হাসিয়ারা হাসি ও শিপ্রা দাস মাগুরার গানের ভুবনে এক বৃন্তে দু’টি ফুল

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আশি ও নববই দশকে মাগুরার গানের ভুবনে সাড়া জাগানো দুই শিল্পী হাসিয়ারা হাসি ও শিপ্রা দাস। খ্যাতিমান এই দুই শিল্পীকে নিয়ে সপ্তক পরিবারের একাংশ মেতে উঠছিলাম কফিহাউজের আডডায়। সপ্তক সম্পাদক শিকদার ওয়ালিউজ্জামান সঞ্চালিত সেই আড্ডার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো সপ্তক সাহিত্য চক্র কর্তৃক প্রকাশিত জলসিঁড়ির পাতায়-

জলসিঁড়িঃ হাসি আপা ও শিপ্রাদি আপনাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরুন।

হাসিঃ আমার বাবার বাড়ি মহম্মদপুর জোকা গ্রাম। কর্মস্থান মাগুরা পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগে। মহম্মদপুরের মেয়ে হলেও আমার জন্ম মাগুরায়, স্কুল ও কলেজ মাগুরায়, চাকরী মাগুরায় এমনকি বিয়েটাও মাগুরাতে। পারিবারিক জীবনে আমার একমাত্র ছেলে-

শিপ্রাঃ আমার পৈত্রিক ভিটা মাগুরা সদরের মঘী গ্রামে। বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। আমার জন্মও মাগুরাতে লেখাপড়া মাগুরায়। কর্মস্থান ভাবনহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। শিক্ষক হিসাবে আছি।

জলসিঁড়িঃ আপনাদের শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?

হাসিঃ আমার সংগীতের গুরু যার কাছে শিক্ষার মাধ্যম এ পর্যন্ত উঠে আসা, তিনি হলেন বাবু চণ্ডি প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

শিপ্রাঃ আমারও একই শিক্ষাগুরু। সে হিসাবে আমরা এক বৃন্তের দু”টি ফুল ।

জলসিঁড়িঃ শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে পরিবারের কার কাছ থেকে বেশি সমর্থন পেয়েছেন?

হাসিঃ আমার শিল্পী হয়ে ওঠার পেছনে আমি পরিবারের কারো সমর্থন পাইনি।

শিপ্রাঃ আমি প্রথম পর্যায়ে বাবা-মায়ের সমর্থনেই সংগীতে ভর্তি হই। পরবর্তীতে আমার শিক্ষাগুরুর কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি।

হাসিঃ আসলে অনুকরণটি শুনে ও দেখেই আসে। আমি কাউকে অনুকরণ করি না। আমি যখন স্টেজে রুনার গান গাইবো তখন ঠিক তার মতো করেই গাওয়ার চেষ্টা থাকবে, আবার যখন সাবিনার গান গাইবো তখন ঠিক সাবিনার মতোই গাইবো। কোন শিল্পীই বলতে পারবে না, আমি কাউকে অনুসরণ করি না। মূলত আমি ফোক শিল্পী ছিলাম না। যখন আমি নিনা হামিদ এর গান শুনি, তার গানে আকৃষ্ট হয়ে তার মতো শিল্পী হওয়ার ইচ্ছা জেগে উঠে মনে। আমি নিনা হামিদকেই অনুকরণ করি।

শিপ্রাঃ গুরু চেঞ্জের কথা এসেছে। আমি প্রজন্মকে একটা কথা বলবো গুরু চেঞ্জ করলে সেম জিনিষ পাওয়া যায় না। গুরু চেঞ্জ করলে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। সেইজন্য গুরু পরিবর্তন না করাই ভালো। আমি আমার শিক্ষাগুরু চণ্ডি প্রসাদকেই অনুসরণ করি। পরবর্তীতে আমি ভোলানাথ চক্রবর্তীর কাছে দীক্ষা নিয়েছি ক্লাসিক এর উপর। অনুকরণ বিষয়ে বলবো যখন যার গান গাইবো, তখন তার মতো করেই গাইবো।

জলসিঁড়িঃ মঞ্চের গান বিষয়ে বলুন-

শিপ্রাঃ মঞ্চে আমি সব সময় দর্শকের চেয়ে আমার পছন্দকেই প্রাধান্য দিয়েছি। শিল্পী হতে গেলে প্রধান যে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে গাওয়া গানগুলো যেন দীর্ঘস্থায়ী হয়। এখনকার প্রজন্মের গানগুলো শ্রোতের মতো আসে শ্রোতের মতো চলে যায়। শিল্পীর সার্থকতা তখনই যখন একটা গান শুনে শ্রোতা গুনগুন করে গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরবে। যে সুর তাকে স্পর্শ করবে।

হাসি ওস্তাদ পরিবর্তন বিষয়ে বলবো, ওস্তাদ পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়ে না যদি সেই ওস্তাদের কাছ থেকে সংগীতের সব রসদই পাওয়া যায়। কিন্তু যদি গুরু পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে, অর্থাৎ প্রয়োজনের তাগিদেই গুরু পরিবর্তনের প্রশ্ন আসে। রিংকু ভাই, মনে করেন আমি যদি কোন ছাত্রকে গান শেখাই, সেই ছাত্রকে বড়জোর কিছু সারগাম শেখাতে পারবো। তার বেশি কিছু নয়। সেই ক্ষেত্রে ছাত্র যদি প্রয়োজনে আমাকে পরিবর্তন করে, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আর আমি সব সময় সেটজকেই প্রাধান্য দিয়ে গান গেয়ে এসেছি। কারণ গীত শেষে বীণা পড়ে থাকে ধুলি মাঝে। স্টেজ দর্শক ও শ্রোতাদের জন্য। শিল্পীর সার্থকতা স্টেজে। আর আমি গান গাওয়ার সময় মনে করি এই গানটাই আমার শেষ গান হতে পারে। আর গান নাও গাইতে পারি। স্টেজে শিল্পী ও দর্শক-শ্রোতার সম্পর্ক দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক। তুমি যদি তাদেরকে দাও তারাও তোমাকে ভালো প্রতিদান দেবে।

শিপ্রাঃ আমার ভিন্নমত আছে। দর্শক যদি এমন গান চযেজ করে যেটা অশ্লীল, অশোভন, সেই গান আমার গাওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি না। গানকে আমি যেভাবে উপস্থাপন করবো শ্রোতা ঠিক সেভাবেই নেবে। আর গানটাকে যেন আমি এমনভাবে উপস্থাপন করতে পারি যেন শ্রোতা সেই গান মনে রাখতে পারে। এই গানে মানুষ হয়তো তাৎক্ষণিক বাহবা দিবে না তবে গান তারা অবশ্যই মনে রাখবে। দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য গান গাওয় সম্ভব নয়। আমার মাকে একটা চশমা কিনে দে, এই গান গাওয়াতো আমার পক্ষে সন্তব নয়।

জলসিঁড়িঃ মাগুরাবাসি আপনাদেরকে হাসি-শিপ্রা জুটি হিসাবে দেখেছে। আপনারা নিজেদের মধ্যে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুভব করেছেন কি-না?

শিপ্রাঃ আসলে স্টেজ একটা মারাত্বক জায়গা। এখানে যে উঠবে সেই ভালো করতে চাইবে। আমি হাসিকে কখনো প্রতিদ্বদ্ধি মনে করিনি। তবে হাসি স্টেজে গান গেযে যতোটা বাহবা কুড়িয়েছে আমি চেষ্টা করেছি ততোটাই বাহবা পেতে। আর যতদিন গাইবো সেটাই করবো।

হাসিঃ আমার আর শিপ্রার বন্ধন এমন যে, যদি একজনের গান একটু কেমন হলো অথবা আমার কানে লাগলো তখনই চিন্তা করেছি শিপ্রা কেন এমন করলো। আমরা একজন আরেকজনের সহযোগিতা করেছি সবসময়। আমরা কম্প্রামাইজ করে ভাগাভাগি করে স্টেজে গান গেয়েছি। আমাদের মধ্যে কখনোই হিংসা বা ঈর্ষার মানসিকতা তৈরি হয়নি।

জলসিঁড়িঃ শিপ্রাদি, আপনিতো গানের শিক্ষকতাও করেছেন। আপনার হাতে তৈরি প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের নাম বলুন-

শিপ্রাঃ আমার প্রতিষ্ঠিত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আপনিও (ওয়ালিউজ্জামান রিংকু) একজন। আপনি একটা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত। আমি এই লাইনে থাকলে আমার আরো অনেক ছাত্র-ছাত্রী হতো। ১৯৯৮ সালে একটি দুর্ঘটনা সংগীত জগত থেকে আমাকে অনেকটা দুরে সরিয়ে দিয়েছে। আমার ছাত্রদের মধ্যে তারকনাথ চট্টগ্রাম বেতার শিল্পী। পলাশ ঢাকায় ব্যান্ড গান করছে। এছাড়াও মাগুরায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে যারা এখনও গান করছে।

হাসিঃ আগেই বলেছি আমার পরিবার থেকে শিল্পী হওয়ার পেছেন কোন রকম সাহায্য করেনি। আমার গুরুর পরে আমি সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি শিপ্রার কাছ থেকে। আমার বিপদে-আপদে শিপ্রা সবসময় আমার পাশে ছায়া হয়ে থেকেছে।

জলসিঁড়ি: বিকাশদা, মাগুরার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আপনার ভূমিকা অনেক। আপনাকে এই দুই শিল্পী মেসো হিসাবে জানে। তাদের দুজনের মূল্যায়ন করুন-

বিকাশ মজুমদারঃ মাগুরার সংগীত অঙ্গনে একডাকেই সবাই হাসি-শিপ্রাকে চেনে। আর অনেক ছোটবেলা থেকেই গান গেয়ে আসছে। শিল্পকলা থেকে তাদের গানের হাতেখডি। অনেকের অবদান থাকলেও তাদের ব্যক্তি ইচ্ছাটাকেই আমি বড় করে দেখি। কারণ তারা যদি এ অঙ্গনে টিকে না থাকতো তাহেল তারা এ পর্যায়ে পৌছাতে পারতো না। তদের প্রচেষ্টা, একাগ্রতা, সাধনা ও নিষ্ঠাই তাদেরকে এ পর্যায়ে পৌছে দিয়েছে বলে আমি মনে করি।

জলসিঁড়িঃ আশীষদা, আপনিতো নকাইয়ের দশক থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিচরণ করছেন। চিত্রশিল্পী হিসাবে মাওরায় আপনার খ্যাতি অনেক। মাওরার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নকাই দশক ও বর্তমান সময়ের মূল্যায়ন করুন।

আশীষ রায়ঃ দিদিদের সূত্র ধরে বলি, নকই এর দশকে মাগুরায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটা ঝড় উঠেছিল। সেখান থেকে শুরু হয়েছিল পিঠামেলা। তখন শিল্পীদের মধ্যে ছিল শৈল্পিক যুদ্ধ। এখন যেমনটা দেখা যায় দৈহিক যুদ্ধ। এটা সে সময় ছিল না। দিদিদের সংগে আমরা ছিলাম অনেকটা পারিবারিকসুলভ। অনেক স্মৃতিবিজড়িত। এখন তারা থাকতেও সবকিছু যেন স্মৃতি হয়ে গেছে। তাদের সাথে ঐ সময় থাকতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আর মাগুরার বর্তমান কালচারটা ভ্যালচারে পরিনত হয়েছে। সেই পুরনো ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে আর একটা প্রজন্ম তৈরি হয়েছে। আপনারা (সপ্তক পরিবার), যার সাথে আমিও আছি। বিকাশদাকে আমি অনেক শ্রদ্ধা করি। তাঁর নেতৃত্বেই সপ্তক অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।

শিপ্রাঃ আমাদেরকে এ পর্যায়ে আসতে আমাদেরকে অনেক ঝড়-ঝাপটা সহ্য করতে হয়েছে। আমি আর হাসি দিনে-রাতে একসাথে বেড়িয়েছি। আমরা দুজনসহ হীরক ভাই, বিবেক মেসো, বিকাশ মেসো মিলে প্রত্যয় সাংস্কৃতিক সংসদ গড়ে তুলেছি। রাত-বিরাতে চলার কারণে মানুষ আমাদেরকে অনেক সময় ভালোভাবে নেয়নি। আমরা রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত প্রত্যয়ে গান করতাম। অনেকে অনেক রকম কথা বলতো। কিন্তু তাই বলে আমাদের পথ চলা থেমে থাকেনি। আমরা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেছি।

জলসিঁড়িঃ কতসালে আপনারা দু’জন খুলনা বেতারের শিল্পী হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছিলেন?

হাসিঃ আমি ফোক গানের শিল্পী হিসাবে ১৯৮৫ সালে খুলনা বেতারে অডিশনের মাধ্যমে নিয়মিত শিল্পী হিসাবে তালিকাভুক্ত হই।

শিপ্রাঃ আমি আধুনিক গানের শিল্পী হিসাবে খুলনা বেতারে ১৯৯০ সাল থেকে গান গাইতে শুরু করি।

জলসিঁড়িঃ জামান ভাই, আপনিতো অনেক বছর যাবৎ মাগুরার শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে দেখছেন। আপনার অভিজ্ঞতাও অনেক। সেই আলোকে কিছু বলুন-

মনির উজ জামানঃ শিপ্রাদি যেটা বললেন, আমরা যখন শুরু করেছি তখন একটা সমন্বয়ের বিষয় ছিল। এখনতো শিল্পীদের সাথে শিল্পীদের দ্বন্দ্ব। আমাদের ঐ সময় শিল্পী, কবি-সাহিত্যিক ও যারা নাটক করতো তারা সবাই একসাথে কাজ করতে। সাংবাদিক হিসাবে আমার এ অঙ্গনে প্রবেশ। নব্বই এ আমি উদীচীতে ভর্তি হই। শিপ্রাদির কাছে কিছু সারগামও শিখেছিলাম। সেটা অবশ্য কন্টিনিউ করিনি। এই অঙ্গনে আমার প্রবেশ করার আগেই হাসি আপার গান শুনে এসেছি। হাসি আপার এই অঙ্গনের প্রতি এত আন্তরিকতা ছিল যে, সে ৬/৭ মাসের অন্তঃসত্তা অবস্থায়ও আমাদের সাথে আড্ডা দিতেন। আমি নিজে হাসি আপাকে রাতে বাড়ি পৌছে দিয়ে এসেছি। গানের প্রতি আন্তরিকতার কারণেই শিপ্রাদির দুর্ঘটনা সত্ত্বেও এই অঙ্গনকে ছেড়ে যায়নি এবং থাকবে। এখন শুধু দেখি শিল্পীদের সাথে শিল্পীদের দ্বন্দ্ব, কবিদের সাথে কবিদের দ্বন্দ্ব, সাংবাদিকের সাথে সাংবাদিকের দ্বন্দ্ব। আমরা ক্রমশঃ একা হয়ে যাচ্ছি। আমি মনে করি এই জিনিসগুলো কাটিয়ে ওঠা দরকার। আবার সাহিত্যিক, সাংবাদিকদের একসাথে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সপ্তক পরিবার বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

জলসিঁড়িঃ তুষার দা, আমাদের সপ্তকের মাধ্যমে শিল্পী, সাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিকদের এক প্লাটফরমে মিলিত করার যে প্রয়াস, এই বিষয়ে আপনি কতোটা আশাবাদি?

তুষার প্রসুনঃ আমি এই বিষয়ে খুব আশাবাদি এই জন্য যে, সবার কথার মাঝে উঠে এসেছে, এক সময় পরিবেশ খুব ভালো ছিল। এখন নেই। কিন্তু আমি মনে করি, সেই মানুষগুলোতো এখনও আমাদের মাঝে আছেন। সেই কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক আবার প্রচেষ্টা নিয়ে আগেকার সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এটাই আমার দৃঢ় আশাবাদ।

জলসিঁড়িঃ সাব্বির তুমিতো প্রজন্মের কবি হিসাবে বেশ আলেচিত। এই যে আমাদের অবক্ষয়, এই অবক্ষয় রোধে কি করণীয় বলে তুমি মনে করো?

হাসান সাকিরঃ আমরা অবক্ষয়টাকে দেখবো না। পুর্বে ভালো অবস্থা ছিল, এখন অবক্ষয়। এটাকে ভুলে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এই অবক্ষয় রোধে কিছু যে করতে হবে সেটা আমাদের উপর কেউ চাপিয়ে দেয়নি, এই দাযিত্ব আমরা কাধে তুলে নিয়েছি। সুস্থ মন-মানসিকতা ও প্রগতিশীল মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এলে এই অবক্ষয় দূর হবে বলে আমি মনে করি।

জলসিঁড়িঃ আচ্ছা শিপ্রাদি, আপনাদের সময়ে আপনারা কি কি ধরণের প্রোগ্রাম করতেন? সপ্তকের কাছেই বা আপনাদের প্রত্যাশা কতটুকু?

শিপ্রাঃ আমার গুরু অনেক জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। তার মাধ্যমে বসন্তবরণসহ রবীন্দ্র-নজরুল জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী পালন, একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে বিভিন্ন প্রোগ্রাম হাতে নিতেন। এবং সব প্রোগ্রামেই আমি ও হাসি গান গেয়েছি। আমি সপ্তকের কাছে একটা প্রত্যাশাই করবো, আমাদের যে দিনগুলি হারিয়ে গেছে সেগুলোতো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়, তবে আমাদের হারানো সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সপ্তকের মাধ্যমেই আমাদের সেই স্বর্ণযুগ ফিরে পেতে চাই। আর এই যে শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের একত্রিকরণে সপ্তকের সফলতা কামনা করি।

জলাসিঁড়িঃ হাসি আপা, আপনি কতসালে বিটিভির ফোক শিল্পী হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হন?

হাসিঃ ১৯৯৯ সালে।

জলসিঁড়িঃ আপনারা হাসি-শিপ্রা জুটি অনুজদেরকে অনেক স্নেহ করেন, ভালোবাসেন। হাসিমুখে তাদেরকে যে উৎসাহ দেন তা কমই দেখা যায় এখনকার সময়ে।

হাসিঃ নতুন প্রজন্ম তথা অনুজদের প্রতি এই ভালােবাসা সারাজীবন থাকবে।

জলসিঁড়িঃ জামান ভাই, এই দুই শিল্পীর সাথে সপ্তক এর যে সম্প্রীতি তা আরো কিভাবে দৃঢ় হতে পারে?

মানির উজ জামানঃ কাজের মাধ্যমে যে সমন্বয় সেটা হারিয়ে গেছে। সেটা সপ্তক এর মাধ্যমে আরো দৃঢ় হতে পারে। আবার জমবে মেলা, বটতলা হাটখোলা…. ঠিক সে বিষয়টা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে কারো ভুল-ক্রুটি থাকতে পারে। সেটা বড় করে না দেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আজকে হাসি আপা ও শিপ্রাদির যেভাবে সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে আরো যারা সিনিয়র শিল্পী, কবি, সাংবাদিক ও সাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার নিয়ে মাগুরাবাসীর কাছে তাদেরকে তুলে ধরতে হবে।

শিপ্রাঃ আমরা প্রেসক্লাবের মাঠে একসময় পার্টি বিছিয়ে হারমোনিয়াম ডুগি-তবলা বাজিয়ে গান করতাম। আমাদের মাঝে সমির ভাই, সগির ভাই আসতো। সমির ভাই এখন দেশের প্রখ্যাত বাউল শিল্পী। আর এর পেছনে প্রত্যয় সাংস্কৃতিক সংসদের অবদান রয়েছে।

জলরসিঁড়িঃ আপনারা ছাড়া মাগুরার আরাে বরেণ্য কিছু শিল্পীর নাম বলুন যাদেরকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা যায়-

শিপ্রাঃ আমাদের বিউটি ফেন্সি খালেদা আপা খুব ভালো নজরুল সংগীত গেয়ে থাকেন। উনি এখন মাগুরার শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষিকা। আমার গুরুর স্ত্রী সবিতা কাকীমা খুব ভালো গান করেন। রেজয়ান আলী লাভলু (ক্লাসিক শিল্পী) ভারত থেকে ক্লাসিক গানের উপর ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। আমাদের জাফর কাকা, নজরুল ইসলাম টগর কাকা এবং সাইফুল ইসলাম হীরক ভাই অনেক উচু মানের শিল্পী। হীরক ভাই একজন ভালো গীতিকার। তার গান আমি বেতারেও গেয়েছি।

জলসিঁড়িঃ মাগুরার শিল্পীদের সংগঠনগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে যদি কিছু বলেন-

শিপ্রাঃ প্রত্যয় সাংস্কৃতিক সংসদ, উদীচী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ, সংগীত একাডেমী-এইসব সংগঠনগুলোর মধ্যে ভেতরে ভেতরে অনেক প্রতিযোগিতা হতো।

জলসিঁড়িঃ এখনকার সংগঠনগুলোকে আপনারা কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

হাসিঃ এখন টিমওয়ার্কের অনেক ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া সংগঠনগুলা অনেকটা বানিজ্যিক হয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গানের টিউশনি করার প্রবণতাও বেড়ে গেছে শিক্ষকদের মধ্যে।

শিপ্রাঃ আসলে আমাদের জীবনটাই বানিজ্যিক হয়ে যাচ্ছে। যেমন এখনকার রাজনীতি মানেই টাকা, শিল্পীরাও তদ্রুপ হয়ে গেছে। স্টেজে গান গান গাইলেই টাকা…… তাছাড়া গার্ডিয়ানরাও অনেকটা কমার্শিয়াল হয়ে গেছে। তারা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে ব্যাসিক না শিখিয়েই স্টেজে গানগাওয়াতে পারলেই খুশি। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্বরলিপির দিকে নজর দিতে হবে। এক নম্বর স্বরলিপি প্রতিদিন চর্চা করতে হবে। তাদের নিয়মিত গলা সাধতে হবে, রেওয়াজ করতে হবে এবং বর্তমানে যারা গান শেখাচ্ছেন তারা অনেক বিজ্ঞ, ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সংগীত শেখানোর সময় এই বিষয়টির প্রতি নজর দিতে হবে। সংগঠনগুলোকে বলবো, টিমওয়ার্ক মজবুত করতে হবে। আমাদের সময় আমরা একজন গান গেয়ে ঢাকা পেলে সেটা টোটাল টিমের মাঝে ভাগ করে নিতাম।

জলসিঁড়ি:হাসি আপা ও শিপ্রাদি সপ্তক এর এই আড্ডায় আপনাদেরকে পেয়ে আমরা বেশ আনন্দিত। আমাদের মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাদের দ’জনকেই ধন্যবাদ।

হাসি ও শিপ্রাঃ সপ্তক পরিবারকেও ধন্যবাদ। আপনাদের সু-প্রচেষ্টাগুলো সার্থক হোক।

মন্তব্য: