রূপালী চাঁদের আলোয় আদিবাসী মেয়ে

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

একুশে বই মেলা, সিলেট, তামাবিল, জাফলং তারপরেই ভারত। যেন স্বপ্নে বোনা আ’ল পথ। আমার সাথে মংথিন যাকে বলে বাউন্ডুলে দ্য গ্রেট। এমন কাউকে সঙ্গে পেলে নিজের বাউন্ডুলেপনা যে বাড় বাড়ন্ত হবে সেটা বলাই বাহুল্য। তামাবিল হয়ে জাফলং যাবার পথে ওর সাথে পরিচয় হয়ে বন্ধুত্বের মতো কিছু একটা। তারপর দু’জনে মিলে ভারতে যাবার ফঁন্দি। সারাদিন নির্বিবাদেই পথ চলতে পেরেছিলাম বলতে গেলে, সন্ধ্যার মুখে এসে রে-রে করে কিছু জংলি টাইপের লোক আমাদের ঘিরে ফেললো। ঘিরেই ওদের ভাষায় কি সব বলতে লাগলো, বেশ উগ্র মেজাজ মনে হচ্ছে ওদের। আমি শুধু বাংলা ভাষা বুঝি। ইংরেজী বুঝলেও খুব একটা লাভ হতো না, এদের কাছে। ওরা জানে একটাই ভাষা। সেটা হচ্ছে কিচির মিচির ধরনের কোন ভাষা। মংথিন ওদের সাথে সে ভাষাতেই কথা বলে যাচ্ছে, কি সব। একটা খালের মত কিছু একটা পেরোতেই আমার আর মংথিনের পুরো শরীর ভেঁজা হয়ে গেল। মৃদু মন্দ বাতাস  বইছে তাই ঘামের কোনই সম্ভাবনা নেই। তবে ভেজা কাপড় হিসি করে ভেজানোর সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে এই পাহাড়ীদের খপ্পরে পড়ে। এই শয়তান জংলীর দল আমাদের দু’জনের কাঁচা খাবে না কাবাব বানিয়ে খাবে এখন সেই ভয়। ভালো আছি না মন্দ জানার উপায় নাই। আমাদের  দু’জনার মাঝে ষন্ডা মার্কা দু’জন হাঁটছে বেশ হেলে দুলেই। ভারতে যাবার বুদ্ধি (কু-বুদ্ধি বলাই শ্রেয় এখন)আমার অনেক আগে থেকেই। কলেজ লাইফে প্রচুর ভারতীয় লেখকদের বই পড়তাম। আমি আর অশোক। শংকর, বিমল মিত্র, নিমাই ভট্টাচার্য, সমরেশ, সুনীল, শির্ষেন্দু এমনই অনেকের লেখা। তখন আমার আর অশোক মন্ডলের ভাবনাটা ছিল এমন কলকাতা বইমেলায় গিয়ে এসব লেখকদের সঙ্গে পরিচয় হবো । যাওয়া হয়নি। পরে একবার আমি দীপু এবং সাগর জামান ঠিক করলাম ভিসা করে ওপারে যাবো। আমার ভিসা হলো না। দীপু আমার দিক বিবেচনায় নিয়ে বললো, জামান ভাই চলেন বাগান পোর্টে যাই। বাগান পোর্ট! বাগান পোর্ট আবার কী? দীপু বাগান পোর্ট বিষয়ে ধারণা দিলে; সাগর আর আমার সাহস হলো না। আমরা বললাম সিমান্ত রক্ষীর হাতে ধরা পড়লে? দীপু নির্বিকারে বলে উঠলো বড় জোর গুলি করে দেবে। এখন দেখছি দীপুর সাথে গিয়ে গুলি খাওয়াও ভালো ছিল। অন্তত এই বেটাদের কাঁচা খাবার হতে হতো না। সে তুলনায় গুলি খেয়ে মরা বেশ উন্নত। একটা শহীদ শহীদ ভাব আছে। বিরোধী দলের রাজনীতির সুযোগে হিরো হবার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

শরীরে শক্তি পাচ্ছিনা তবুও জোরে জোরে হাঁটার চেষ্টা করছি। আমার পেছনে পেছনে যে জংলিটা হাঁটছে তার হাতে শড়কি জাতীয় কিছু একটা; আস্তে হাঁটার কারণে এক ঘা বসিয়ে দিতেও পারে। এদের কোন বিশ্বাস নেই। মংথিন একটা জল চৌকিতে বসে আমাকে অন্যটায় বসতে  ইশারা করলে আমি বসলাম না দেখে ও বললো ভয় নেই, ম্যানেজ করে ফেলেছি। মংথিনের অভয়েও আমার ভয় গেলনা । তারপরেও ক্লান্তির কারণে বসতে হলো এক সময়। জংলিদের একজনের বাড়ি এটা। সে বাড়ির ভেতরে। অন্যরা আশে পাশে তাদের বাড়ি চলে গেল। অভক্তি নিয়েই ওদের খাবার খেতে হলো। ঘরতো নয় ভেন্না পাতার ছানি জাতীয় একটা খোপে দু’জনের শোবার ব্যবস্থা হলো। একটা চৌকিতে চাটাই তারপর পাটি জাতীয় কিছু একটা আর দুটো তেল চিটচিটে বালিশ। মংথিনকে দরজার দিকে দিয়েও নির্ঘুমে কাটাতে হলো রাত। মনে হচ্ছিল এই বুঝি এসে কেউ বলবে ওঠ শালারা। তারপরেই পুড়িয়ে কাবাব বানাবে হয়তো। খচমচ শব্দ হতে ভাঙ্গা জানালার দিকে তাকালাম বড় বড় দু‘জোড়া চোখ সরে গেল ভৌতিক ভাবে। অরণ্যচারি মানুষের মতো নিসর্গ নিমগ্নতার ফলাফল যেন হাতে হাতে পেতে যাচ্ছি। গলা বেশ নিচুতে নামিয়ে কারা যেন কথা বলছে ফিসফাস। ভয়ে বালিশটা উল্টো দিকে নিলাম বটে কিন্তু ঘুমের নাগাল পেলাম না। ঘুমের একদম সম্ভাবনা নেই। আমার চোখ ঘুরে ফিরে সেই জানালার দিকেই। জোছনা ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ি এ জনপদে। রাতের আকাশ চাঁদের রূপোলি আলোয় ভারিয়ে দিয়েছে। এখানে এই আদিবাসিদের মাঝে যথেষ্ট নিরাপত্তা হীনতার মধ্যে এখন আমরা দু’জন। অবশ্য দু’জন কিনা সেটা এখন যথেষ্ট সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; মংথিনের আচরণের ফলে। খাবার সময় মংথিন দেখলাম বেশ হাটুগেড়ে খাবার খেল, যেন মামুর বাড়ি বেড়াতে এসেছে আর কি। এখন দেখছি শান্তির ঘুম  ঘুমোচ্ছে সে । যাকে বলে এক যাত্রায় দু’ধরনের ফল। এখানে এই জংলিদের হিতোপদেশ দেবে কে? যে এদের নিয়ে কোন ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠোনা তোমরা। বেশ জোরালো শব্দ তুলে কাছে পিঠে কোন মহিলা প্রস্রাব করছে। তাগরাই কোন মহিলা হবে হয়তো। আমাদেরকে যখন নিয়ে আসছিল তাদের ডেরায়; তখন ঐ দলে বেশ জোয়ান এক মহিলা ছিল।

বয়স পঁচিশও হতে পারে আবার পঁয়ত্রিশও হতে পারে। আদিবাসীদের ট্রেডমার্ক হতে পারে মহিলাটি। কিন্তু তখন অসভ্য চোখ দিয়ে দেখার অবস্থায় আমরা ছিলাম না। এই প্রস্রাবের আড়ালে আমাদের কাউকে কাছে পেতে চাচ্ছে কিনা। নাকি এও একটা ফাঁদ। মংথিনের পাছায় একটা ঝাড়া লাথি দিতে মন চাইলো। হারামজাদা ওঠ, উঠে দেখ পাহাড়ে কেমন জোছনার ঢল নেমেছে। এটা যদি ভালো নাও লাগে তবে যে মহিলাটি হয়তো এখনো কাছে পিঠে আছে সে তোর প্রেমিকা হতে পারে বৈকি। অকারণে আমার একটু হাসি পেল আমি কবিতা পড়ে মুখস্থ করি না। নির্যাস নেই শুধু; সেটাই এখন কাল হয়েছে।  জোছনা নিয়ে কোনোই কবিতা মনে আসছে না। শেষে হুমায়ূন আহমেদের লেখা এস আই টুটুলের গাওয়া গানের শুধু দু‘লাইন মনে আসছে:- 

ও কারিগর দয়ার সাগর ওগো দয়াময়/চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়।

আমি আদিবাসীদের ভাষা বুঝি না। বুঝলে ভালো হতো। এ ঘোরলাগা জোছনায় পার্বতী কন্যার সাথে যদি ইচ্ছা অনিচ্ছায় দেখা হয়েই যায়। কথোপকথনের এক পর্যায় যদি পাখির নীড়ের মত চোখে বলে বসে কী চাও পরদেশী। অটোগ্রাফ; তোমার অটোগ্রাফ চাই। এবার অটোগ্রাফ বোঝাতে, আজন্ম কানাকে দুধ চেনানোর অবস্থায় পড়তে হতো আমাকে। সন্দেহের সাঁকো পেরিয়ে আমরা দু’জন আবার পথে নামলাম পরদিন সকালে। একটা দিন পার করেই বেশ ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে হাঁটছি। পাহাড়ী কন্যাকে সকালে দেখা যায়নি একবারও। রাতে খাবারের সময় সে দু’বার এসেছিল একবার অনেক সময় দাঁড়িয়েও ছিল। মন দিয়ে দেখা হয়নি।  আমার তখন পাহাড়ী খাবার খেতে যেয়ে এখন বমি করি তো তখন বমি করি অবস্থা। লজ্জায় মরি মরি অবস্থা যাকে বলে। আজকে আমাদের ভারতে প্রবেশের সাতদিন। এ কয়দিন আমরা যে গাড়িতেই চড়েছি তার শেষ না দেখে ছাড়িনি। একটু আগে মুড়ির টিন জাতীয় একটা গাড়ি থেকে নেমে সোজা গ্রামের ভেতর দিয়ে এখন মাঠের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি; অনেকটাই অগস্ত যাত্রার মতোই। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার ঝামেলায় পড়েছি আবার উৎরেও গেছি। সে কারণে সাহস অনেক বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ভাষা নিয়ে। ভাষার ব্যাপারে আমি আবার খাঁটি মূর্খ মানুষ। শুধু মাতৃভাষাটাই জানি। 

এ বিবেচনায় মংথিন বেশ এগিয়ে। সে বাংলা, কিচিরমিচির এবং বেশ ইংরেজি মানিয়ে বলতে পারে। এছাড়াও আর একটা ভাষা জানে সে। পঞ্চমদিন যেখানে ছিলাম সেখানে সে ভাষায় কথা বলতে হয়েছে। আমি এক কানা কড়িও বুঝিনি। এসব কারণে মংথিন আমার কাছে হিরো ইমেজে আছে এখন। আ’ল পথ দিয়ে যাচ্ছি মংথিনের পিছে পিছে। মংথিনের পিছেই এখন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। প্রথম রাতে যে ওর প্রতি সন্দেহ এবং ঘৃনা জন্মেছিলো তা এখন আর নেই। তার হাঁটায় বেশ রাজকীয় ভাব আছে। এইভাবের অনুবাদ আমি হেঁটেই পৃথিবী পার হতে পারি এবং কোনো বাঁধাই আমার কাছে বাঁধা না। আমিও হাঁটায় ওস্তাদ মানুষ। সিক্স সেভেনে পড়াকালীন আমি আর আমাদের রাজ্জাক ভাই টানা দুদিন হেঁটে ছিলাম মাঝখানে ছয় ঘন্টা ঘুমে। এর মধ্যে আমরা দু’জন দু’জনকে নতুন নামে ডাকতে শুরু করেছি।  ওকে আমি গাদ্দার বলে ডাকছি; সে আদতে গাদ্দারই বটে। সে আমাকে হাঞ্জু নাম দিয়েছে। আমি বললাম বন্ধু হাঞ্জু মানে কী? সে যা মানে বললো তা এখানে না বলাই আমার জন্য সম্মান জনক। তারপরও আমি এ নামেই উত্তর নিচ্ছি। পাহাড়ী কন্যার বিষয়ে গাদ্দার কে তেমন কিছু বলা হয়নি। 

এমনিতে আমার নাম দিয়েছে হাঞ্জু। আবার নতুন কোন নাম দিতে পারে। সেটা আরও বিচ্ছিরি হবে সন্দেহ নেই তাতে। যে স্টলে বসে চা খাচ্ছি স্টল টা বেশ বড়সড়। মাটির দেয়াল আর শনের ছাউনী। অনেক চেয়ার টেবিল পাতা। আমরা এখানেই ডিনার সেরেছি। ডিনার বলতে একটা করে সিদ্ধ ডিম আর মুড়ি চাঁনাচুর। ্মাঝখানে দু’গøাস আন্দাজ পানি। পানিটা ভেতর বাহির সব ঠান্ডা করে দিয়েছে। আমি গøাস ছাড়া আর কোন কিছুতেই পানি খেতে পারি না। খেতে গেলেই জামা ভিঁজে একাকার। এখানে প্রতি টেবিলে একটি করে ছোট জগ আছে। আমাদের রাজনীতির ডাইরেক্ট অ্যাকশনের মতো এখানে পানি খেতে হয় ডাইরেক্ট জগে। তাতেই আমার এই বিপত্তি। দু’গøাস আন্দাজ পানি খেতে গিয়ে আধ গøাস পানি দিয়ে জামা ভিঁজিয়েছি আচ্ছা মত। ডিমটা আমাকে বেশ অস্বস্তিতে রেখেছে। এমনিতে সাইজে ছোট তাতে আবার আকৃতি কেমন গোল গোল। স্টল থেকে বের হয়ে গাদ্দারকে জিজ্ঞেস করতে হবে এটা কাছিমের ডিম কিনা। এই গাদ্দারটার তো দেখছি কোনো বিকার নেই। কাছিমের ডিম না কি খাচ্ছি; তার কাছে কোনো কিছুতেই কিছুনা টাইপের ভাব। আমি একবার বললাম বন্ধু দেশে ফিরতে হবে না? টাকা পয়সা তো ফুরিয়ে আসছে। তাতে কি আমাদের ভারত দেখা  হয়ে গেল? ভারত দেখতে এসেছি ভালো করে না দেখে ফিরছি না। খরচ পাতি আছে না আমাদের? টাকা পয়সা না থাকলে কুলিগিরি করবো। কুলিগিরি!  হ্যাঁ এখানে বড় বড় রেল ষ্টেশনে কুলিতে ভালো পয়সা হয়। বন্ধু কিন্তু আমি তো এসব পারবো টারবো না। তোমার পারতে হবেও না; তুমি আমার সহকারি। সহকারি মানেতো সহকারি কুলি। এটা আবার কোন পদ হলো। আমাদের এক বন্ধু রোস্তম মল্লিক ছিলো; সে উকিলের মোহরার। সে পরিচয় দিতো সহকারি আইনজীবী হিসেবে। আমরা এতে বেশ হাসাহাসি করতাম। এখন নিজের পদ নিয়ে নিজেই একা একা হাসছি। রোস্তম মল্লিক এগিয়ে চলো। আমি আছি তোমার সাথে জাতীয় শ্লোগান মনে আসছে। এবার দেশে ফিরেই দুটো কোর্সে ভর্তি হতে হবে। একটা হচ্ছে ভাষা শিক্ষা কোর্স অন্যটা পানি খাওয়ার কোর্স। পানি খাওয়ার কোর্স চালু হয়েছে কিনা এটা একটা ভাবনার বিষয়। তবে নিজে নিজে বাসায়ও প্রাকটিস করা যেতে পারে। ভাষার কোর্সটাকে খুবই বিবেচনায় নিতে হবে। ইংরেজি, আদিবাসী, তামিল, অসমীয় তবে সবার আগে শিখতে হবে কিচিরমিচির টাইপের ভাষা। হাজার হলেও পাহাড়ী কন্যার ভাষাতো সেটাই। গাদ্দারের মতিগতি ভালো মনে হচ্ছেনা। সে রাত দুপুরে আমার সাথে তর্কে মেতে উঠলো। তা বাইরে গেলে আমাকে বাঘে খেয়ে ফেলবে নাকি? আহা তোমাকে বাঘ খাবে, না তুমি বাঘকে খাবে সেটা আমিতো দেখছিনা। আমি ঘুম থেকে উঠে দেখলাম তুমি নেই ভাবলাম পেসাবে গেছ। তারপর পাঁচ মিনিট দশ মিনিট করে তুমি ফিরলে সেই ঘন্টা খানেক পরে। এই  এক ঘন্টায় আমি কতো বিপদের কথা মাথায় এনেছি। 

কিসের বিপদ? কার বিপদ? আমার বিপদ হলে তাতে তোমারই বা কি? তুমি নিশ্চিতে ঘুমালেই তো পারো। গত সাড়ে তিন মাস আমরা একসাথে আছি। এখন এসব কি বলছো। তা গত সাড়ে তিন মাসে কি এমন কোন চুক্তি হয়েছে। যে আমরা কেউ কোথায় গেলে আরেকজনকে বলে যেতে হবে। বল? বলনা? এটা তো কোন চুক্তির বিষয় না। আর তা ছাড়া বন্ধুত্ব কোন চুক্তি করে হয়ও না। তাহলে আজকে থেকে বন্ধুত্ব শেষ। দু’জন চুপচাপ শুয়ে আছি। ও কোথায় গিয়েছিল প্রশ্ন করা কোনই মানে হয়না। ওর আচরণে এখন বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার বলে মনে হচ্ছে। আমরা গত তিন মাস ধরে থাকি এই পরিত্যাক্ত মালগাড়ির বগিতে। খাবার খাই এক কুলির ঘরে। এক কুলি সরদার এখন আমাদের মামা হয়। ধান সম্পর্কে পল মেসো জাতীয় না আমাদের বিপদের দিনে মামা হয়ে দেখা দেয় সে। সে আমাদের পাকা ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমাদের এখানে দু’মাস থাকার কথা ছিল। তারপর টাকা পয়সা হলে আবার পথে নামবো। ক্রমান্বয়ে আমরা মানিয়ে নিচ্ছি এখানে। সেই হিসেবে আমার সহকারি কুলির বয়স প্রায় তিন মাস। এতো দিন হয়ে গেল তারপরেও নট নড়ন চড়নের মাহাত্ম আজকে পরিষ্কার। এখানে কুলি ডেরায় এক মেয়ে থাকে সে কোন এক কুলির শালি না বোন হয়। শিক্ষিত মেয়েটি কোন চাকরি বাকরি করে। মাঝে মধ্যে গাদ্দারের সাথে গুজুর গুজুর ফুচুর ফুচুর চলে তার। কিন্তু আমি আলাদা কিছু মনে করার সুযোগ পাইনি। পদ তো আর কম নয় কুলির অ্যাসিস্টেন্ট। সেই ভোর পাঁচটায় উঠে না খেয়েই দৌড়। ষ্টেশন হাঁটা পথ দশ মিনিট। তারপর সাড়ে পাঁচটায় টাইম করে একটা মেল ট্রেন আসে। আমি শুধু     তোতা পাখির মতো বাবু কুলি বাবু কুলি বলি, প্রতিদিন সকালে দুই চারটা কাজ পেয়েও যাই। স্যুটকেস ধরতে গেলেই গাদ্দার এসে হাজির হয়। সে স্যুটকেস মাথায় করে হাঁটছে। মাঝে ব্রিফকেস হাতে বাবু সাব পিছে পিছে খালি হাতে আমি, সহকারী কুলি। এই হচ্ছে আমার চাকরি। কখনো সখনো প্লিজ সাব প্লিজ সাব বলে ব্রিফকেসের দিকে হাত বাড়ালে  ব্রিফকেস হাতে পেয়ে যাই, তাতে সকালের নাস্তার টাকা উঠে আসে। বাকি দু’বেলা যে বাড়িতে খাই সেখানে খরচ বলতে তাদের কাকিমা আর কাকাবাবু বলে ডাকতে হয়। এতেই খুুশি তারা। কাকিমার বিয়ে হয়েছে বিশ বছরের অধিক কিন্তু কোনো সন্তানাদি নেই। আমাদের দু’জনকে পেয়ে তারা খুব খুশি। যেন দু’জন তাদের আলাল আর দুলাল। প্রথমে খাবারের টাকা দেয়ার কথা থাকলেও আমরা সে টাকা দিতে গেলে তারা নেয় নি। কাকিমার নিষেধ সত্তে¡ও  এটা ওটা নিয়ে ফিরতাম একদিন কাকাবাবুর ধমক খেয়ে সেটাও বাতিল। গাদ্দারকে সাফ সাফ জানিয়ে দিলাম পরশু আমি দেশে ফিরছি। একাই? একা কিনা বলতে পারবো না; তবে পরশু আমি ফিরছিই এটা সত্যি। গাদ্দারের কারণে একদিন পরে রওনা দিতে হলো। সে চুপচাপ ভ্যাবদা মুখো হয়ে ট্রেনে বসে আছে। গতকাল আমরা ধুমধারাক্কা মার্কেটিং করলাম। কাকাবাবুর জন্য জামা-প্যান্ট কাকিমার জন্য শাড়ি এবং মামা মামির জন্যও তাই। গাদ্দার আলাদা করে একটা ডায়েরি আর একটা দামি কলম কিনেছে। আমাকে না বললেও এগুলো কাকে দিয়েছে। আমি আন্দাজ করতে পারি। তার জন্যই এখন মন খারাপ। আমাদের নিয়ে ট্রেন দ্রæত গতিতে ছুটে চলেছে অবিরাম। কারো মন খারাপের তোয়াক্কা না করেই। বড় বেশি নিষ্ঠুর গতিতে। কারো যেন ভেতর বাহির ওলট পালট করে দিয়েই। 

মন্তব্য: