আলী এহসান
ভালোবাসার মিউ মিউ; মতলবে কূটচাল; বিছানা বন্দনা
জবরদস্তির গর্ভধারণ; উপায়হীন গর্ভপাত
কিচেনে আত্মসমর্পণ এর চেয়ে খানিকটা নিরাপদ
রুটিনের ঘর সামলানো, ছা-পোনার নজরদারি
লাটাই টানটান-ভাগ্য সুতো ঝুলে-ঝোলায় অবিরাম
পিছু তাড়া দুষ্ট ছায়ার; সময়ের ইচ্ছে পূরণ
ফাইল সই করাতে বসের সামনে ঝুঁকতেই হয়
বেয়াড়া চোখ, বেলেল্লা হাসি, যৌবনে নাক ঘষে
বুড়ো খচ্চর
দাঁতালো শুয়োর….
সূচনার ডায়েরি হাতে স্তব্ধ রাহাত। মেয়েটি নিখোঁজ আজ তিন দিন। বাসা থেকে অফিসে বেরিয়ে বিকেলে ফেরেনি। আত্মীয় স্বজন, পরিচিত আবাস, ক্লিনিক-হাসপাতাল, থানা-ফাঁড়ি কিছুই বাদ রাখেনি। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেছে। কোনো হদিস নেই। সহকর্মীরা জানিয়েছে প্রতিদিনের মতো সেদিনও সে অফিস করেছে। ছুটির পর বাসায় ফেরার কথা। কিন্তু ফেরেনি। গেলো কোথায়?
সূচনার অন্তর্ধান রাহাতের অস্তিত্বের শেকড় নড়বড়ে করে দেয়। বিপদে পড়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু কোন ধরণের? অপহৃত হলে মুক্তিপণের দাবী আসার কথা। এ পর্যন্ত আসেনি। যদি ওর শরীরটাই টার্গেট হয়…
মনে আশঙ্কার হামাগুড়ি। দুঃস্বপ্নের আনাগোনা। রাহাত থমকে যায়। পরিণতি ভাবতে সাহস পায় না। ভয়ে শিউরে ওঠে। আতঙ্কে কুঁকড়ে যায়। বুক চিঁরে বেরোয় অসহায় দীর্ঘশ্বাস। টেবিলে ভাঁজ করা হাতে মাথা রেখে চোখ বোঁজে। গা এলিয়ে দেয়। তিন দিনের ছুটোছুটিতে শরীর ক্লান্ত, অবসন্ন, বিশ্রাম কাতর।
ছুটির পর মার্কেটে ঘোরা। জরুরি কেনাকাটা। তারপর স্টপেজে বাসের অপেক্ষা। নিয়মিত স্টপেজ নয়। হাত উঁচালে বাস থামায়। যাত্রী তোলে। নামতে চাইলে নামিয়ে দেয়।
একটা চকচকে মাইক্রো। চমকে দিয়ে হঠাৎ সামনে ব্রেক কষে। একেবারে পাশঘেঁষে। বিরক্ত চোখ ড্রাইভার খোঁজে। ওদিক নিঃশব্দে খুলে যায় সাইড ডোর। ভেতর থেকে কেউ একজন পরিচিত ঢংয়ে সম্বোধন করে ‘আরে আপনি! আপনি এখানে?’ সূচনা অবাক। বিস্ময়ের প্রথম ধাক্কা হজম না হতেই পিলে চমকে দেয় উদার আহবান, ‘বাস পেতে ঝক্কি হবে। আসুন পৌঁছে দিই।’ কণ্ঠধারীর পরিচয় নিশ্চিত হতে সে কৌতুহলে ঘাড় ফেরায়। দরজার দিকে সামান্য ঝোঁকে।
চলো উঠে পড়ি। পেছন থেকে মৃদু ধাক্কা। মাইক্রোর বাড়ানো হাত তাকে ত্বরিৎ ভেতরে টেনে নেয়। পেছনের আগন্তুক ওকে মাঝের দিকে ঠেলে দিয়ে দ্রুত পাশে বসে। দরজা টেনে দেয়। মাইক্রো চলতে শুরু করে। একটা রুমাল চেপে বসে ওর নাকে। ক্লোরোফর্ম গন্ধ ছড়ায়।
মিনিট পেরোয়নি। এরমধ্যে ঘটে যায় অবিশ্বাস্য ঘটনা। প্রকাশ্যে দিনের আলোয়। কেউ কিছু আঁচ করার আগেই।
প্রতিদিনের সংবাদপত্র। খুন-ধর্ষণ, ছিনতাই-রাহাজানি, অপহরণ, গুম, দুর্ধর্ষ ডাকাতি, গণধর্ষণ। অগ্নিসংযোগ, ভিটে মাটি থেকে উৎখাত প্রক্রিয়া। পুড়িয়ে গণহত্যা….
পাক সার জমিন সাদ বাদ-ভয়ঙ্কর মৃত্যু সান্নিধ্যে হুমায়ুন আজাদ। রক্তাক্ত বাংলা একাডেমী, একুশে বইমেলা, ভার্সিটি ক্যাম্পাস, উত্তপ্ত রাজপথ। ধৈর্যচ্যুত রাখাল বালক-খেলো ডেড লাইন
হাওয়া ভবন। ক্রিকেট তামাশা
গণগ্রেপ্তার-পুলিশী রিমান্ড
ইরাকে ইঙ্গঁ-মার্কিনী বন্দি নির্যাতন
রাজশাহী Ñ বাংলাভাই। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি গ্রামে উড়বে জিহাদি ঝান্ডা।
ইন্টারোগেট। বৈদ্যুতিক শক। পায়ু থেরাপি …. মহড়া ১৬৪ ধারার…. উপরের নির্দেশ …. স্বীকারোক্তি …. তৈরী স্ক্রিপ্ট ….
ষড়যন্ত্র! বল তোদের গোলা বারুদ কোথায়? অস্ত্র আমদানির হোতা কে? কোন নেতা?
আমি কিচ্ছু জানিনা। কাউকে চিনিনা। অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম; পথে পুলিশ…
বাঃ ব্বাহ্! মাগী লং চেনে ভাতার চেনেনা। পুলিশ বোঝে গডফাদারে ভিমড়ি খায়!
কথায় কাইত করতে চাও কাকে তুমি? এই মাল বনেদি খেলোয়াড়; নিরামিষে কাজ হবে না।
জেহাদ?
ইয়েস স্যার!
জবানবন্দির কদ্দূর?
কিছুতেই মুখ খুলছেনা স্যার।
ইলা মিত্রের ডোজ এ্যাপ্লাই করো।
জ্বী স্যার?
মাগীর আসল জায়গায় গরম ডিম ঢুকিয়ে দাও। দেখবে মুখে খই ফুটছে…
তারপর?
না..।…।…।…
বুকফাটা আর্তচিৎকার। রাহাত আচমকা জেগে ওঠে। তার পুরো শরীর ঘামে ভেজা। চোখে আতঙ্কের ছাপ। দুঃস্বপ্নের হাজারো মিছিল চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে। শৃঙ্খলিত সূচনা অন্তরীণ শত্র“র অদৃশ্য
আস্তানায়।
রাহাত উঠে দাঁড়ায়। ওর মুঠো প্রতিজ্ঞায় দৃঢ়। সূচনাকে উদ্ধার করতেই হবে। প্রয়োজনে চষে ফেলবে মানচিত্রের প্রতি ইঞ্চি ভূমি।