনের স্বাদ নেওয়া, অস্বাভাবিক জীবন-যাপন, আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়া, ছোট ভাইদের ভালো একটা জায়গা কের দেওয়ার জন্য আন্দোলন করা, ধনীদের কাছে ধন্না দেওয়া ছবি বিক্রির জন্য। সফলতা পেয়েছেন। ছবি এঁকেছেন, আঁকছেন, স্কুল করেছেন। তিনি আঁকিয়ে জীবন শুরু করেন ভারত থেকে। অনেক বছর কাটিয়েছেন ভারতে।  এক সময় মাগুরার আঁর্ট এর দোকান বলতে তাঁর দোকানকেই মানুষ বিখ্যাত জানতো। পয়েন্ট পেন দিয়ে হাতে লিখে মানপত্র তৈরি ছিল তার অদ্ভুত কাজ। ১৯৯০-৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে প্রচুর পোট্রেট করতে দেখেছি। বানিজ্যিকভাবেই তিনি এগুলো করতেন। পান্না ভাইয়ের কাজগুলো এ্যাকাডেমিক গুণসম্পন্ন ছিল। পান্না ভাইয়ের বড় সৃষ্টি বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বাপী। পান্না ভাইয়ের হাত ধরে যার আঁর্ট কলেজে গমন। পান্না ভাই ও ফরহাদ ভাইয়ের কাছে শিশু ভাইয়ের আঁকার কথা খুব শুনেছি। কোনদিন দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

সারা বাংলাদেশে বর্তমানে যে ছবি আঁকার মেলা চলছে এবং তাদের মাধ্যমে বিদেশেও যাচ্ছে শিশুরা সেই কোম্পানী ফেবার ক্যাসল। যা পথ চলা শুরু হয়েছিল মাগুরার প্রেসক্লাব থেকে। আর এর সকল কৃতীত্ব আমার বন্ধু মিজানের। কিছুকাল মিজান বেশ ছবি এঁকেছে। তবে তার দক্ষতা ছিল পেন্সিলে। ব্যাক্তিগত প্রশান্তির তাগিদেই। একবার সে পাবলিক লাইব্রেরি চত্ত্বরে প্রদর্শনীও করেছে।

বর্তমানে মাগুরার আঁকিয়েদের মধ্যে বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বাপীর  ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তিনি মাগুরা কালেক্টরেট কলেজিয়েট স্কুলের চারুকলা বিভাগের প্রধান। তার বাড়ী বর্তমান তাঁতী পাড়া। বাবা স্কুল শিক্ষক। তুলির হাত তার অতি কোমল। তাঁর কাছ থেকে রং এনে আমার প্রথম তেল রং এর ছবি আঁকা। এবং তা ছিল আত্মপ্রকৃতি। পোট্রেট করায় তিনি বেশ পারদর্শী। তবে তাকে কপিরাইট শিল্পীও বলা যায়। তেল রঙ দিয়ে ছবি আঁকতে পছন্দ করেন। তার বিখ্যাত ছবির মধ্যে রয়েছে বীথি, ম্যাডনা, মেরিলিন মনরো, ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খান, সুচিত্রা সেন প্রভৃতি। বাপী রাজশাহী থেকে পেন্টিং-এ সম্মান শেষ করে চাকুরী করতে করতে ঢাকা ইয়োডা ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাফিক্স এর উপর এমএফএ করেছে। বর্তমানে মাগুরার শিশুতোষ চিত্রকলার পুরোধা। মাগুরার সফল শিল্পীদের মধ্যে সে একজন। তার কাজ রং খুবই প্রাণবন্ত। বিমূর্ত ছবি তিনি পছন্দ করেন না। মাগুরায় অনেকের ঘরেই তাঁর আঁকা ছবি পাওয়া যাবে। বাণিজ্যের ব্যাপারে তিনি আপোষহীন। বড় বড় কাজে হাত দিতে পছন্দ করেন। এক সময় পূজার ব্যাকগ্রাউন্ড তাঁর সাথে থেকে করেছি। তিনি করতেন কপিরাইট হিটম্যান ফিগার আর আমি ইমাজিনেশান। তাঁর তুলির টান সত্যিই সুন্দর। প্রচুর রং নিয়ে কাজ করতে খুব বেশী পছন্দ করেন। 

লিয়াকত, আমার সহপাঠি মহম্মদপুর বাড়ী। সে বর্তমানে বগুড়া আর্ট কলেজে শিক্ষকতা করছে। এলাকার লোকেরাও তাঁকে চেনেনা। তবে সেও একজন পেইন্টিং শিল্পী। তবে সে জীবনে খুব কম ছবি এঁকেছে। মাগুরাতে তাঁর তেমন কোন অবদান নেই। 

ভাষ্কর্য্য শিল্পী হিসাবে সোহেল খুবই চমৎকার। রাজনৈতিক ডামাডোলে তাঁর ভাষ্কর্য মাগুরায় হয়নি। বগুড়ার ভাষ্কর্য্যটি সোহেলের করা। এটি যেমন মাগুরার গর্ব, তেমনি লজ্জারও বটে। কারণ, মাগুরার শিল্পীরা অন্য জায়গায় ভাষ্কর্য্য তৈরী করে আর এমন সব শিল্পীরা থাকতে মাগুরা শহরে কিছু নাই। সোহেলের কাষ্টিং ও কম্পোজিশান অতি সুন্দর। সোহেলের ভাষ্কর্য্যে রয়েছে সাবলীল স্টোক। এই সোহেলই ফরহাদ ভাইয়ের প্রিয় ছাত্র। যার অবদান অতুলনীয়। তবে সোহেলকে একাডেমিক শিক্ষা গ্রহণ করবার বিষয়ে উৎসাহিত করেছে লিপুর পরিবার, জয়, বাশার। সোহেল প্রতিনিয়ত তার দক্ষতা দিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছে। রাজশাহী চারুকলা থেকে ভাষ্কর্য্য বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে বর্তমানে ক্যাডেট কলেজে শিক্ষকতা করছে।

মনিরুল ইসলাম মনির, বর্তমানে সিঙ্গাপুর আর কে সিরামিক এর হয়ে সহকারী ডিজাইনার ও প্রোডাক্ট অর্গানাইজার হিসাবে আছেন। মনিরের বাড়ি শ্রীপুর থানায়, আর পড়ালেখা করেছেন রাজশাহী আর্ট কলেজে। পরীক্ষা শেষ না করায় সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারেনি। তার প্রেস প্রিন্টিং এর উপর ধারণা ভালো ছিল। পৈতৃকভাবে এ কাজটিতে সে পারদর্শী ছিল। ছবি আকার বিষয়ে সে কোন পোট্রেট করলে কমার্শিয়াল সূত্রে কাজ করত। বিশ্বজিৎ ও তার মধ্যে এখানে বেশ মিল রয়েছে। বিশ্বজিৎ একধাপ এগিয়ে কম্পাস ব্যবহার করেন ও রং এর ধারণা ভালো। তবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মনিরুল এগিয়ে গেল হঠাৎ করেই। 

বর্তমান গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে আছেন মাগুরার কয়েকজন কিন্তু ছবি আঁকার সঙ্গে সম্পৃক্ততার দিক দিয়ে দু’জন মাগুরা সদরের তাঁতীপাড়ার সেলিম ভাই, ও গোপীনাথপুরের স্বপন। আজকের নোভার টিটো গ্রাফিক্স- সে সেলিম ভাইয়ের অবদান এবং টিটো ভাই তাকে গুরু বলেন। স্বপন হঠাৎ করেই ছবি আঁকার দিকে ঝুঁকে পড়েন। তাঁর পিতা সাধারণ কৃষক। বর্তমানে তিনি ফ্যাশান ডিজাইনার হিসাবে ঢাকা কাজ করছেন। ‘সাত রং’ একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছেন। কন্ট্রাকচুয়াল প্যাসাইন ও বাংলাদেশের প্রথম সারির ফ্যাশন পত্রিকা ‘মিরর’ এর সাথেও কাজ করেন। স্বপন আল্পনা করেন অতি চমৎকার। বর্তমানে ফ্যাশন আর এ্যাড/পোস্টার নিয়ে ব্যস্ত। তার সফলতা আমাকে বেশ আপ্লত করেন। স্বপন খুলনা আর্ট কলেজ থেকে বিএফএ সম্পন্ন করে নানান কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে মাগুরা আসেন। কয়েক বছর পর ঢাকা গিয়ে ইওডা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএফএ করতে যান। কিন্তু শিক্ষা পরিকল্পনা অপছন্দ হওয়ায় ২য় বৎসর ব্যক্তিভাবেই শুরু করেন গ্রাফিক্স শেখা। বর্তমানে অনেকটাই সফল। 

মাগুরা শহরে আরো অনেকেই চিত্র চর্চা করেন এবং ব্যবসা করছেন ভালো। তারই মধ্যে রয়েছে অপূর্ব, বিপ্লব, সুজন। অপূর্ব মাগুরার টিকারবিলা গ্রামের ছেলে। প্রত্যাশা, উদ্দেশ্য ও জীবিকার জীবন পরিবর্তন করতে তিনি মাগুরা আসেন। আর তাঁর মাধ্যম ছবি আঁকা। আজ তিনি সফল। তাঁর ছবি আঁকার বিষয় ও চিন্তা-চেতনা পছন্দনীয়। অপূর্ব বাংলার সংস্কৃতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কাজ করেন- এটা খুব ভালো দিক। তিনি ঢাকার বাফা ক্যাম্পাসে কিছুদিন বিচরণ করেছেন তা খুবই পরিস্কার। তিনি মাঝে মধ্যে বলেন ছবি আঁকতে পড়তে হয় না। কিন্তু নিজেও কিছুটা পড়াশুনা করেছেন। হয়তো বলতে চেয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা এত বেশী গুরুত্বপূর্ণ নয়। ছবি আঁকা শিল্পী অপূর্ব এর জীবন বদলে দিয়েছে।

বেশ অগ্রগতির দিকে রয়েছেন বিপ্লব। সে যশোর এসএম সুলতান ফাইন আর্ট কলেজের ছাত্র। সব মাধ্যমেই কাজ করছেন। পোষাক নিয়েও ভালো কাজ করছেন, প্রতিদিন চর্চা করছেন। সাহসিকতার সাথে যে কোন মাধ্যমে নির্ভীকভাবে প্রবেশ করতে চান। তাঁর এই গুণ আমার খুবই ভালো লাগে। একটি ঘরোয়া স্টুডিও রয়েছে। তার কাজ করবার পরিবেশ আরো অনেকের জন্য উদাহরণ হবে। বিপ্লবকে মাগুরার ছোট্ট শহরে বড় করে পরিচয় করিয়ে দেবার পেছনে একটি প্রতিষ্ঠান অদ্ভুতভাবে দায়ী- পাঠশালা। পাঠশালার পরিচালক পরিবারের এ অবদান সত্যিই শ্রদ্ধেয়। বিপ্লব সবরকম ছবি আঁকতে পছন্দ করেন। রং নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন। তাঁর গতি তাঁর সমতব্যে পৌঁছবে। বিপ্লব এর পাশাপাশি ব্যবসায়িক দিক দিয়ে রয়েছেন সুজন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে একটি স্কুল করেছেন তাঁরই বাড়িতে। প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, নিজ প্রচেষ্টায় ও যাঁরা তাঁর চেয়ে ভালো আঁকেন তাদের সহযোগিতা নিয়ে যতটুকু শেখা যায়। তবে এসব বিষয় একাগ্রতার বিষয়। তাই তাঁর একাগ্রতাই তাঁকে এ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে পোস্টার বা নানা রকম ভালো লাগা ব্যক্তিদের ছবি আঁকার চেষ্টা করেছেন। 

এজাতীয় ব্যক্তি আরো রয়েছে এই শহরে। তবে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুক্তা আর্টের মালিক। যিনি আমাদের কাছে পরিচিত দুলাভাই নামে। আমি তাঁর সাথে পরিচিত হওয়ার পর অনুষ্ঠানভিত্তিক যে কোন কাজে বা জাতীয় অনুষ্ঠানে সবসময় তাঁর সার্বিক সহযোগিতা ও উৎসাহ উদ্দীপনাসহ উপস্থিতি পেয়েছি। আমি তাঁর মানসিকতার ভ‚য়সী প্রশংসা করি। ই-আর্টের ইদ্রিস ভাই, এ আর্ট এর আহমদ ভাই, জহির আর্ট এর জহির ভাই, ভায়নার মাসুদ ভাই, জেলা পাড়ার ফাইজু ভাই সাইনবোর্ড লেখালেখির পাশাপাশি ছবি আঁকাতেও বেশ ভালো অবস্থান রয়েছে মাগুরায়। জহির ভাই বিল্ডিং ওয়াল ডিজাইনের কাজও করে থাকেন। মাগুরা শহরে আরো কিছু আঁকিয়ে যেমন চা বানানো বা রিক্সা চালনার ফাঁকে ফাঁকে ছবি আঁকার চর্চা করছেন। কিন্তু জীবিকার চাপে থেকে গেছে শিল্প। 

সমাসাময়িকদের মধ্যে কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। বদ্যিবাড়ির প্রসেনজিৎ রায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের ছাপচিত্র বিষয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশুনার পাশাপাশি আঁকিয়ে হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে রীতিমত। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আমার ছাত্র পিযুষ বিশ্বাস। সে আছে চিত্রকলা বিভাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে জ্যোতি। বিষয় চিত্রকলা। উন্মুক্ত শিল্পী হিসাবে কাজ করে বেশ বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছে। 

মন্তব্য: