হুমায়ূন টাইপ ক্যাঁচাল

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

এম মনির উজ-জামান

জল চৌকির জল বিষয়টা নিয়ে ভাবছিলাম। হাড়ে-হারামীটা জলচৌকির ওপর বসে এখন খদ্দের ধরার আশায় ধ্যানে স্নান, স্নানে ভোজন অবস্থায়। একে একটা উচিৎ শিক্ষা দেয়া ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ফরজ কাজটা কী হবে সেটা এখনও ঠিক করা যাচ্ছে না; ঠিক হলেই এ্যাকশন। উজবুকটাকে টাইট দিতে ভেতরে ভেতরে চলছিলো নানা জল্পনা-কল্পনা। সমাজে একটা রেওয়াজ চালু করা যেতে পারে; এ জাতীয় লোক দেখামাত্রই ঠাঁটিয়ে গালে গোড়া-পাঁচেক চড় দেয়া। তাইবা বলি কেমনে, ফ্রির যুগে বসবাস করে এরাই বা বঞ্চিত হবে কেন? তাই ডান গালে পাঁচটা চড়-এর সাথে বাম গালে আর পাঁচটা চড় ফ্রি। এ মাস-আলাটা নিজের মাথা থেকে আসায় বেশ আরাম বোধ করছি যখন। এমন সময় ভাগ্নে লিংকন এসে হাজির অকুস্থলে; অকুস্থলে না বলেই বা উপায় কী।

মামা অনেক্ষণ একা একা কী যেন বিড় বিড় করছেন। আবার শূন্যে একটা ঘুষিও হাঁকালেন দেখলাম; ঘটনা কী একটু খুলে বলা যায়; তো বলেন।

ঘটনা তেমন কিছু না; গতকাল ঐ পাঁজিটার কাছ থেকে একজোড়া ক্যামব্রিজ স্যু কিনে নিয়ে গেলাম; সব ঠিকঠাক কিন্তু দেখা গেল ডান পায়ের সুকতলা নেই। এটা দেখে প্রায় বাসার সবার সুখ হারাম অবস্থা তখন। আয়োজন করে আজ আসা। এসেই পড়লাম ধাপ্পাবাজের জেরার মুখে। সে টিভির রানিং কমেন্টেটরের মত করে; ননস্টপভাবে; কবে নিয়েছি, কার কাছ থেকে নিয়েছি, কত দিয়ে নিয়েছি। দেখে নেননি কেন? এই দামে কী আজকাল জুতা পাওয়া যায়- এমন শতেক উল্টা-সিধে প্রশ্ন করে শেষকালে খালি হাতে বিদেয়। এখন তুমিই বলো এমন হলে কে কার মেজাজ ধরে রাখতে পারে। আমিও পারছি না। আবার বেটার নামের বাহার দেখ। নাম শুনতেই বলে সোনা মিয়া, আদতে দেখ ইমিটেশনের ছড়া-ছড়ি।

এ পর্যায়ে ভাগ্নে গেলো ক্ষেপে। শালার আ-আ-মি-মি।

এখন সে কোনো কথাই খুঁজে পাচ্ছে না। মনে হয় এখন সে বাংলা ছবি ধর তক্তা মারো পেরেক ছবির নাম ভ‚মিকায়- মানে কোনো ঘোরপ্যাঁচে না গিয়ে একেবারে ফাইনাল এ্যাকশনে যেতে চাচ্ছে।

রসো ভাগ্নে রসো। এ জাতীয় ঘটনায় একটু টেকনিক্যালি হ্যান্ডেল করতে হয় সবসময়। লিংকনের কানে কানে বলে দিলাম কী করতে হবে যেয়ে। এখন বুঝবে বাছাধন হাউ মেনি জুতোতে হাউ মেনি সুকতলা।

লিংকন পরেছে জিনসের থ্রী কোয়ার্টার; গায়ে ফ্যামিলি সাইজ মেরুণ কালারের সেন্ডো গেঞ্জি, হাত মুষ্টিবদ্ধ; চোয়াল শক্ত; শীতেও সে ঘামছে, গোসল সেরে ওঠা টাইপ ঘাম; এগোচ্ছে এখন সোনা মিয়ার দিকে। যে ব্যবসায়ীর মুখোশ পরা হলেও প্রকৃত অর্থে ছিনতাইকারী একজন। এখন তোমার বাঁচা মরার শেষ ইনিংস। এ জাতীয় কর্মকাণ্ড সব সময় একটা ব্যাক-আপ ব্যবস্থা রাখা জরুরী। না হলে উল্টো শাল ইয়ের মধ্যে। এই যাঃ কী বলতে কী বলে ফেললাম। লিংকন পাঁচশ পাওয়ারের। বড় ভাগ্নে হাজার পাওয়ারের; সে র‌্যাব অফিসার। লিংকন ব্যর্থ হলে বড় ভাগ্নে স্ট্যান্ড-বাই। ভাগ্নে ফিরছে। মনে হচ্ছে পাঁচশতেই কাজ হয়েছে।

সোনা মিয়া শ্যুটিং প্যাক-আপের মতো করে ব্যাবসাপাতি প্যাক-আপ করছে দ্রæত তালে। অবশ্য মিচকে ধরনের একটা শয়তানের সাথে এরই মাঝে গুজুর গুজুর, ফুচুর-ফুচুর করতে দেখা যাচ্ছে। ঘোট পাকাচ্ছেন মনে হয়। যাই হোক ব্লাফার অব দ্য ঝিলপাড় আপাতত আউট অব ফোকাসে চলে যাচ্ছে এটাই কম কিসে। এখন লর্ড স্টাইলে হাঁটতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু লর্ড সাহেবরা কিভাবে হাঁটে সেটা জানা নাই বলে হাঁটতে পারছি না; এই যা। তবে দেখিস; একদিন আমরাও।

সোনা মিয়ার ইনিংস শেষ। প্রথম বলেই তার মিডল স্ট্যাম্প উপড়ে গ্যাছে। কিন্তু তার সাগরেদ আমাদের পিছু নিয়েছে। তার উদ্দেশ্য বোঝা যাচ্ছে না। ওকে নতুন চালে ভড়কে দিতে হবে। সোনা মিয়াকে ছুঁড়ে ফেলতে ভাগ্নেকে শিখিয়ে দিয়েছিলাম- তোর কবরের জায়গা কী ঠিক করা আছে- না আমরা মামা-ভাগ্নে ঠিক করে দেব। আইজ ভালো চাসতো দুই থেকে এক লক্ষ গুণবার আগেই ঝিলপাড়কে গুডবাই জানাবি চিরতরে। দুই, চার, ছয়, আট, দশ।

ভাগ্নে একলক্ষ গুণতে তো অনেক সময় প্রয়োজন। সময়টা একটু বেশি দিয়ে দিলে না মনে হয়। মামা এক লক্ষ বা এক কোটি এখানে বিষয় না। এখানে আসল ব্যাপার হচ্ছে কাজটা সঠিকভাবে আদায় করা।

মানে তুমি এই লক্ষ দিয়ে আসলে ঐ লক্ষ্য মিন করছো এখানে।

অনেকটা তাই মামা। যাই হোক, নগদে কাজ হওয়ায় আমরা দু’জনেই এখন খুশি।

মেজাজটা ধরে রাখা জরুরী। রাগ জিনিসটাকে যিনি সংযত রাখেন তিনি হচ্ছেন ধর্মবীর; আমরা ধর্মবীরে না কর্মবীরে বিশ্বাসী এখন। আজকের সাফল্যের চাবিকাঠি বলতে গেলে এই মেজাজেই। মেজাজ জিনিসটায় বেশ মাজেজা আছে দেখছি। অতএব টু বি কন্টিনিউ।

এদিকে হইছে আরেক কাণ্ড, দেখ ভাগ্নে; দশ টাকার চীনা বাদাম খরিদ করলাম। ৯০ টাকা ঠিকই দিছে কিন্তু কয়েকটা ময়লা নোটের ভাঁজে আবার দুইটা দশ টাকার নোট অনেকখানি টেপ মারা। আগামীকাল আবার এই ব্যাটাই বলবে এই সব ছেঁড়া-ফাঁড়া টাকা পান কই; এগুলান চলে না, অন্য টাকা দ্যান। নইলে বাদাম রেখে ফুটেন এখান থেকে। কই থেকে আসে এইসব কাস্টমার। কও মেজাজটা এখন কেমন ঠেকে! ঝিলপাড়ের সব রসুনের গোড়া দেখছি এক জায়গায়। একটা দিগ-দারির মধ্যে পড়লাম মনে হয়। এদেরকে যে কী করতে মনে লয়।

মামা- আপনিতো দেখছি সামান্য বিষয় নিয়েই মাথা গরম করছেন আইজ-কাল!

দশ-বিশ টাকা আবার কোনো টাকা নাকি। ফেলে দ্যানতো ঝামেলা শেষ হোক। আমি টাকা দু’টো ছিঁড়ে ফেলে উল্টো ঘুরেই সোনা মিয়ার সাগরেদের মুখে ছুড়ে দিলাম; যার কাজ কারবার এই দশ-বিশ টাকা নিয়েই। কাজ হলো; তারপর সে নতুন চাল চাললো একটা। মামা-ভাগ্নের মাঝ বরাবর আচমকা ছুটে বাদাম অলারে পরাপর দুই থাবা। তারপর বাদাম বিক্রেতার পকেট থেকে সব টাকা বের করে দু’টো দশ টাকার নতুন নোট নিয়ে আমার দিকে দিলে আমি তা দ্রæত পকেটে রেখে দিলাম। এই ব্যাপারে দেরি করা হাদিসে নিষেধ আছে। সাগরেদটা ভোল পাল্টে জাগ্রত জনতার প্রতিনিধি সেজেছে। কিন্তু আসল ব্যাপার এখনও বোঝা যাচ্ছে না। সে চারিদিকে মেজাজ নিয়ে তাকাচ্ছে। আর আমাদের কিছু একটা বলার ভাষা খুঁজে বেড়াচ্ছে মনে হয়। একে চালকের আসনে বসতে দেয়া ঠিক হবে না। তাহলে বড় ভাই, মেজ ভাই, সেজ ভাইকে এখানে একে একে হাজির করে আমাদের বিরুদ্ধে একটা তাল-তামাশা শুরু করবে। এদের বিশ্বাস করা একদম ঠিক হবে না। যেখানে এরা একেবারে মীরজাফরের ভায়রা-ভাই। মিচকেটা সোনা মিয়ার ফুঁস মন্তর খেয়ে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি করছে এখনও। ওকে ভড়কে দিতে; এই হারামীর হারামী, নাম কি তোর, কী করিস; বাড়ি কই?

রতন, তোলা তুলি।

তোলা তুলি মানে, মানে কীরে হারামী?

ঝিলপাড়ে যারা ব্যবসাপাতি করে ওগোর কাছ থেকে দশ-বিশ টাকা নিয়া বড় ভাইগোরে দেই। হেরা আমারে কিছু দেয়।

এই উজবুক শাহজাহানপুরের এই ঝিলপাড় কী তোর বাপের, না তোর বড় ভইগোর এ্যাঁ।

এমন সময় মার-কাটারি লিংকনের তেজি কণ্ঠ। আজকে আমি তোর-এ-এ। আবার কথা পাচ্ছে না সে। সে আচমকা রতনের গলা ধরে উঁচিয়ে ধরে আছে। রতনের প্রাণটা বুঝি ঠেকলো এসে গলার কাছে। রতন খাবি খাচ্ছে আর বলছে, আমি না মামা, বড় ভাই।

ঐ বড় ভাইয়ের বাচ্চা, ডাক তোর বড় ভাইরে।

সমাজে ইদানীং বড় ভাইদের কদর যাচ্ছে। ঝিলের জলে নিয়ে এমন ঠাবনা দিব যে বদর বাবাজিও রক্ষা দিবে না কইলাম। রতনের অবস্থা প্রায় কেরাসিন। কখন যে বুকের খাঁচায় অচিন পাখি ফুরুত হইয়া যায় কে জানে। যেখানে গোলাপ তুলতেও সাবধানে তুলতে হয়; নইলে ঘ্যাচাং। রতনের এমন বাঁচা-মরার ইনিংস দেখে আমি রে-রে করে উঠলাম। খুনের দায়ে শেষকালে জেলে না যেতে হয়। লিংকন করো কী, করো কী- ছেলেটা মারা যাবে তো।

রতন প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় ছাড়া পেলো। সে এখন ফাঁন্দে পড়িয়া বগা কান্দে টাইপ ঝামেলায় আছে। সে ভীত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। খানিকটা খড়কুটো ধরবার আশায়। আমি অভয় দিলাম। এ নিরীহ টাইপ ছেলে, একে ছেড়ে দাও। পেটের দায়ে হয়তো এ লাইনে এসেছে। আসল গোড়া অন্যখানে। মামা কারে আপনি নিরীহ বলছেন। বেড়ালের নয়টা জীবন বলে একটা কথা আছে। এদের ক্ষেত্রেও তাই। এদের আপনি চেনেন। এরা নিরীহ মুখ করে থাকা খাঁটি শয়তান। ঘোর-প্যাঁচের এক শেষ। ভ্যাবদা মুখ করে আশে পাশে ঘুরঘুর করবে তারপর সুযোগ বুঝে এক লাফে ঘাড়ে গিয়ে পেচ্ছাব করে দেবে ছরছর করে। তখন আপনার ইজ্জত নিয়ে পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞাপ্তি দিতে হবে। দেখেন না কেমন এই বয়সেই সম্মিলিত অপরাধ কমিটির ক্যাশিয়ার বনে গেছে। অতএব একে মঁজা পুকুরের থেরাপি দেয়া একান্ত জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে মামা। তাই দেরি না করে ঝিলপাড়ের হাবড়ের মধ্যে ফেলে মঁজা পুকুরের মজাটা বোঝাবো এখন। পুকুরের কালারফুল পানি ভরপেট খেলে সারাজীবন হাসপাতালেই কাটাতে হবে। তখন আমাদের পেছনে লাগার আলাদা সময় বের করতে পারবে না। হা-হা-হা।

আনকন্ট্রোলড স্টেজে চলে যাওয়া লিংকনকে আমি খানিকটা জোর করেই থামালাম। নইলে আজ মনে হয় রতনের ওপর সুনামি বয়ে যেত। আমি নিজেও জানি না রতন ঘোড়েল টাইপ না ছিঁচকে টাইপ মাস্তান। তারপরও ওকে একটা সুযোগ দিলাম। নইলে এতক্ষণে হয়তো ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যেতে পারতো।

বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান- কথাটা রতন হয়তো অনেক পাড়াপড়শির কাছ থেকে শুনেছে এতদিন। আজ সে নিজেকে ঘুঘুর জায়গায় দেখছে।

শোন রতন, তুমি এই যে আমাদের মামা-ভাগ্নের লেজ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ সারা ঝিলপাড় এটা কোন কাজের কথা না। চটজলদি বিদেয় হও। নইলে সবসময় আমি তোমারে রক্ষা নাও করতে পারি। আর মন দিয়ে শোন, তুমি এই একটু পর পর মামা, মামা বলছো এটা একটা কুৎসিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ সব লাইনে মামা কথাটা যায় না। তুমি আমারে বড়ভাই বলে ডাকবে এখন থেকে।

ঠিক আছে মামা, থুক্কু বড়ভাই। আর ঐ যে আপনার ভাগ্না খুব উঁচা লম্বা, যার মেজাজ সব সময় গরম থাকে উনারে কী কমু?

উনারে মামা-চাচা, খালা শাশুড়ী যা ইচ্ছা তাই ডাকবা। কিন্তু আমার এক কথা, আমারে বড়ভাই ডাকতে হবে। বড়ভাই কথাটার মধ্যে একটা কী হনুরে হনুরে ভাব থাকে। সে তুলনায় মামা কথাটার মধ্যে কিচ্ছু নেই। একটা ম্যাড়ম্যাড়ে ভাব আছে শুধু।

স্যর, একটা ট্যাহা দ্যান। একটা ট্যাহা দ্যান না স্যর।

ঐ ব্যাটা ট্যাহা কীরে।

স্যর ট্যাহা চিনেন না।

ট্যাহা মানে টাকা।

তয় টাকা না বলে ট্যাহা বলছিস ক্যান?

টাকা বললে শিক্ষিত শিক্ষিত লাগে।

তাতে সমস্যা কি তোর?

আমরা ফকিরতো, তাই শিক্ষিত ভাষায় কথা বললে লজ্জা লাগে।

দেখেন মামা, দেশটা গেছে কই। অগত্য লিংকনই কেসটা টেক-আপ করলো। সে ফকিরকে পাঁচ টাকা দিয়ে বিদেয় করে।

সন্দেহের কানাগলিতে বেশিক্ষণ হাঁটা বুদ্ধিমানের কাজ না। অপন্যান্টকে খাটো করে দেখেছো কি মরেছো। চিমশে বিভীষণটা এখনও সাথে সাথেই আছে। সরি, ডঃ এ মুহূর্তে প্রেসার হাই হলেও আপনার প্রেস-ক্রাইব মানতে পারছি না। এই জাতীয় পরিস্থিতি গরম মেজাজ খুবই ধন্বন্তরি বলতে পারেন। এছাড়া মণীষীরা বলেন-

নারী চিনি লাজে

আর পুরুষ চিনি রাগে।

অতএব সাফল্যের চাবিকাঠি ঐ মেজাজেই। ওকে একটা কঠিন দাওয়াই দিতে চটজলদি তর্জনী তাক করে পরিবেশে খানিকটা ভিলেনি ক্লাইমেক্স এনে বললাম, রতন, হাঁটাহাঁটি বন্ধ কর। আর সহি সালামতে বিদেয় হও। নো আর্গুমেন্ট। নো হাংকি-ফাংকি। এ জাতীয় লোককে মাঝে মধ্যে টাইট দেয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মনে হচ্ছে টাইটটা একটু বেশি হয়ে পড়েছে। রতন কাঁদো কাঁদো স্বরে; মামা এ লাইনে ঘেন্না ধরে গ্যাছে। আমি আর এর মধ্যে নাই। আমি আপনাদের সাথে শান্তিতে হাঁটাহাঁটি করি একটু। এখন আপনার দলেই থাকবো।

ঐ মিয়া আমাদের সাথে হাঁটাহাঁটি করবা মানে কি! খাওয়া-দাওয়া! এইসব!

খাওয়া-দাওয়া আপনারা যাই দিবেন, তাই খামু। নইলে বাতাস খায়া থাকমু।

বাতাস! এটুকু বলেই লিংকন ঠা-ঠা করে হেসে ফেললো। এতক্ষণ যে মাস্তানী প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে ছিলো এখন হাসিটা তাকেও ছাড়িয়ে গেল। গরীবের ঘোড়া রোগ বলে একটা কথা আছে, এর তো দেখছি; গরীব মানুষ ফড়িং খাই- নাচতে নাচতে স্বর্গে যাই টাইপ দশা।

লিংকন ঐ শ’খানেক টাকা ওকে দিয়ে দাওতো, পরে আমি ম্যানেজ করবো বিষয়টা। আর হ্যাঁ রতন শোন, টাকাটা নিয়ে কিছু খেয়ে আপাতত বাসায় যাও। কালকে বেলাবেলি করে এসো; দেখি তোমার জন্য কি করা যায়। হুম।

মামা-ভাগ্নের কারোই ভিজিটিং কার্ড নেই। থাকলে ওকে একটা দেয়া যেত। ইদানীং আবার ভিজিটিং কার্ডটা যাচ্ছে সবার সাথে!

মামা ওকে দলে নেয়া কি ঠিক হচ্ছে। এমন হয়তো রতন আপনাকে ইমোশনালি বø্যাকমেইলের ধান্ধা নিচ্ছে।

শোন লিংকন, দু’জনে মিলে কোনো দল হয় না। একটা ন্যাংটা ন্যাংটা ভাব চলে আসে। তাছাড়া রতনের আনুগত্যে যথেষ্ট মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। অতএব রতন থাক এমনকি সানি চৌধুরীও থাক। তারপর ফাইনাল স্ক্রুটিনিতে একজনকে বাদ দিলেই সবদিক রক্ষা। একটা ব্যালান্সড দল হবে তখন। তারপর সন্ত্রাসীই হও আর যে মিয়াই হও কাছে আসলেই ঢিসুম-ঢিসুম। সানী একটা বড় দলের পাওয়ারফুল ক্যারেক্টর। কিন্তু তার আসল পাওয়ার অন্য জায়গায়। সে যখন তার আজদহা শরীর নিয়ে থপ্ থপ্ পায়ে ঝিলপাড়ে ঘুরে বেড়ায় তখন আলাদা করে হাঁক দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এমনিতেই কাঁপে পুরো ঝিলপাড় আর ঝিলপাড়ের মানুষ সব। এমনিতে আবার মাইডিয়ার ধরনের লোক। আমি একটা নকল হাই তুলে ভাগ্নেকে বললাম, ফলো মী। জোয়ারে এখন ভাটার টান অনুভব করলাম, দীর্ঘ অনাভ্যাসে সিগ্রেট বিদ্রোহী হয়ে ওঠলো অনেক বেশি। কাঁশি আর থামতেই চায় না। মুদ্রার অন্য পিঠ শামাল দিতে বেশ কায়দা করেই সিগ্রেটটা ছুঁড়ে ফেললাম। সেটা গিয়ে পড়লো যুবতী এক কন্যার দু’পায়ের মাঝ বরাবর। সে একটা ওয়াও বলে লাফ দিলো। তখন তার সঙ্গে থাকা মা-চাচীদের কেউ একজন আমার ঠিক চোখের দিকে তাঁকিয়েই বললো, চোখ নেই নাকি? আমি আমার নিজস্ব ব্রান্ডের একটা হাসি দিলাম মাত্র। আর মনে মনে বললাম, কী বলবোরে চাচীজান

চোখ থাকতে হইছি কানা

কিছুই নেই আমার বিবেচনা

সেদিন বড় স্কেলে কোন ঝামেলা ছাড়াই নিরাপদে বাসায় ফিরলাম।

আজকের দিনে সেটাই অনেক বড় পাওয়া মানছি।

মন্তব্য: