শহীদুল জহিরের ছোটগল্পে বয়নশৈলী ও নির্মিতি

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

মোজাফ্ফর হোসেন

শহীদুল জহিরের ঐতিহ্য

মুক্তিযুদ্ধের আগে বাংলাদেশের সাহিত্যের একটা বিরাট অংশ লেখা হয়েছে সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে। এ পর্বের ছোটগল্পে নির্মিতির চেয়ে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় বক্তব্য, যেহেতু সময়টা ছিল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এবং একটি স্বাধীন জাতি গঠনের। কিন্তু স্বাধীনতাউত্তরকালে এসে ছোটগল্পে নিরীক্ষা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ পর্বের সবচেয়ে আলাদা ছোটগল্পকার হলেন শহীদুল জহির (১৯৫৩-২০০৮)। তিনি প্রবণতার দিক থেকে বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র ধারাবাহিকতা। শহীদুল জহির নিজেও সেটা স্বীকার করে জানিয়েছেন, ‘…আমার গল্প, বাংলা সাহিত্যের যে ঐতিহ্য আছে সেগুলো থেকেই আসা এবং বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে আসতে পারে। এটা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ হতে পারে।’ [সাক্ষাৎকার, আর কে রনি গৃহীত]। শহীদুল জহির যখন লিখতে এসেছেন তখন বিশ্বে সাহিত্যজগতের বড় তারকা হলো গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। তাঁর দ্বারা তিনি কিছুটা প্রভাবিত হন।  গদ্যে সৈয়দ শামসুল হকের প্রভাবও লক্ষ করা যায়। আরেকটু বিশদভাবে বললে কমলকুমার মজুমদার, জেমস জয়েস ও ইলিয়াসের প্রভাবও তাঁর ভেতর আছে। তবে এসব প্রভাবকে ছাপিয়ে পরবর্তীকালে তিনি নিজেই গল্প বলার একটি স্বতন্ত্র ধারা সৃষ্টি করেছেন, যেটা আমরা কেবল ‘শহীদুল জহিরীয় ধারা’ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। তাঁর শক্তি জাদুবাস্তবতার সঙ্গে রূপকথা বা টেলধর্মী আখ্যান নির্মাণে। এবং কথ্য ও মানভাষার মিশ্রণে স্বকীয় ভাষারীতি তৈরিতে। শহীদুল জহিরের তিনটি গল্পগ্রন্থ : পারাপার, ডুমুরখেকো মানুষ ও অন্যান্য গল্প এবং ডলু নদীর হাওয়া ও অন্যান্য গল্প। প্রথম দুটি বই নিয়ে শহীদুল জহিরের নির্বাচিত গল্প বইটি সংকলিত হয়। প্রথম গল্পগ্রন্থের রচনাকাল বিংশ শতকের সত্তরের দশক; দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থের নব্বইয়ের দশক আর তৃতীয় গল্পগ্রন্থের রচনাকাল একবিংশ শতকের প্রথম দশক।

নির্মিতি

শহীদুল জহির কাঠামোসচেতন লেখক ছিলেন। তিনি ঐতিহ্যগত নির্মাণশৈলী থেকে বের হতে চেয়েছেন। তাঁর ছোটগল্পের কাহিনিতে বহির্জীবন এবং অন্তর্লোক একরেখায় এসে মিলিত হয়। ফলে অন্তর্বয়ান ও বহির্বয়ান একই সঙ্গে ঘটে। গল্পে ‘অথবা/হয়তো/কিংবা/বা’ ইত্যাদি শব্দের পৌনঃপুনিক ব্যবহারের ভেতর দিয়ে কতগুলো সম্ভাব্য বাস্তবতার কথা উল্লেখ করে সেগুলো বাতিল করার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে। এর ব্যাখ্যা তিনি নিজে দিয়েছেন এই বলে, ‘এইসব অপশন দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ব্যাপারটা একটু ঘোলাটে রাখা। জিনিসটাকে যদি আপনি ছবি মনে করেন, তাহলে বলব, ছবির আউটলাইনটাকে একদম ক্লিয়ার না করা, ফটোগ্রাফিক না করা, একটু ফাজি রাখা। অর্থাৎ ছবিটাকে আমি একটু ঝাপসা রাখতে চাই।’ [সাক্ষাৎকার, আহমাদ মোস্তফা কামাল গৃহীত]।

শহীদুল জহির অধিকাংশ সময় ঘটে যাওয়া গল্প লেখেন। সেই গল্পটা আবার তিনি নির্মাণ করেন সমষ্টির বয়ানে। অর্থাৎ মহল্লা বা ডাউনটাউনের লোকজন সেই গল্পের কথক। তিনি তাদের মুখে গল্পটা তুলে দিয়ে নিজে কিছুটা দূরে সরে যান। অনেকটা পাঠকের অবস্থানে অবস্থান করেন। ফলে তিনি গল্পে কথা বলার ধরন মিশিয়ে যে-কথন তৈরি করেন সেখানে আখ্যান বা অবয়ব বলে কিছু থাকে না। ঐতিহ্যগত নির্মাণশৈলীটা ভেঙে পড়ে। এজন্যে তাঁকে উত্তরকাঠামোবাদী (Post-structuralist) হিসেবে আমরা ভাবতে পারি। জ্যাক দেরিদা Freeplay of Structure -এর যে ধারণা দিয়েছেন, তা এখানে শহীদুল জহিরের গল্পে লক্ষ করা যায়। দেরিদার কথা থেকে বলা যেতে পারে, শহীদুল জহিরের গল্পে ÔThe Center is at the center of the totality, and yet, since the center does not belong to the totality (is not part of the totality), the totality has its center elsewhere. The center is not the center.Õ [Jacques Derrida, Writing and Differece, trans. Alan Bass, London: Routledge, p ২৭৮]. ফলে কাহিনির ভেতর এই কেন্দ্রহীনতার কারণে আমরা তাঁকে উত্তর-আধুনিক গল্পকার বলতে পারি। প্রচলিত কাঠামো ভাঙার ক্ষেত্রে শহীদুল জহির তাঁর গল্পে চিত্রকলার কিউবিক (Cubism) এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিমূর্তকরণ (Abstraction) ফর্ম ব্যবহার করেছেন। ফলে গল্পটা যৌক্তিকতা (logic) ভেঙে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। পাঠককে নিজের মতো করে সেই বিচ্ছিন্ন কোলাজকে মিলিয়ে নিতে হয়। ফলে যেমন দুর্বোধ্যতার সৃষ্টি হয় তেমনি পাঠকভেদে তৈরি হয় ভিন্ন ভিন্ন পাঠ। শহীদুল জহির এই ফর্মের কথা উল্লেখ করে বলছেন, ‘মার্কেজের লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে যে, এখানে চিত্রকল্পের ফর্ম আছে। পিকাসোর গুয়েরনিকা যে ফর্মে আঁকা, এটা হচ্ছে কিউবিক ফর্ম। একটা জিনিস ভেঙে ভেঙে ছড়িয়ে দেওয়া আছে। তো সেই ছবিতে ঘোড়ার মাথা একদিকে, পা একদিকে; বিষয়টা হচ্ছে, ঘোড়াটা বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।…আমারও মনে হয়েছে লেখাগুলো যখন যেভাবে খুশি লেখা।’ [সাক্ষাৎকার, আর কে রনি গৃহীত]।

ভাষা

শহীদুল জহিরের গল্পের ভাষা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা আছে। প্রমিত ভাষা ব্যবহারের মধ্যে তিনি টেক্সট ও ডায়লগে কথ্য বা আঞ্চলিক ভাষারীতি ব্যবহার করেছেন। যেমন ক্রিয়াপদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়, যায়া (গিয়ে/যেয়ে), হয়া (হয়ে), হারায়া (হারিয়ে), শিখায়া (শিখিয়ে), দিয়া (দিয়ে) প্রভৃতি। এটা তাঁর ক্ষণিক নিরীক্ষা নয়, তাঁর সাহিত্যের মূল স্রোতেই এই ভাষারীতি চোখে পড়ে। এ ক্ষেত্রেও তিনি হয়তো ভাষার ‘কেন্দ্রগত’ ধারণাটা ভেঙে দিতে চেয়েছেন। ‘শোভন কথ্য ভাষা’ বলে কিছু তিনি মানতে চাননি। ভাষাকে নতুন করে পরিসঞ্চালন করতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আসলে আমি ভাষাশিল্পী না।…আমি ভাষা সৌন্দর্যের প্রাসাদ তৈরি করতে চাই না।…আমি যাদের কথা বলি, যেভাবে বলি তাতে এই ভাষায় (কথ্য ভাষা) প্রাণ থাকে।’ [সাক্ষাৎকার, আহমাদ মোস্তফা কামাল গৃহীত]। এই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে অনেকে সাব-অল্টার্ন অ্যাপ্রোচ খুঁজে পেতে পারেন। মার্কসীয় চিন্তাভাবনার লেখক হিসেবে সমাজে ভাষাগত কাঠামো বা বৈষম্য ভেঙে দেওয়ার প্রবণতার কথাও তোলা যেতে পারে। আবার বলা যেতে পারে, তিনি ভাষার সাম্রাজ্যবাদিতা বা Linguistic imperialism -এর বিপক্ষে দাঁড়াতে চেয়েছেন।

ফলে আমরা দেখি শহীদুল জহির সাহিত্যে বাস্তবের মতো হুবহু চরিত্র নির্মিতি ও ব্যবহৃত ভাষা প্রয়োগে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ভাষার দিক থেকে সাহিত্যকে আলাদা একটি নির্মাণ হিসেবে দেখতে চাননি। অর্থাৎ তিনি সচেতনভাবে শব্দসংকোচন বা শব্দসম্প্রসারণ করেননি। যে শব্দ তাঁর চারপাশে মুখে মুখে প্রচলিত ছিল, তিনি তাই কুড়িয়ে নিয়েছেন। শহীদুল জহিরের অগ্রজ কথাশিল্পী আবদুশ শাকুর তাঁর ‘গদ্যের কঙ্কাল’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেছেন, ‘তারা (চরিত্ররা) প্রায়শ আমার ভাষা নকল করে। আমি তাদের ভাষা নকল করি না। করি না, কারণ ওদের ভাষা প্রায়শ নকল- আরোপিত বলেই নকল। ওদের আসল শব্দ হরণ করেছে শোষক সমাজ।’ এরপর আবদুশ শাকুর বলছেন, আর্টে কৃত্রিম বা আর্টিফিশিয়াল হওয়ার প্রয়োজন আছে। তাঁর এই বক্তব্য থেকে তাঁর ছোটগল্পে ‘তৈরি’ ভাষা ব্যবহারের পেছনে একটা সুচিন্তিত কারণ আমরা লক্ষ করি। কিন্তু শহীদুল জহির ঠিক এর বিপরীত অবস্থান থেকে লিখেছেন। তাঁর কাঠামোটা তৈরি বটে, কিন্তু ভাষাটা নয়।

বয়ানরীতি

শহীদুল জহিরের সমষ্টির বয়ানে গিয়ে সমস্যা একটা হয়েছে। সমষ্টির বয়ান জেন্ডার-ভাবনা থেকে নিউট্রাল থাকেনি। এটা হয়ে উঠেছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যৌথভাষা বা কমন দৃষ্টিভঙ্গি। ফলে শক্তিশালী নারী চরিত্র শহীদুল জহিরের চোখে পড়ে না। আলাদা করে শক্তিশালী পুরুষ চরিত্র আমাদের খোঁজার প্রয়োজন হয় না। কারণ পুরো কাঠামোটাই পুরুষের। আবার শহীদুল জহিরকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিনিধিরূপে ভাবতে পারছি না এই কারণে যে, এই সমষ্টি মানবিক চেতনাকে সমন্বিত করে একটা বয়ান খাড়া করেছে।

মার্কসীয় দর্শনের কোনো লেখক লিখছেন জাদুবাস্তবতার কৌশল অবলম্বন করে। সাধারণত এমনটি ঘটে না। কারণ যাঁরা লেখালেখির ভেতর দিয়ে সমাজ-কাঠামোর পরিবর্তন ঘটাতে চান বা লেখালেখিকে মুভমেন্ট হিসেবে নেন তাঁরা যতটা সম্ভব কমিউনিকেটিভ থাকার জন্য সরল ও ঐতিহ্যগত টেকনিক অবলম্বন করেন। কিন্তু শহীদুল জহির তা করেননি। তিনি বক্তব্যের দিক দিয়ে সমাজ ও রাজনীতিসচেতন লেখক বটে। সেই অর্থে তাঁর সমস্ত গল্পই পলিটিক্যাল বা সোশ্যাল এলিগরি। একটু প্যারাডক্স বলে মনে হতে পারে, তিনি বাস্তববাদী লেখক কিন্তু লিখেছেন চেতনাপ্রবাহ বা ড্রিম-টেকনিক অবলম্বন করে। সমষ্টিগত পর্যবেক্ষণ লিখছেন একান্ত ব্যক্তিগত কথনের ভঙ্গিতে। অর্থাৎ গোটা সমষ্টিটাই যেন একক ব্যক্তি। কারণ আলাদা করে কারো কোনো বয়ান বা পর্যবেক্ষণ নেই সেখানে। এখান থেকে আমরা মিডিয়া, প্রযুক্তি ও পুঁজিবিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতাবোধের বিলোপ ঘটতে দেখছি। শহীদুল জহির নিজের একাকিত্ববোধ থেকে ঠিক তাঁর বিপরীত অবস্থানে অর্থাৎ সমষ্টির কাছে ফিরে যেতে চেয়েছেন। এটা তাঁর নিজের একান্ত আকুতি হয়ে থাকতে পারে। হতে পারে তিনি ব্যক্তিকেন্দ্রিক আধুনিকতার বিপক্ষে। তবে এর সরল একটা উত্তর তিনি নিজে দিয়েছেন, ‘এটা (সমষ্টির বয়ান ব্যবহার করা) আমি করি, কারণ এমন অনেক   কিছুই বলা হয় বা করা হয়, যেটা আমি পরে অস্বীকার করতে চাই- লেখক হিসাবে।…লেখক হিসাবে আমি সবকিছুর দায়িত্ব নিতে পারব না জেনেই জনশ্রুতির ওপর নির্ভর করি, সমষ্টিক আকারে বর্ণনা করি।’ [সাক্ষাৎকার, আহমাদ মোস্তফা কামাল গৃহীত]। অর্থাৎ তিনি যা ইচ্ছা বলার স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য এই বয়ানরীতি অবলম্বন করেন।

জাদুবাস্তবতা, পরাবাস্তবতা নাকি রূপকথা

শহীদুল জহির জাদুবাস্তবতা বা কুহকী বাস্তবতার লেখক কিনা সেই প্রশ্ন তোলা উচিত হবে না। কারণ স্পষ্টতই তাঁর লেখায় জাদুবাস্তবতার উপকরণ আছে। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, তিনি সচেতনভাবে জাদুবাস্তবতার বিষয়টি তাঁর গল্প-উপন্যাসে এনেছেন এবং সেটা তিনি গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ থেকে গ্রহণ করেছেন। তিনি বলছেন, ‘জাদুবাস্তবতার ব্যাপারটা তো আমি মার্কেজের কাছ থেকে পেয়েছি। এবং এটা আমি গ্রহণ করেছি দুটো কারণে। প্রথমত, চিন্তার বা কল্পনার গ্রহণযোগ্যতার যে পরিধি সেটা অনেক বিস্তৃত হতে পারে বলে আমি মনে করি।…দ্বিতীয়ত, আমি আসলে বর্ণনায় টাইমফ্রেমটাকে ভাঙতে চাচ্ছিলাম…।’ [সাক্ষাৎকার, আহমাদ মোস্তফা কামাল গৃহীত]।

কিন্তু শহীদুল জহিরকে পড়ার পর পাঠকের মনে স্বভাবতই প্রশ্ন চলে আসে- শহীদুল জহিরের জাদুবাস্তবতা কি মার্কেজীয় বা লাতিন সাহিত্যের জাদুবাস্তবতা? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। হয়তো মোটাদাগে বলা যাবে, হ্যাঁ অথবা না। কিন্তু খতিয়ে দেখলে আমরা বুঝব দুজনের জাদুবাস্তবতা এক নয়, আবার একও। অর্থাৎ বিষয়টি তর্ক ও তদন্তের।

আমরা টেক্সট ধরেই এর একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি। ‘কাঠুরে ও দাঁড়কাক’ গল্পটি শুরু হয় এভাবে: ‘ঢাকা শহরের প্রবীণ অধিবাসীরা স্মরণ করতে পারে যে, বহুদিন পূর্বে ঢাকা শহর একবার কাকশূন্য হয়ে পড়ে।’ তুলনাটা এখান থেকেও করা যাবে। লক্ষ করার বিষয়, গল্পটি আরেকটু এগোলেই দেখা যাবে গল্পের কথক কাঠুরে আকালু ও তার স্ত্রী টেপিকে নিয়ে যে গল্পটি ফাঁদেন সেটি যতটা না জাদুবাস্তব গল্প তার চেয়ে বেশি জনশ্রæতি হয়ে ওঠে বা মিথিক ফ্যান্টাসিও বলতে পারি। কারণ বাস্তবতা-জ্ঞান থেকে এই গল্পের কোনো অর্থ উদ্ধার করা যায় না। মার্কেজীয় জাদুবাস্তবতা হলে হয়তো সূচনাটা হতো এভাবে, ‘ঢাকা শহরের প্রবীণ অধিবাসীদের মনে আছে, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পূর্বে ঢাকা শহর একবার কাকশূন্য হয়ে পড়ে।’ অর্থাৎ আরো নির্দিষ্ট করে বলা। তাতে ঘটনাটি যে ঘটেছে সে বিষয়ে পাঠকের মনে আর কোনো প্রশ্ন থাকে না। জাদুবাস্তবতার কৌশল নিয়ে মার্কেজ নিজে বলছেন: ‘যখন আপনি বলবেন, হাতি আকাশে উড়ছে, মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করবে না। কিন্তু আপনি যদি বলেন, ৪২৫টা হাতি আকাশে উড়ছে লোকজন আপনাকে বিশ্বাস করলেও করতে পারে।’ [সাক্ষাৎকার: প্যারিস রিভিউ]। অর্থাৎ মার্কেজ যেটা বোঝাতে চাচ্ছেন অবাস্তব ঘটনাকে বিশ্বাসযোগ্য বা বাস্তব করে তুলতে হলে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনার ভেতর চলে যেতে হবে। পাঠক তখন ধরে নেবেন বিষয়টি সত্যিই ঘটছে বা ঘটেছে। উদাহরণ হিসেবে মার্কেজের ‘আ ভেরি ওল্ড ম্যান উইথ ইনরমাস উইংস’ গল্পটির কথা স্মরণ করতে পারি। মার্কেজীয় এই ডিটেল ও নির্দিষ্টকরণের (Fixation) অভাব আছে শহীদুল জহিরে। মার্কেজ যেভাবে জাদু-উপকরণের (Megical Element) পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেন, শহীদুল জহির তা করেন না। সবসময় যে করেন না তাও নয়, তবে অধিকাংশ সময় তিনি পরিস্থিতির বর্ণনা করেই ছেড়ে দেন। তিনি নিজেই, ‘অথবা/হয়তো/কিংবা/বা’ ইত্যাদি শব্দের পৌনঃপুনিক ব্যবহার করে পাঠককে আরো অনিশ্চিত বাস্তবতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন।

এই তুলনার ক্ষেত্রে আরো দেখা যাবে, মার্কেজীয় জাদুবাস্তবতার বিষয়টি ভীষণভাবে সমাজমুখী। ব্যক্তির অভিজ্ঞতা সমাজের ভেতর সঞ্চারিত হয়। অন্যদিকে শহীদুল জহিরের জাদুবাস্তবতা সমাজের বা সমষ্টির অভিজ্ঞতা থেকে ব্যক্তির দিকে সঞ্চারিত হয়। তাঁর গল্পের দুর্বোধ্যতা বা সিদ্ধান্তহীনতা অনেক সময় মানুষের চেতনার জগতে প্রবেশ করে তাকে জাগিয়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত গল্পটি হয়ে ওঠে ননসেন্স স্টোরি। সেন্স একটা থাকলেও মার্কেজে যেমন সকলের পাঠে প্রায় একরকমভাবে ধরা দেয়, শহীদুল জহিরে সেটা ঘটে না। মার্কেজের গল্পের মতো শহীদুল জহিরের গল্পে নির্মিতি বা স্ট্রাকচার থাকে না বলে পাঠকভেদে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ জেগে ওঠে। আবার একই পাঠক বিভিন্ন পাঠে বিভিন্ন রকম অর্থ উদ্ধার করেন। অর্থাৎ মার্কেজের গল্পে প্রতীক বা কুহকী বাস্তবতার অন্তরালে সমাজের অসংগতি তুলে ধরার প্রচেষ্টাটি যেখানে জীবনমুখী সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়, সেখানে শহীদুল জহিরে এসে উলটোদিকে মোড় নেয়। এখানে এসে তাঁর গল্পের রূপকথার প্রবণতা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যেটি ‘ডুমুরখেকো মানুষ’ গল্পের আলোচনায় পরিষ্কার করা যাবে। তাই বলা চলে, মার্কেজ যে মুহূর্তে রূপকথার ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন, শহীদুল জহির সেই মুহূর্তে রূপকথা বা ফ্যান্টাসির ভেতর প্রবেশ করেন। এখানে রূপকথা ও জাদুবাস্তবতার পার্থক্য হিসেবে এটুকু বলা প্রয়োজন : জাদুবাস্তবতায় বাস্তবতার সঙ্গে জাদু-উপকরণ মিলেমিশে যায়। কিন্তু রূপকথায় যা ঘটে সবকিছু প্রায় জাদুময়। গল্পের কাঠামো, সেটিং, টোন, বিষয়বস্তু সবকিছু মিলে একটা অবাস্তব ক্ষেত্র তৈরি করে। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, জাদুবাস্তবতা হলো fantastic elements with realistic details. ঠিক এর বিপরীত স্বভাবকে বলা যেতে পারে রূপকথা- realistic elements with fantasti details. যে কারণে ‘অ্যারাবিয়ান নাইটস’, ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ বা ‘নারনিয়া’ ফ্যান্টাসি হিসেবে চিহ্নিত। এটা যুক্তি দিয়ে বিচার করা চলে না। কিন্তু জাদুবাস্তবতাকে তুড়ি মেরে অস্বীকার করার উপায় থাকে না। কারণ বাস্তবতার ভেতর মানুষের মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে ফ্যান্টাসি জগতের এক ধরনের মিলন এখানে ঘটে।

অনেক সমালোচক শহীদুল জহিরের গল্পকে সুররিয়ালিজম বা পরাবাস্তব গল্প হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সাহিত্যে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত কিছু সার্থক পরাবাস্তব গল্প লিখেছেন। কিন্তু শহীদুল জহিরের গল্পগুলোকে সম্পূর্ণ পরাবাস্তব গল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। সুররিয়ালিজমে চেতন (Conscious) এবং অবচেতনের (Subconscious) একটা বন্ধন (Unitly) গড়ে ওঠে। অন্য কথায়, স্বপ্নের সঙ্গে জাগতিক বিষয় যুক্ত হয়ে স্বপ্নবাস্তবতার সৃষ্টি করে। ফ্রয়েডের মনস্তাত্তি¡ক তত্ত¡ থেকে জানা যায়, মানুষের মনের সিংহভাগই থাকে অবচেতন অংশে। এই অংশটি মানুষের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে থাকে না। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেখান থেকে নানা ভাবনা বা ভাবনার টুকরো টুকরো বিষয় মানুষের চেতনার জগতে চলে আসে। বিষয়টা ভীষণভাবে ব্যক্তিগত। শহীদুল জহিরের গল্পগুলো অবচেতন থেকে আসেনি। শহীদুল জহির নিজেও বলছেন যে তিনি বেশ সময় নিয়ে গল্প লেখেন। অনেক সময় কাঠামোটা পূর্বপরিকল্পিত থাকে। অর্থাৎ তিনি লেখার সময় সচেতন থাকেন। এই সচেতনতা থেকে তিনি ‘চতুর্থমাত্রা’র মতো গল্প লিখেছেন ক্রিয়াপদের সম্পূর্ণ ভবিষ্যৎ কাল প্রয়োগ করে। আবার ‘ধুলোর দিনে ফেরা’র মতো গল্পহীন গল্প লিখেছেন। পরাবাস্তব গল্প এভাবে ভেবেচিন্তে আসে না। এটা একটা কবিতার মতো মুহূর্ত থেকে আসে।

আবার লক্ষ্য করা যায়, শহীদুল জহিরের গল্পে নির্মিতির দিক থেকে স্বপ্নের বড় কোনো ভূমিকা নেই। [‘চতুর্থমাত্রা’ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম] এবং কাঠামোগতভাবে শহীদুল জহিরের গল্পগুলো ব্যক্তিগত তো নয়ই, কখনো কখনো পুরো মহল্লার। সুতরাং এসব বিবেচনায় তাঁর গল্প পরাবাস্তব নয়। তবে পরাবাস্তব গল্পের অনেক বৈশিষ্ট্য তাঁর গল্পে আছে। লিখতে লিখতে হয়তো তিনি কখনো কখনো ঘোরের ভেতর চলে গেছেন, যে কারণে পরাবাস্তবতার উপকরণ বা লক্ষণ তাঁর গল্পে আমরা খুঁজে পাই। যেমন স্বপ্নে ঘটে যাওয়া ঘটনার মতো তাঁর অনেক গল্পে ঘটনার ভেতর কোনো যৌক্তিক সংযোগ থাকে না। অযৌক্তিকতার বিষয়টি শহীদুল জহিরের গল্পে ভীষণভাবেই আছে। পরাবাস্তব গল্পের মতোই শহীদুল জহিরের অনেক গল্পে আখ্যান বা অবয়ব বলে কিছু নেই। সেটিং অর্থাৎ টাইম-স্পেস ভেঙে গেছে। এসব কারণে তাঁর গল্পে কোথাও কোথাও পরাবাস্তব প্রবণতা চোখে পড়ে।

আলোচ্য বিশ্লেষণের পর বলা চলে শহীদুল জহিরের গল্পে জাদুবাস্তবতা, পরাবাস্তবতা ও রূপকথার বিষয় আছে। কিন্তু এমনভাবে এক ব্লেন্ডিংয়ের ভেতর দিয়ে যে তাকে আলাদা করা যায় না। যে কারণে শহীদুল জহির তাঁর গুরু মার্কেজ ও ওয়ালীউল্লাহ্র চেয়ে দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছেন। তাঁর গল্পকে একক কোনো সাহিত্য তত্ত্বের আলোকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যাচ্ছে না। তাঁর সাহিত্যে বিনির্মাণের বিষয়টি এখানে পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।

শহীদুল জহিরের গল্পে রূপকথা, মিথ, জাদুবাস্তবতা, পরাবাস্তবতা, কিউবিক ফর্মের ব্যবহার এবং ভাষা ও নির্মাণশৈলী বোঝার জন্য আমরা তাঁর টেক্সটকে ব্যবচ্ছেদ করে দেখতে পারি। আপাতত ‘কাঠুরে ও দাঁড়কাক’ গল্পটি বেছে নেওয়া হলো।

গল্পপাঠ : কাঠুরে ও দাঁড়কাক

‘কাঠুরে ও দাঁড়কাক’ গল্পটি শুরুই হয় জনশ্রæতি দিয়ে। কাঠুরে আকালু ও তার স্ত্রী টেপির শুরুর জীবনটা রূপকথার মতো শোনায়। তাঁদের পরবর্তীকালের জীবনে অর্থাৎ রাজধানী জীবনে কিছুটা জাদুবাস্তবতার উপস্থিতি ঘটে। সম্পূর্ণ না কারণ এখানে তাদের কাকদের নিয়ে যে নিজস্ব কারবার তা নিয়ে গোটা সমাজের কোনো মাথাব্যথা নেই। মিডিয়ার যুগে সেখানে মিডিয়া যাচ্ছে না। এরকম একটা পরিবারের ঘটনা রাষ্ট্র হচ্ছে না। যেটি ঘটেছে হাতি উধাও হয়ে যাওয়ার পর মুরাকামির ‘হাতি উধাও’ গল্পে কিংবা নাক উধাও হয়ে যাওয়ার পর গোগলের ‘দ্য নোজ’ গল্পে। 

এই গল্পে কিউবিক ফর্মের ব্যবহার আছে। একটা গল্প ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বলা। সবক্ষেত্রে যুক্তি অটুট থাকেনি। টাইমফ্রেম ভেঙে গেছে। কাঠুরের প্রথম জীবনটার সঙ্গে নগরজীবনের ব্যবধান যেন কয়েক দশক বলে মনে হয়।

গল্পের শেষ দৃশ্যটা জাদুবাস্তব বলতে পারি। কারণ কাকের মুখে করে আকালু ও তার স্ত্রী টেপিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত সত্য। মানুষ সেটা দেখেছে। এবং দেখে খুব বেশি আশ্চর্য হয়নি। জাদুবাস্তবতার মূল ব্যাপার হলো দৈনন্দিন জীবনে এ ধরনের জাদু-উপকরণের উপস্থিতিকে খুব সহজভাবে নেওয়া। তবে মার্কেজীয় ডিটেইল সেখানে নেই। কেবল পরিস্থিতিটা বলেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গল্পটি কাঠামোগতভাবে ননসেন্স। কিন্তু গল্পের ভেতর যে গল্প আছে সেখানে দুজন মানুষের নানাভাবে বঞ্চিত ও শোষিত হওয়ার বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে। কাক যেমন অস্পৃশ্য পাখি, মানুষ দুটোও তেমন অস্পৃশ্য হয়ে থেকেছে। তাদের ঠকিয়েছে উকিল, পুলিশ থেকে শুরু করে গোটা সমাজব্যবস্থার কাঠামো। কাকের ডিম খেয়েও তারা বেঁচে থাকতে পারেনি। তারা সুখে আছে ভেবে সেটি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এবং আমরা যে বলি, সমষ্টি সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়, এখানে সেটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। দুটি মানুষের বিপক্ষে যে সিদ্ধান্তগুলো গেছে তা এক অর্থে সমষ্টির ভাবনা থেকে এসেছে। সিস্টেমের বিপক্ষে দুজন আপাত নির্বোধ বা নিপাট সরল মানুষের অস্তিত্বহীন হয়ে যাওয়ার গল্পটি এখানে উঠে এসেছে।

বাংলার লোকবিশ্বাসে অমঙ্গলের সঙ্গে কাকের একটা সম্পর্ক আছে। কিন্তু এখানে আকালু ও টেপির জীবনে কাক মঙ্গল ও অমঙ্গল দুই-ই ডেকে আনে। প্রথমে টাকার সন্ধান দিয়ে মঙ্গল; এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওদের ভিটেছাড়া হতে হয়, এটা অমঙ্গল। এরপর কাক তাদের জেলের ভেতরে স্বর্ণের আংটি এনে দেয়, মঙ্গল; ফলে ভর্ৎসনা বাড়ে, অমঙ্গল। কাকের চাষ করে সংসার চলে, মঙ্গল; কাকের কারণেই আবার সংসারচ্যুত হতে হয়, অমঙ্গল। শেষে কাকের দল আকালু-টেপিকে নিয়ে চলে যায় নিরুদ্দেশে। অর্থাৎ তাদের জীবনে কাকঘটিত ঘটনার সমাপ্তি ঘটল না, সেটা চক্রাকারে চলতেই থাকবে বলে আমরা ধরে নিতে পারি।

আকালু ও টেপিকে মানুষের কুটিল ও জটিল স্বভাবের বিপরীতের মানুষ হিসেবে দেখা যায়। তারা সরল। তারা বিশ্বাস করে কাক-দর্শন শুভ নয়, মাদুলিতে চিকিৎসা হয়। তারা সরল বিশ্বাস আনে মানুষে। তবে গল্পের আসল উদ্দেশ্য মানুষ হিসেবে আকালু-টেপির পরিণতি বর্ণনা নয়। শহীদুল জহির তাঁর চারপাশের নোংরা বানোয়াট বাস্তবতাকে প্রকাশ করতে ডিভাইস হিসেবে তাদের এনেছেন। তিনি তাদের সিরাজগঞ্জের এক গাঁয়ে ভ‚মিহীন, আত্মীয়হীন অনেকটা এলিয়েনের মতো বসিয়ে দিয়েছেন। তারপর গল্প বলা শেষ হলে তাদের আবার উঠিয়ে নিয়েছেন। আমরা বলিউডের পিকে মুভিটি দেখেছি। এই সিনেমার সমালোচনায় পিকের চরিত্র-বিশ্লেষণ ও তার উপস্থিতির কার্যকারণ ব্যাখ্যা করতে বসলে সিনেমার মূল উদ্দেশ্য মাঠে মারা পড়বে। প্রশ্ন হলো আকালু-টেপির জীবনের এই অবাস্তব পরিণতি তৈরি না করেও মূল গল্পটা বলা যেত কিনা। যেত নিশ্চয়ই। কিন্তু তাতে গল্পটি একরৈখিক বা ট্র্যাডিশনাল হয়ে যেত। নির্মাণ নিয়ে এত কথা বলার প্রয়োজন হতো না। শহীদুল জহির নিজে এর একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, তিনি বলছেন, ‘ঘোর আমি তৈরি করি এবং সেটা পাঠককে সম্পৃক্ত করার জন্য করি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য আমি পাঠকদের বিভ্রান্তও করতে চাই, তবে বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সেটা করি না। …আমি পাঠকদের কাছ থেকে অনেক বেশি মনোযোগ দাবি করি। …আমার অনেক লেখায় আমি ঘোর তৈরি করে তার ভেতরে মূল বিষয়টা ছেড়ে দিয়েছি।’ [সাক্ষাৎকার, আহমাদ মোস্তফা কামাল গৃহীত] এবং সেই কাজে যে তিনি সফল হয়েছেন তা নিয়ে তর্কের অবকাশ নেই। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্প চর্চায় তিনি খুব কম লিখেও উল্লেখযোগ্য নাম হিসেবে বর্তমানে যে চর্চিত হচ্ছেন তাঁর এই আলাদা প্রবণতার কারণে। আমরা বলতে পারি, যেভাবে আজ ‘কাফকীয় প্রবণতা’ (kafkaesque) বলে বিশ্বসাহিত্যে একটা সাহিত্যভাষা (Literary term)  দাঁড়িয়ে গেছে, সেভাবেই বাংলা সাহিত্যে ‘শহীদুল জহিরীয় প্রবণতা’ বলেও একটা সাহিত্যভাষা দাঁড়িয়ে গেছে বা যাচ্ছে।

মন্তব্য: