তুষার প্রসূন – এর কবিতা

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

প্রসঙ্গঃ অনুভূতি

বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারো কিন্তু বিনা অনুভূতিতে নয়। এ ঘরে অন্ধকার দিয়ে গড়া বিনম্র মর্মর প্রধানত আমার শব্দের কারিগর। স্পর্শ লাগলে ভেঙে যেতে পারে। ছড়িয়ে যেতে পারে মর্মরিত ধ্যান। এখানে শব্দ দিয়ে তৈরী হয় গল্প কবিতা অভিজ্ঞান অর্থাৎ মনের প্রতিটি মেরুতে চলে নির্মাণ এবং বিনির্মাণ।

যদি তুমি একা এ ঘরে আসো দেখবে প্রজ্ঞাপূর্ণ একটি ছবির অবয়ব জীবিতের রূপ ধরে তক্ষকের মতো চেয়ে আছে। যাদুবিদ্যায় পাওয়া এসব দৃশ্য আমার আগে থেকে শেখা। এমন বিদ্যা নিয়ে চির-অন্ধকার পথ পাড়ি দিয়ে আমি মানুষের কাছে হাজির হই। অথচ যাদের সামনে থাকি তারাই আমাকে খুঁজতে থাকে। ফলে আত্মপ্রতিকৃতি বদলে ফেলে ঘরের দেয়ালে রঙ হয়ে মিশে থাকি, ঈশ্বরের রূপ ধরে ভান করি, আর পর্বে পর্বে দেহান্তর ঘটাই।

অবাধ্য হরিয়াল মহার্ঘ সময় শূন্যে উড়িয়ে চলে যায়। ছবিয়াল চিত্রকল্পে বাসা বাধে। আমার দরজা খোলা রেখে কবিত্বটুকু পালিয়ে যায়, আবার সময় হলে ছদ্মবেশ বাইরে খুলে চুপি চুপি ঘরে ঢোকে। নিসর্গের দেয়ালে কল্পনা দিয়ে আল্পনা করে আর নিজেকে জড়ো করে নিজের ছায়ায়।

একদিন শূন্য থেকে পড়ে গিয়ে অনুভূতি ভেঙে যায়- বুঝতে পারি, মূলত যাদুবিদ্যার এই ঘরে আমাদের প্রবেশ আছে কিন্তু অধিকার নেই।

পথের দোষ

পথের কোন দোষ নেই। সে যে কোন পথ দিয়েই আসতে পারে। প্রতিদিন নিসর্গের দরজায় বসে তাকে স্বাগত জানাতে হয়, আলোকরশ্মিগুলোকে সাময়িক বিদায় দিতে হয় বাধ্যতামূলক। ফিরতিপথে চারিদিকে যে কালো পাহাড় দেখা যায় সেখান থেকেই মূলত জন্ম নেয় এক একটি রঙধনুবিকেল, নতুন রঙের পথ। 

মহাসাগরের বুকে তুলো ওড়াতে ওড়াতে অকষ্মাৎ উৎসাহী  হয়ে ওঠে আমার প্রতিটি আঙুল। মন ভাসে তুমুল উত্তেজনায়। শব্দ নিয়ে পাশা খেলি নিসর্গে। কেবল উড়তে পারি না মানুষ হবার মোহনীয় অপরাধে।

আমাকে মাধ্যাকর্ষনের নিয়তি টেনে রাখে। আকিবুকি শিখে দেহকোষ আঁকি মাটির পৃষ্ঠায়, গুহামানব সেজে উপলব্ধি করি জীবনের মর্মার্থ। যতদিন পারি নির্বাণের আশায় নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি। ছন্দ বয়ে বেড়াই সীমিত পরিসরে। এগিয়ে যেতে যেতে সেই পথ ধরে কবিতাই হয়ে ওঠে আমার ব্যক্তিগত প্রাণ। এদিকে খসে পড়া কবিতায় সুর করে কে যেন গাইতে থাকে পথে পাওয়া গান।

মন্তব্য: